Published : 13 May 2025, 01:49 AM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘আমরণ অনশন’ শুরু করেছেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় একদল শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।
এর আগে রাত পৌনে ৯টায় একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে তারা অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
দাবি পূরণ না হলে মঙ্গলবার দুপুর ২টার পর দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ফেইসবুকে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের গ্রুপ লিংকার্স ইন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ে লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন।
তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সুজয় বিশ্বাস শুভ বলেন, “উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারছেন না। গত ২৮ দিন ধরে চলমান আন্দোলনের কোনো পর্যায়েই তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেননি। অথচ শেষ মুহূর্তে এসে ফেইসবুক লাইভে আসছেন। আমাদের স্পষ্ট কথা, তার মতন ফ্যাসিস্ট উপাচার্য আমরা চাই না।”
শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন বলেনস, “উপাচার্যের লাইভে আসা নিয়ে কারো কোনো আগ্রহ নেই। উপাচার্য আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে লাইভে এসে সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা তার ফাঁদে পা দেব না।”
উপাচার্যকে ফেইসবুক লাইভে প্রশ্ন করা হয়, “শিক্ষার্থীরা আপনাকে চায় না। তারপরও আপনি থাকতে চান। এর মাধ্যমে ভালো কিছু আশা করা যায়?”
জবাবে উপাচার্য বলেন, “কোনটা সত্য আর কোনটা প্রভাবিত, সেটা যদি সকলের মধ্যে উপলব্ধি হয় তাহলে সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে।”
চুক্তিভিত্তিক দুই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “আমার বিশ্বাসী কোনো লোক ছিল না। তাই দুই জনকে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একজন রিজাইন করেছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের ওরিয়েন্টশন এখনো না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শুচিতা শরমিন বলেন, “গত সপ্তাহে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিন্ডিকেট সভাসহ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হয়ে ওঠেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘দুটি করে গ্রুপ’ রয়েছে। কোনো কাজে কাউকে পাওয়া গেলে অন্যরা বিরোধিতা করেন।
একজন এ সময় বলেন, লিংকার্স গ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং শিক্ষার্থীদের ৯৬ শতাংশ উপাচার্য পদে তাকে চাায় না।
শুচিতা শরমিন তখন প্রশ্ন করেন, এই পরিসংখ্যান কতটুকু সঠিক। এ ভোট কি গ্রহণযোগ্য? শিক্ষার্থীদের নামে অন্য কেউ দিতে পারে, কারণ কারো নাম তো প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি দাবি করেন, শিক্ষার্থীদের অনেকে তাকে এসএমএস পাঠিয়ে পরীক্ষা ও ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছে।
উপ-উপাচার্যকে কোনো দায়িত্ব না দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে উপাচার্য বলেন, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় আইনে তার কোনো ভূমিকা নেই। তাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে সিন্ডিকেট সভা করে সে সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে কী বার্তা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, “আন্দোলন থেকে ক্লাসে ফিরে যান। আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা যাবে। সকলের জন্য শুভ কামনা। সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।”
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা ছাড়া একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে শাটডাউন কর্মসসূচি অব্যাহত রয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার দিনভর ২৫টি বিভাগের পরীক্ষা চললেও শিক্ষার্থীরা ক্লাস করেনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘোরাফেরা করে সময় কাটিয়ে চলে গেছেন।