Published : 20 Jan 2024, 09:48 PM
রাত পোহালেই রাজধানীর পূর্বাচলে যে বাণিজ্য মেলা শুরু হতে যাচ্ছে, সেখানে বিআরটিসির বাসে যাওয়া যাবে ফার্মগেইট থেকেও।
মেলা উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, প্রতিবছর কুড়িল থেকে দর্শনার্থীরা বিআরটিসির বাসে মেলায় যেতে পারলেও এবার সেই সুবিধা মিলবে ফার্মগেইটেও।
“ফলে মেট্রোরেলে সংযুক্ত যেকোনো এলাকা, বিশেষ করে মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত এলাকার দর্শনার্থীরা মেলায় অন্যবারের চেয়ে সহজে আসতে পারবেন। পাশাপাশি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশদ্বার ফার্মগেইটে থাকায় সেটিও সযুক্ত থাকবে।”
শনিবার পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, মেলায় দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে বিআরটিসি ৬৪টি শাটল বাস চালু করা হবে। এর মধ্যে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৪০টি বাস চালু থাকবে। আর ফার্মগেইট থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ২৪টি বিআরটিসি শাটল বাস চালু থাকবে।
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। ফার্মগেইট থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা।
শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটির দিনে ১৬১টি বিআরটিসি দ্বিতল বাস চালু থাকবে। সরকারি ছুটিতে মেলায় দর্শনার্থী ও ক্রেতা বেশি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে এ দুই দিন বেশি বাস রাখা হচ্ছে।
নির্বাচনের কারণে পিছিয়ে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার এবারের আসর বসছে রোববার। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাসব্যাপী এ মেলা আগের মতোই সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, “আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ করছি। এবং আমাদের এই মেলাটাও এবার স্মার্ট মেলা করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হল আমাদের গার্মেন্টসের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কীভাবে রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে পারি।
“সবচেয়ে বড় জিনিস প্রধানমন্ত্রী এবার আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন গার্মেন্টস এর মতো চামড়া এবং পাট এই দু’টো প্রোডাক্টকে আরও বেশী সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নতুন বাজার এবং বিভিন্ন জায়গায় আমরা যেন প্রমোট করতে পারি।“
প্রতিমন্ত্রী টিটু বলেন, “এখানে আমাদের আন্তর্জাতিক স্টলের চেয়ে আমাদের দেশীয় স্টল যেগুলা, তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য করতে পারবে, রপ্তানি করতে পারে- এটাই আমাদের ফোকাস থাকবে।
“মেলায় কোনো ভোক্তা বা দর্শনার্থী যেন প্রতারিত না হয়, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে মেলায় অভিযোগ বক্স ও হেল্প ডেস্ক খোলা রাখা হবে। অভিযোগ পেলেই যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মেলায় বিদেশিদের আনতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে টিটু বলেন, “আমাদের দেশে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটা দেশের মিশনে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রয়েছে। তাদেরকে এবার আমরা মেলায় নিয়ে আসব এবং পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা হবে।”
দর্শনার্থীদের খরচ বাড়ছে
মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রবেশ টিকেটের মূল্য ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, আর শিশুদের (১২ বছরের নীচে) জন্য ৫ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা ঠিক করা হয়েছে। মেলায় বরাদ্দ দেওয়া স্টল, প্যাভিলয়নের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব বিবেক সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের যেমন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে; মূল্যস্ফীতি বলি, সেটাকে কনসিডার করে আমাদের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বা ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আনুপাতিক হারে যেটুকু বাড়ে, সেটুকুই বাড়ানো হয়েছে।”
মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব মেলায় পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “না না, মেলায় ওরকম প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই, এটা সামান্য, মার্জিনাল।”
এবার তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানের ১৬ থেকে ১৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল, রেস্তোরাঁ মিলিয়ে দেশি-বিদেশি স্টলের সংখ্যা ৩৫১টি।
মেলার প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আদলে। প্রবেশ গেইটের সামনের দিকে পদ্মা সেতু, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, মেট্রোরেলের আদলে প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় থাকছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব সদস্য নিয়োজিত থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইস এম আহসান, অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম, ইপিবির মহাপরিচালক-১ মাহবুবুর রহমান, মহাপরিচালক-২ বেবি রাণী কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।