Published : 30 Mar 2025, 01:04 AM
কাপড়-চোপড়ের মত এবার ঈদবাজারে তেমন ভিড় নেই প্রসাধনীর দোকানগুলোতেও; শেষ সময়ে এসে বেচাকেনা জমে না ওঠার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
শনিবার মিরপুর ঘুরে দেখা যায়, বিপণিবিতানের পাশাপাশি সড়কের আশপাশেও বসেছে প্রসাধনীর দোকান। আছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাও। তবে কোথাও ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়েনি।
বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বিক্রি প্রায় অর্ধেক। এর কারণ হিসেবে মানুষের অর্থনৈতিক সংকটকে তুলে ধরছেন তারা।
ক্রেতারা বলছেন, প্রসাধনীর দাম আগের মত থাকলেও অনেকের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে প্রসাধনী কেনায় লাগাম টানতে হচ্ছে তাদের।
মিরপুর ১০ নম্বরের ফুটপাতে মেয়ের জন্য মাথার ক্লিপ কিনছিলেন সাহানা হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজের জন্য কিনতে না পারলেও মেয়ের জন্য তো কিনতে হয়ই। সময় তো আর নাই, তাই জামার সাথে মিলাইয়া মেয়ের ক্লিপ কিনে দিলাম। সামর্থ্য থাকলে গলার ও হাতের জিনিসও কিনে দিতাম।”
ফুটপাতের বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, শেষ সময়ে বিক্রি কিছুটা বাড়লেও তা অন্যান্যবারের সমান নয়।
“কানের দুল, মেকআপ, চুরি কিনতেছে। কিন্তু অত বেশি না। যে তিনটা কিনত, সে একটা কিনতেছে। শেষ দিনের আশায় আছি।”
মিরপুর ১১ নম্বরের ফুটপাতে মেহেদি বিক্রি করেন সেলিম । এবার চাহিদা কমে আসার কথা বলছেন তিনিও। তার দোকানে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দামে মেহেদি বিক্রি হচ্ছে।
সেলিম বলেন, “এবার একদম কম চলতেছে। দুই হাজার টাকার বিক্রি করতে পারি নাই সারা দিনে। দাম কয় অনেক কম।
“গত বছর ৫-৬ দিনে ৩০ হাজার টাকার মেহেদি বিক্রি করছি, এবার মনে হয় না ২০ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারুম।”
মিরপুর ১১ নম্বরের মোহাম্মদীয়া মার্কেটের দোকান ‘তাইয়্যেবাতে’ বিক্রি হচ্ছে চুড়ি, লিপস্টিক, লিপগ্লস, লিপলাইনার, ফেস ওয়াশ, শ্যাম্পু, নেইল পলিশ, মেহেদি, চুল বাধার জিনিসসহ নানা প্রসাধনী।
দোকানটির বিক্রেতা তাজুল ইসলাম বলেন, এবার তাদের বিক্রি কমেছে প্রায় অর্ধেক।
“মানুষ কম কিনতেছে। মানুষের হাতে পয়সা নাই; অবস্থা খুব খারাপ। পাঁচ ভাগের তিন ভাগ ক্রেতা আছে, দুই ভাগ নাই। শেষ সময়ে ভিড়ে নড়তে পারি না, এবার দেখেন কোনো ক্রেতা নেই।”
দোকানটিতে প্রসাধনী কিনতে আসেন হুজাইফ জান্নাত।
তিনি বলেন, “জামা-কাপড় কেনা হয়েছে; এখন তাই এখানে এলাম। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কিছু কেনাকাটা করব। দেখি কতটুকু কিনতে পারি, বাজেটে যতটুকু কুলায় ততটুকুই কেনার চেষ্টা করব।”
‘ফারজানা কার্টেনের’ বিক্রেতা হুসাইন বলেন, “বহুত খারাপ অবস্থা। বিক্রি অর্ধেক কমে গেছে। দাম বাড়ে নাই, কিন্তু মানুষ দেখে চলে যায়; কেনার সামর্থ্য নাই।”
ভালো বিক্রি হবে এমন আশায় ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কেউ কেউ ঈদের সময় অন্য পণ্য বাদ দিয়ে শুধু মেহেদি বিক্রি করেন।
মিরপুরের নান্নু মার্কেটের সামনে মেহেদি নিয়ে বসেছেন নাজিফার ঈশান। তিনি কালশীর গ্রিন ঢাকা এডুকেয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নাজিফার বলেন, “বাসায় বসে থেকে কী করব; তাই অবসরে আয়ের জন্য এলাম। কিন্তু তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কাল আরও বাড়বে আশা করি।”
মিরপুরের হোপের গলিতে বিভিন্ন মোড়কের মেহেদি নিয়ে বসেছেন সজিব মিয়া। অন্য সময় তিনি ফল বিক্রি করেন। তার দোকানে ক্রেতাদের দাম করে ঘুরে চলে যেতে দেখা গেল।
সজিব বলেন, “ঈদে মেহেদির চাহিদা থাকে, তাই বিক্রি করতে এলাম। বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে স্টিকার বের হইছে এখন, ওইগুলা কিনে। ক্রেতাও কম এবার।”
নয়ন ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘শৌখিন’ জিনিস কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে চাচ্ছেন না তিনি।
“দাম বাড়ছে এমন না। কিন্তু এটা তো অত প্রয়োজনীয় না, বাচ্চারা শখ করে দেয়। জামাটা কষ্ট করে কিনে ফেলছি। মেহেদির জন্য ঈদ আটকাবে না, জামার জন্য আটকে যেত।”