Published : 11 May 2025, 08:34 PM
পার্বত্য অঞ্চলের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাসহ ৫ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে 'স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি'।
শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ করে তারা।
এতে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ইউপিডিএফ ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়।
“বাংলাদেশ, ভারত ও আরাকানে বিস্তৃত ইউপিডিএফের মত ত্রিদেশীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কীভাবে বৈঠক করার নৈতিক সাহস পেল, সেটা আমাদের বুঝে আসছে না।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ইফতেখারুজ্জামানকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দোসর' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহযোগিতা করছেন, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র বানাতে চায়। এ কুশিলবকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।”
শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় ইউপিডিএফ।
এ সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে জিয়াউল হক বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের যে সদস্যের সহায়তায় ইউপিডিএফকে রাজনৈতিক সংগঠনের স্বীকৃতি দিতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে, তাদেরকে অতিদ্রুত অপসারণ করতে হবে, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এমন আন্দোলন গড়ে তুলব, তা সামাল দিতে পারবেন না।"
সমাবেশে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির সদস্য ইব্রাহিম খলিল অপি অভিযোগ করেন, “ইউপিডিএফ ৪০ হাজার বাঙালি হত্যা করেছে। অথচ তাদের সঙ্গে বসেছে ঐকমত্য কমিশন। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন বসতে পারে না।”
তিনি বলেন, “বান্দরবানে ইউপিডিএফের ব্যানারে কুকি চীন এসে প্রোগ্রাম করে যায়। অথচ আপনারা আমাদের কথা কানে নিচ্ছেন না। তারা পাহাড়ি বাঙালিদের নির্যাতন করছে।
"তাই পাহাড়ি-বাঙালি সবার মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। আপনারা না পারলে আমরা আমাদের অধিকার রক্ষা করব; তাদের বিরুদ্ধে আমরা লাঠি নিয়ে আন্দোলন করব।”
স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির পাঁচ দাবি হলো-
>> ইউপিডিএফের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামী ১৫ মের বৈঠক বাতিল করতে হবে;
>> ইউপিডিএফের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে;
>> ঐকমত্য কমিশন থেকে ইফতেখারুজ্জামানসহ বিচ্ছিন্নতাবাদের সহযোগীদের অপসারণ করতে হবে;
>> পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘খ্রিষ্টানাইজেশন’ রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং
>> পাহাড় থেকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গত জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠার সাড়ে চার মাসের মাথায় সংবাদের শিরোনাম হয় ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’। ‘আদিবাসী’ বিরোধী অবস্থানের কারণেও আলোচনায় আসে সংগঠনটির নাম।
পাঠ্যবইয়ে ‘আদিবাসী’ লেখা চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ মাথায় নিয়ে নিজেদের শক্তি জানান দেয় সংগঠনটি।
সংগঠনটির আন্দোলনের মুখেই নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের শেষ প্রচ্ছদে থাকা ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম সরিয়ে নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ খবরে হঠাৎ নজর কাড়ে সংগঠনটি।
গ্রাফিতি সরানোর প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ গত ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলে এনসিটিবির কার্যালয় পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করতে যায়। সেখানে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির’ ‘পাল্টা কর্মসূচি’ থেকে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।