Published : 05 Jun 2025, 09:19 PM
উৎসব পরিণত হয়েছে বিষাদে। আইপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর শিরোপা উদযাপনের সময় পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যথিত ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাপিল দেব। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদযাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার আরও সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
আহমেদাবাদে গত মঙ্গলবার ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হন ভিরাট কোহলি ও বেঙ্গালুরু। পরদিন দলটির শিরোপা উদযাপনের অংশ হতে বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাসোয়ামি স্টেডিয়ামের চারপাশে হাজির হয় লাখো মানুষ। সেখানেই হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান ১১ জন এবং আহত হন অন্তত ৪৭ জন।
একটি কর্পোরেট ইভেন্টের ফাঁকে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে কাপিল বলেন, সবার মনে রাখা উচিত যে উদযাপনের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি।
“এটা (দুর্ঘটনা) নিয়ে আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার মনে হয়, আমাদের একে অপরের কাছ থেকে শেখা উচিত। পরেরবার যখন এই ধরনের (উদযাপন) হবে, তখন মানুষের আরও সচেতন থাকতে হবে।”
“মানুষ ভুল করে। তবে ভুলটা এমন মাত্রায় হওয়া উচিত নয় যে, আপনি আনন্দ করছেন এবং প্রাণ হারিয়ে ফেললেন। ভবিষ্যতে যখন কোনো দল জিতবে, তখন শান্ত থাকতে হবে। উদযাপনের চেয়ে জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
বাইরে লোকজনের মৃত্যুর পরও স্টেডিয়ামের ভেতরে চলছিল উৎসব। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ ও কর্ণাটক রাজ্য সরকারকে দায় দিলেন কাপিল দেবের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থ ও সাবেক পেসার মাদান লাল।
“মানুষ এটা ভুলবে না, অথবা ভিরাট কোহলিকে। যখন বাইরে মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন ভেতরে উৎসব চলছিল। এটা সত্যিই মর্মান্তিক ও হতাশাজনক। নিহতদের পরিবারের উচিত মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার জন্য আরসিবি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি রুপির মামলা করা। বিসিসিআইও দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।”
হতাহতের ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বেঙ্গালুরু কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, পদদলিতের খবর তারা প্রথমে জানতেন না, তাই তারা উদযাপন অব্যাহত রেখেছিলেন।
“মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য আরসিবি শোক প্রকাশ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের কর্মসূচি সংশোধন করেছি এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে চলেছি।”
তাড়াহুড়ো করে অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের কিপার-ব্যাটসম্যান সৈয়দ কিরমানিও।
“আমি মনে করি, যদি আরসিবি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ১৭ (১৮) বছর অপেক্ষা করতে পারে, তাহলে আয়োজকরা পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারত এবং তারপর আরসিবির এই নায়কদের সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারত।”
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, স্টেডিয়ামের গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মানুষ দ্রুত ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতেই ঘটে বিপত্তি।
কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার হলেও উদযাপনের অংশ হতে হাজির হয় দুই থেকে তিন লাখ মানুষ, যা পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছিল।
“আরসিবির বিজয় উদযাপনের সময় মর্মান্তিকভাবে পদদলিত হয়ে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আহতদের পুরো চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে কর্ণাটক সরকার।”
বেঙ্গালুরু এ দিন আরেক বিবৃতিতে জানায়, নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেবে তারা। এ ছাড়া আহতদের জন্য একটি সহায়তা তহবিল চালু করার কথা জানায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।