Published : 21 Jun 2025, 08:48 PM
আন্দোলনের মুখে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক আবু সা-দাত মো. মুনতাসিরবিল্লা শনিবার রাত ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সভা করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
“শিক্ষার্থীরা রাত ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন, সে সময়ের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। এটাই শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ছিল।”
তিনি বলেন, “আর যারা বহিষ্কৃত ছিলেন, তারা চলতি স্প্রিং সেমিস্টার থেকে ক্লাস চালিয়ে যেতে পারবেন। যাদের দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা ক্লাসে ফিরবেন ফল সেমিস্টার থেকে।"
এদিন সকালে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ইউআইইউসহ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ফলে নদ্দা থেকে বাড্ডাগামী সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারা অবস্থান ধরে রাখেন।
এর মধ্যে সন্ধ্যার দিকে তারা রাত ৮টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সড়ক ছেড়ে দেন।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রাফসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা নিঃশর্তভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃতদের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন, কিন্তু অন্যান্যদেরর ক্ষেত্রে শর্ত দিয়েছেন।
"সন্ধ্যায় আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, রোববার ফের অবরোধ করবো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা শিগগিরই ঘোষণা দেব।"
শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি হল-
১. অন্যায়ভাবে’ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. বহিষ্কারের সঙ্গে সাথে জড়িত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. ইউআইইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে যেসব সংস্কার দাবি করা হয়েছে, সেই সব বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইউআইইউ রিফর্ম আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে গত ২৬শে এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘নানা নাটকীয়তা ও বিলম্বের’ মধ্যেও ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের ধরনা দিলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। এর ফলে ‘আরেকটি জুলাই’ আসার আগেই তারা আবারও রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।
গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ইউআইইউ থেকে উপাচার্য, ২৪ জন ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালক পদত্যাগ করেন। গত ২৭ এপ্রিল অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের দাবি করে আসছেন।
গত ২ জুন ৪১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বাকি একজনকে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।