Published : 31 Oct 2023, 01:52 PM
পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে চলমান শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে কোথাও সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
মঙ্গলবার উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা বলেন।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড মজুরি ঠিক করার জন্য কাজ করছে। নভেম্বরের মধ্যে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হবে। আমরা পোশাক শিল্পের সব উদ্যোক্তা সেটা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করব।
“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, যখন ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কাজ চলছে তখন কিছু কিছু স্থানে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিশীল করার চেষ্টা চলছে। অথচ মজুরি ঘোষণার আগে কোনো আন্দোলন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পোশাক কারখানায় ভাঙচুর ও সহিংসতা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
“এই পরিপ্রেক্ষিতে বলতে চাই, দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখতে যদি কোনো কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে আসে বা বাইরে থেকে ভাঙচুর চালায়, তবে মালিকরা ১৩ এর ১ ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবে।”
সংঘাত সহিংসতা নিয়ে শ্রমকিদের সতর্ক করে বিজিএমএই সভাপতি বলেন, “আমরা কারখানা চালু রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরও যদি কোনো শ্রমিক ভাঙচুর করে বা বাইরের শক্তিকে নিয়ে আসে, তখন সেই কারখানা ১৩ এর ১ ধারা অনুযায়ী বন্ধ করে দেওয়া হবে। মালিকদের সেই অধিকার আছে যে তারা তাৎক্ষণিকভাবে কারখানা বন্ধ করে দেবে।”
শ্রম আইনের ১৩ এর (১) ধারায় বলা আছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা বা বিভাগে বে-আইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক ওই শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবে, এবং এরকম বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবে না।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক বিক্ষোভ করে আসছেন গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। এর মধ্যেই ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি গড়ায় সহিংসতায়।
সোমবার গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। বিক্ষোভ চলাকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়া হয়; সেখানে প্রাণ যায় আরেকজনের।
মঙ্গলবার বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ যখন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করছিলেন, তখনও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শ্রমিকরা।
তাদের অবরোধের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কালিয়াকৈরের মৌচাক বাজার এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় শ্রমিকরা। সফিপুর এলাকায় আরেকটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, “কারখানার নিজস্ব শ্রমিক কিন্তু এখনকার সহিংসতায় অংশ নিচ্ছে না। বহিরাগতরাই কিন্তু এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। আমরা বলছি, এখানে রাজনীতি কাজ করছে, একটা ফয়দা নেওয়ার ব্যাপার থাকতে পারে।”
ছয়মাস আগে মজুরি বোর্ড গঠন করা হলেও সেখানে কালক্ষেপণ করে পরিস্থিতি নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে বলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে শ্রমিকদের ‘ঠকানোর কৌশল’ নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, “মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএ ও সরকার তিনটি পক্ষ। সেখানে মালিকরা একটা কথা বলেছে, শ্রমিকরা একটা কথা বলেছে। এই দুই কথার মাঝামাঝি সরকার একটা সিদ্ধান্ত দেবে। সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ডিসেম্বর থেকে যেটা কার্যকর হবে সেই বেতনটা জানুয়ারিতে পাবে। এখন নভেম্বর মাস আসার আগেই ভাঙচুর কারা করছে। এর পেছনে আমাদের শ্রমিকরা জড়িত না, বাইরের থেকে লোক এসে এমন কাজ করছে।”
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে এই শ্রমিক অসন্তোষের সম্পর্ক আছে কিনা কিংবা এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা– এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিজিএমইএ নেতারা।
সার্বিক পরিস্থিতিতে নিয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত নির্ধারণ করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, “গুজবে কান দেবেন না। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশি নির্ধারণ করা হবে।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫ বছরের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয় সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা। আগামী ৩০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে।
“মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আর শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে। তারা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
“মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনও এক মাস বাকি আছে। ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা আছে। কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বিধান করবেন- আমি শ্রমকিদের প্রতি এই আহ্বান জানাই। কারও ফাঁদে যেন তারা পা না দেন।”
আরও পড়ুন
গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভের সময় কারখানায় আগুন, নিহত ১
পোশাক খাতের মজুরি ঠিক হয়নি, গুজবে কান না দিতে বললেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী
কালিয়াকৈরে পুলিশ ফাঁড়িতে পোশাক শ্রমিকদের হামলা, মহাসড়ক অবরোধ