Published : 21 Jun 2025, 11:17 AM
‘অবৈধ বহিষ্কারাদেশ’ প্রত্যাহার, ‘দমনমূলক’ সিন্ডিকেটের জবাবদিহি এবং শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশের নিশ্চয়তার দাবিতে ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে তারা ‘নতুনবাজার ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু করলে সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ভাটারা থানার ওসি রাকিবুল হাসান বলেন, “শিক্ষার্থীরা সড়কের একপাশে অবস্থান নিয়েছেন, এরফলে কুড়িল থেকে বাড্ডাগামী সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
“শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে আমরা চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এসেছেন, তারা কথা বলছেন।”
প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘হয় বহিষ্কার বাদ যাবে, না হয় আমার লাশ যাবে’; ‘প্রত্যাহার বহিষ্কার, তারপর হবে সংস্কার’; ‘অথরিটি স্বৈরাচার, এবার তোরা গদি ছাড়’, ‘প্রাইভেট খাতে শিক্ষাকর, করতে হবে প্রত্যাহার’; ‘প্রাইভেট সব মাঠে থাক, সিন্ডিকেট নিপাত যাক’সহ নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা অবস্থান ধরে রেখেছেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ দাবি করেন, পুলিশের লাঠিচার্জে ৪-৫ জন ছাত্রীসহ ৮-৯ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে গত ২৬শে এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘নানা নাটকীয়তা ও বিলম্বের’ মধ্যেও ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ধরনা দিলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। এর ফলে ‘আরেকটি জুলাই’ আসার আগেই তারা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের একজন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাবিব মুহান্নাদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে যে শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের ২৫ জনকে বহিষ্কার করেছে ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটি। ইউনাইটেড গ্রুপ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোকে টাকা দিতো। তারা জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
“শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছিল, তাদের আশ্বাস দিয়ে আট মাস বসিয়ে রাখা হয়। পরে তারা ভিসি পদত্যাগসহ তাদের অধিকার রক্ষায় ফের আন্দোলনে নামে। ওই আন্দোলন দমানোর জন্য ২৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চাই।”
গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইউআইইউ থেকে উপাচার্য, ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালক পদত্যাগ করেন। গত রোববার অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ২৮ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করে আসছেন।
গত ২ জুন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বাকি একজনকে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।