Published : 04 Apr 2024, 09:52 PM
দেশের এভিয়েশন খাতের নবীনতম কোম্পানি এয়ার অ্যাস্ট্রা এবার আন্তর্জাতিক রুটে ডানা মেলতে চায়।
কোম্পানিটি দেশের বাইরে প্রথম গন্তব্য হিসাবে নেপালের পোখারাকে বেছে নিয়েছে। অনুমতি পেলে এ বছরের মাঝামাঝিতে হিমালয়ের দেশে উড়াল দিতে চায় এয়ারলাইন্সটি।
এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চলতি বছরের ১২ মার্চ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব নেপাল বরাবর পোখারা ও কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করা হয়েছে। নেপাল শুরু থেকেই বাংলাদেশের সাথে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আগ্রহী, বিশেষ করে পোখারা থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে।
“মূলত ট্রাভেলারদের টার্গেট করে এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা ভাবা হচ্ছে।”
পর্যটনের জন্য খ্যাত পোখারা শহরের অবস্থান রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে। নেপালের দ্বিতীয় বৃহৎ এ শহর থেকে হিমালয় পর্বতের সারি দেখা যায়। এখান থেকে ‘অন্নপূর্ণা’ ও ‘মাছাপুছারে’ শৃঙ্গও দেখা যায়। সেই কারণে পোখারাকে ‘মাউন্টেন ভিউ’ শহরও বলা হয়।
গত ১১ মার্চ সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পোখারা ও ভৈরবার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনায় বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকায় নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভাণ্ডারী।
সেসময় নেপালের রাষ্ট্রদূত বলেন, “সম্প্রতি নেপাল কাঠমান্ডুর বাইরেও পোখারা ও ভৈরবাতে দুটি বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে। ঢাকা থেকে নেপালের নতুন এই দুটি বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালিত হলে তা দুই দেশের পর্যটকদের যোগাযোগ সহজ করবে।
“পর্যটনের প্রসারের জন্য যে আঞ্চলিক সার্কিট তৈরি করা হয়েছিল তা কার্যকর করতে নেপাল কাজ করবে। দুই দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণেও নেপাল আগ্রহী।”
বর্তমানে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রতিদিন একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অন্যদিকে নেপালের হিমালয়া এয়ারলাইন্সও কাঠমান্ডু থেকে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। আর বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এক সময় ফ্লাইট পরিচালনা করলেও এখন সেটি বন্ধ রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে এয়ার অ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, “সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা নেপাল সিভিল এভিয়েশনের কাছে টাইম স্লটসহ ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা করব। আশা করছি, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ফ্লাইট শুরু করতে পারব।”
স্বল্প দূরত্বের রুট হওয়ায় ঢাকা-পোখারা রুটে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এয়ার মাইলস ক্যালকুলেটরের তথ্যানুযায়ী, ঢাকা থেকে পোখারার আকাশপথে দূরত্ব প্রায় ৮০৩ কিলোমিটার বা ৪৩৪ নটিক্যাল মাইল। এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা বিমানের সর্বনিম্ন ভাড়া ২২ হাজার ৬১৭ টাকা। আর যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা।
এই রুটে ভাড়া কেমন হতে পারে তা নিয়ে ধারণা না দিলেও সেটি সাধ্যের মধ্যেই থাকবে জানিয়ে ইমরান আসিফ বলেন, “যখন ফ্লাইট পরিচালনার পারমিশনের সকল কার্যক্রম শেষ হব, তখনকার অপারেশন কস্ট (ব্যয়) পর্যালোচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। তবে অবশ্যই সাধ্যের মধ্যে রাখা হবে। এয়ার অ্যাস্ট্রা প্রতি সপ্তাহে কাঠমুন্ডু ও পোখরা মিলিয়ে ছয়টি ফ্লাইট চালাতে পারে।
“বর্তমানে আমরা এটিআর ৭২-৬০০ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছি, তবে ভবিষ্যতে যাত্রী চাহিদার উপর নির্ভর করে জেট বিমান দিয়েও ফ্লাইট পরিচালনা করা হতে পারে।”
একদিন কাঠমান্ডু- পরদিন পোখারা, এভাবে সপ্তাহে ছয়দিন নেপালে ফ্লাইট চালুর ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এয়ার অ্যাস্ট্রা। এয়ার অ্যাস্ট্রার বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যেগুলো ফ্রান্সে নির্মিত টার্বোপ্রপ প্রযুক্তির এয়ারক্রাফট। স্বল্প দূরত্বে ওড়ার জন্য উপযোগী এই এয়ারক্রাফটগুলো ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম। বর্তমানে এয়ার অ্যাস্ট্রা ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরে প্রতিদিন ২৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।