Published : 12 May 2025, 07:12 PM
বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বাড়ানো ও শিক্ষার্থীদের ‘আবাসন ভাতাসহ’ চার দাবিতে সমাবেশ করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আত্মপ্রকাশ করা প্লাটফর্ম ‘জবি ঐক্য’।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ‘ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও একাধিক সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, 'আমাদের পাশে আমাদের শিক্ষকরা নেই; প্রশাসন নেই; এটা আমাদের সবচেয়ে বড় ঘাটতি। আমাদের উপাচার্য কোমল মনের মানুষ, উনার মধ্যে শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো ‘অ্যাকশন’ মনোভাব আমরা দেখি না।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের আস্থা হারিয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসা আন্দোলন আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আমরা চাই সামনের বাজেটে যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জবি শাখা সভাপতি ইভান তাহসিব বলেন, “আবাসনের দাবিতে আমি দীর্ঘদিন ধরে লড়ছি। আমার আগের ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন করেছে। আমরা কখন এ অধিকার পাব জানি না, তবে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নূর নবী বলেন, “১১ জুলাই আমরা জগন্নাথ শিক্ষার্থীরা ঢাবির শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছি। আমরা আর কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে তাদের উদ্ধার করতে যাচ্ছি না। আর এ শুয়োররা এখন আমাদের দিকটা দেখছে না।
"জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক আজ এ সমাবেশে উপস্থিত নাই। কেন নাই? কারণ তারা ঢাবি থেকে এখানে আসছে। তারা ঢাবির প্রেসক্রিপশন এখানে বাস্তবায়ন করতে চায়। তারা এ ক্যাম্পাসকে এখান থেকে উঠিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।"
ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, “ঢাবি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বাজেট হয় ৯০০ কোটি, আর জবির হয় ১৫০ কোটি।
“ঢাবির চেয়ে জগন্নাথের শিক্ষার্থী অর্ধেক হলেও তো বাজেট ৪৫০ কোটি হওয়ার কথা। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাথাপিছু বাজেট হারে আমাদের বাজেট নির্ধারণ করা হোক। বিগত বছরের বৈষম্যমূলক বাজেটের সঙ্গে আগামী বাজেট নির্ধারণ করা যাবে না।'
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, "আমি যখন রফিক ভবনে আমার রুমে বসি, তখন মনে হয় হঠাৎ কখন যেন ভেঙে পড়ে। কদিন আগে অবকাশ ভবনের একাংশ ভেঙে পড়েছে। সায়েন্স ফ্যাকাল্টিরও একই অবস্থা।"
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক মেহেদি হাসান বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটের বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের আন্দোলন শুধু ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। আমাদের ঘেরাও করতে হবে যমুনা, আমাদের ঘেরাও করতে হবে ইউজিসি, আমাদের ঘেরাও করতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।'
শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হলে রাজপথে আন্দোলনের কড়া হুঁশিয়ারি দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন।
তিনি বলেন, “২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত করলেও আজ ২০২৫ সাল। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুই নেই। এর কারণটা আসলে কী?
“বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন কি ইউজিসিতে এসব সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে নাই; নাকি তারা দাবি জানিয়েছে, কিন্তু ইউজিসি গুরুত্ব দেয় নাই- এসব প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।”
সমাবেশের আগ মুহূর্তে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা। মিনিট বিশেক পরে প্রধান ফটক খুলে দিলেও অন্যান্য ফটকে তালা লাগানোই ছিল।আন্দোলনকারীদের ৪ দফা
>> জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বাড়াতে হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা থাকতে করতে হবে।
>> দ্বিতীয় ক্যাম্পাস, পুরান ঢাকার ড. হাবিবুর রহমান হল ও বাণী ভবনের নির্মাণকাজ অবিলম্বে শুরু করতে হবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হল ও দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি ১৫ দিন পর পর মুক্তমঞ্চে এসে তুলে ধরতে হবে।
>> ১৫ মের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।