Published : 05 May 2023, 09:15 PM
বিদ্যুৎ খাতে যৌথ অংশীদারত্বে একটি কোম্পানি গঠন করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
অন্যদিকে নেপালের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের উপর দিয়ে করিডোর ব্যবহার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সায় দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
খুলনায় বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির ২১তম সভায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দুই দেশের পৃথক দাবি দুটি এভাবেই মিটমাট হয়েছে বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
নতুন যৌথ কোম্পানিটি দুই দেশের মধ্যে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ করবে। এর আগেও বিদ্যুৎ খাতে উভয় দেশের অংশীদারত্বে একটি যৌথ কোম্পানি গঠিত হয়।
বর্তমানে বাগেরহাটে কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছে উভয় দেশের মৈত্রী কোম্পানি বাংলাদেশ ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)।
যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশ বিদ্যুৎ সরবরাহে ৭৬৫ কেভির (কিলোভোল্ট) এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এটি ভারতের কাটিহার থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে আবার দেশটির বরানগর পর্যন্ত যাবে বলে বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চলমান অন্যান্য কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং আরও কিছু নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকের আলোচ্য সূচি সম্পর্কে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিয়ে আসার নিয়ে চলমান একটি আলোচনা দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে করিডোর সুবিধা ব্যবহার করে ভারত এ বিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ বাংলাদেশকে দেবে।
অপরদিকে ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে কোরিডর ব্যবহার করে একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু কোরিডরের বিষয়টি থেকে সরে গিয়ে দুই দেশের যৌথ মালিকানায় একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এই লাইন হয়ে সঞ্চালিত বিদ্যুৎ থেকে অর্জিত অর্থ দুই দেশই পাবে বলে তিনি জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সঞ্চালন লাইনটি ভারতের অংশে বেশি হলেও সমান অংশিদারত্বে এটি নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশ মত দিয়েছে। বিষয়টি সেভাবেই এগোবে।
উভয় দেশের বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা বিষয়ক এবারের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির দুদিনের সভা বুধবার বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকোর খুলনা বিদ্যুৎ ভবনে শুরু হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে ছিলেন দেশটির বিদ্যুৎ সচিব অলক কুমার।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার সেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি বিআইএফপিসিএলের মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের সম্ভাবনা এবং সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের বিষয়েও পর্যালোচনা করা হয়। তবে এসব আলোচনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান।
বৈঠকের আলোচ্য সূচি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃসংযোগ লিংকসহ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় নেপালে উৎপাদিত জল বিদ্যুৎ থেকে ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর, ভুটানে জল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ত্রিপাক্ষিক বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে সেই বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”
এছাড়া সভায় বাগেরহাটের রামপালে বাস্তবায়নাধীন ১৩২০ (২*৬৬০) মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের পরিচালন ও দ্বিতীয় ইউনিটের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী জুনের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আশা প্রকাশ করা হয়।
এই যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ২০তম সভা এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে ভারতের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির পরের সভা আগামী নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।