Published : 31 Jan 2025, 10:29 PM
মাস দেড়েক ‘স্বাভাবিক’ থাকার পর রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় ফের কমতে শুরু করেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল; আছে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগও।
সুখবর নেই চালের বাজারেও; কেজিতে দু-চার টাকা বেড়েছে সপ্তাহের ব্যবধানে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ভোক্তারা স্বস্তিতে আছেন কেবল ‘শীতকালীন’ সবজি নিয়েই।
মহাখালী কাঁচাবাজারের মেসার্স জাকির ট্রেডার্সের চাল বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, “আজ (শুক্রবার) বাজারে ১ নম্বর মিনিকেট চাল ৭৬ টাকা, স্পেশাল মিনিকেট চাল ৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “স্পেশাল আঠাশ চাল (মাঝারি) প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, স্পেশাল নাজিরশাইল ৮৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ টাকা, কাটারি নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে।”
সপ্তাহের ব্যবধানে এসব চালের দাম কেজিপ্রতি গড়ে ২ থেকে ৩টাকা বেড়েছে বলে দাবি এই বিক্রেতার।
কয়েক মাস ধরে চড়ে থাকা চালের বাজারে স্থিতি ফেরাতে গত ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
এছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আসে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সিদ্ধ চাল। ১২ জানুয়ারি আসে ২৬ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন চালের আরেকটি চালান। কিন্তু এসব উদ্যোগ চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারেনি।
গেল মঙ্গলবার ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু তার প্রভাব বাজারে পড়েনি।
এর মধ্যে রমজান মাস সামনে রেখে নিম্ন আয়ের মানুষের কথা ভেবে সারা দেশে ‘বিশেষ ওএমএসের' (খোলা বাজারে) মাধ্যমে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মহাখালী কাঁচা বাজারে আসা বেসরকারি চাকুরে আহসান হাবীব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক দিন ধরেই চালের দাম বাড়তি। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।
“যদি মানুষকে আগের মতই বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে হয়, তাহলে এত সংস্কার আর বিপ্লবের দাম কী?”
নিকেতন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আবদুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের দাম কেন বাড়তি, এর জবাব আমাদের কাছে নাই। পাইকারিতেই আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
“পাইকাররা আবার চালকল মালিকদের থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার নজরদারি বাড়ালে দাম কমে আসত।”
ফের বোতলজাত সয়াবিনের সংকট
গেল বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে বাজার থেকে সয়াবিন তেল এক রকম উধাও হয়ে যায়। এরপর ৯ ডিসেম্বর সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৮টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এর কিছু দিন পর ধীরে-ধীরে বাজারে সয়াবিন তেল ফিরতে শুরু করে। তবে মাস দেড়েকের মাথায় আবার বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল ‘উধাও’ হতে শুরু করেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, তারা চাহিদা দিয়েও ডিলারদের থেকে মাল পাচ্ছেন না। আর ক্রেতাদের ভাষ্য, রোজা সামনে রেখে ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা’ দাম বাড়ানোর জন্য তেল মজুদ করে রাখছেন।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘আরহান স্টোর’–এর বিক্রেতা হাসান শাহরিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় দুই-থেকে ৩ সপ্তাহ আগে এক লিটারের এক কার্টন সয়াবিন তেল অর্ডার করে কাল পেয়েছি। আজই আবার শেষ হয়ে গেছে।
“ডিলাররা চাইলেও তেল দিচ্ছে না। রমজান সামনে রেখে দাম বাড়ানোর জন্যই এই পাঁয়তারা।”
হাসান শাহরিয়ারের দোকানে বিকল্প হিসেবে সরিষা আর সূর্যমুখীর তেল দেখা গেল। তবে সয়াবিন তেল নেই।
পাশেই ‘লক্ষ্মীপুর জেনারেল স্টোর’। সেখানে ‘অখ্যাত’ কোম্পানির আধা লিটারের সয়াবিন তেল দেখা গেলেও ‘পরিচিত’ কোম্পানিগুলোর কোনো তেল চোখে পড়েনি।
এই বাজারে আসা মহাখালী দক্ষিণ পাড়ার গৃহিণী আশফিয়া খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কয়দিন পর-পর একটা জিনিস বাজার থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। আগের সরকারের আমলে এই জিনিসটা শুরু হয়েছিল। এখন নতুন সরকার এসেও এটা পরিবর্তন করতে পারল না।
“এখন রোজার আগে আবার দাম বাড়বে। আমিও ৫ টাকা বাড়তি দামে ১ লিটারের বোতল কিনলাম। নেই তো কী করব!”
সবজিতেই যা স্বস্তি
চাল-তেলে অস্বস্তি থাকলেও স্বস্তি রয়েছে ডিম ও সবজির দামে। বাজারে এখনও শীতের সবজির সরবরাহ প্রচুর। এতে করে কম দামেই মিলছে।
বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও অন্য সময়ের তুলনায় কম রয়েছে। প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, শালগম ৩০ থেকে ৪০, ধরনভেদে শিম ৩০ থেকে ৫০ ও টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ ও লাউ আকৃতিভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধনেপাতা ১০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, নতুন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও বগুড়ার লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে।
দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
আর আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন ২৩০ থেকে ২৪০, দেশি মশুর ডাল ১৪০ ও মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে সোনালি ‘কক’ মুরগি ৩৩০ টাকায় ও সোনালি হাইব্রিড ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগী ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫২০ টাকা করে দরে বিক্রি হচ্ছে।