Published : 19 Dec 2023, 10:00 AM
সুলভ ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানির আকাঙ্ক্ষা পূরণে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের দিকে গুরুত্ব বাড়ালে বাংলাদেশ বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবে বলে মনে করছে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস- আইইইএফএ।
সেই লক্ষ্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-স্রেডার সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঋণপ্রাপ্তির সহজ করা এবং শুল্কবাধা বিলোপসহ আরও কয়েকটি সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
জ্বালানি খাতের নির্বাচিত বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্রসার সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে আইইইএফএ। সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিবেদনটি উন্মুক্ত করা হয়।
আইইইএফএ'র বাংলাদেশ অংশের প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, “এইখাতে অর্থায়ন, সুদের হার, নেট মিটারিং নির্দেশিকা এবং নীতি পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্যের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় গুণগতমান নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্প মূল্যায়নের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। কাজেই, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
“যদিও স্রেডা পরিচালিত সৌর হেল্প ডেস্ক থেকে অনুরোধের ভিত্তিতে এ খাত সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়, তবে প্রয়োজন এবং প্রাসঙ্গিকতার আলোকে সেবার মান বৃদ্ধিতে হেল্পডেস্কের কাজের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যাহত হওয়া এবং নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে এখন বাংলাদেশে ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক।
“ছাদে দুই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা হলে, বছরে এক বিলিয়ন ডলার বা ১১ হাজার ৩২ কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। জ্বালানি খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত আমদানি কমাতে বাংলাদেশের ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো উচিত।”
আইইইএফএ'র প্রতিবেদনে ছাদে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে ছয়টি মূল চালিকা শক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো হল: সচেতনতা বৃদ্ধি করা, অর্থায়ন সহজ করা, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তন আনা, গুণগত মান নিশ্চিত করা, ইউটিলিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিজনেস মডেল অনুসরণ করা এবং মূল অংশীজনদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
শফিকুল আলমের মতে, “বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ পুনঃঅর্থায়ন স্কিমটি সবচেয়ে সাশ্রয়ী, যা থেকে ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বল্প সুদে পুনঃঅর্থায়ন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এই তহবিলটির আকার মাত্র ৪০০ কোটি টাকা (৩৬.৪ মিলিয়ন ডলার) এবং আরো ৬৯টি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় বলে সব উপযুক্ত ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে পুনঃঅর্থায়ন পাওয়া সম্ভব হয় না।
“তাই, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুতের জন্য অর্থায়নে প্রাক-অনুমোদন দিলে, পুনঃঅর্থায়ন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দূর হবে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অদূর ভবিষ্যতে এ খাতের ঋণের চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় সংস্থা, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন এবং স্থানীয় বন্ড বাজারের সুযোগ নিতে পারে।
বর্তমানে এ খাতে ব্যবহৃত সোলার প্যানেল এবং চারটি আনুষঙ্গিক উপকরণের (অ্যাকসেসরিজ) ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ১১.২ শতাংশ থেকে ৫৮.৬ শতাংশ। এই উচ্চ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।