Published : 31 May 2025, 09:29 PM
ক্রিকেট বোর্ডে সরকারী হস্তক্ষেপের কোনো ঘটনা ঘটেনি, বললেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাই আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কোনো শঙ্কাও তিনি দেখেন না। বরং আইসিসির সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করে প্রক্রিয়া মেনে সবকিছু করা হয়েছে বলেই দাবি তার।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নানা ঘটনাপ্রবাহের পথ ধরে বড় পালাবদল ঘটে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বিসিবি সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদের অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে স্রেফ ৯ মাসেই। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
ফারুকের বিদায়ের প্রক্রিয়া নিয়ে অবশ্য নানা আলোচনা, বিতর্ক চলছে। আইসিসির কাছে অভিযোগ করার কথাও কিছু সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিদায়ী সভাপতি। তাতে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার শঙ্কাও করছেন অনেকে।
তবে সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। জাতীয় পুরুষ হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, নিয়ম মেনেই সবকিছু করা হয়েছে।
“যে কথাগুলো বলা হচ্ছে যে, সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ… এখানে সরকারের হস্তক্ষেপের কিছু নেই। সরকার তার যতটুকু ক্ষমতা আছে, যতটুকু এখতিয়ারভুক্ত আছে, সেই বিবেচনায় হস্তক্ষেপ করেছে। দুজন পরিচালক দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের আছে, সরকার সেখানে পরিবর্তন করেছে। সরকার সভাপতিকে অপসারণ করেনি।”
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনয়নে সরাসরি পরিচালক হিসেবে বোর্ডে জায়গা পান দুজন ব্যক্তি। গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তখনকার এনএসসি মনোনীত দুই প্রার্থীর একজন পদত্যাগ করেন, আরেকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের বদলে মনোনয়ন দেওয়া হয় ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীনকে। পরে পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় এনএসসি জানায়, ফারুকের সেই পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরদিন তার জায়গায় মনোনয়ন পান আমিনুল। পরে ফারুকের মতোই পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক এই অধিনায়ক।
বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগ গত ১০ বছর ধরে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন আমিনুল। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থাটিতে তার যোগাযোগও তাই ভালো।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জানালেন, নিষেধাজ্ঞা তো বহুদূর, বরং আমিনুলের নেতৃত্বে নতুন বোর্ডকে স্বাগত জানিয়েছে আইসিসি।
“এই বিষয়ে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কথাও বলা হচ্ছে, অনেকে বলছেন, আমাদের আইসিসির সঙ্গে যথাযথভাবে যোগাযোগ হয়েছে। যিনি এখন সভাপতি হয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আইসিসিতে কাজ করে আসছেন। কোনো কমিউনিকেশন গ্যাপ আমাদের দিক থেকে নেই, আইসিসিও এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান যে ক্রিকেটের অবস্থা, সেটা তো আইসিসির অজনা নয়। তারাও এই সিদ্ধান্তকে বা নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে।”
ফারুকের এনএসরি মনোনয়ন বাতিলের আগের রাতে তার সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা। বিপিএল সত্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট ও আট বিসিবি পরিচালকের অনাস্থার ব্যাপারটি তখন সেই সময়ের সভাপতিকে বুঝিয়ে বলেছিলেন বলে দাবি করলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
“ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল… যখন রিপোর্ট আমাদের হাতে এলো এবং আটজন পরিচালকের অনাস্থা প্রস্তাব এলো, আমি উভয়পক্ষকে বলেছিলাম যাতে এটা গোপন থাকে। কিন্তু আপনারা জানেন, ক্রীড়া সেক্টরে আসলে কোনোকিছুই গোপন থাকে না, আপনাদের কাছে চলেই যায়।”
“ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল, আমরা স্পোর্টসের বা ক্রিকেটের পরিবেশটাকে খারাপ না করে, পানিঘোলা না করে সমাধান করতে পারি কি না। উনি নিজে থেকে যদি ‘ই’ (পদত্যাগ) করতেন, তাহলে হয়তো আমাদেরকে উনার পরিচালক মনোনয়ন তুলে নিতে হতো না। যাই হোক, সেটা আর সম্ভব হয়নি। যে কারণে আমাদেরকে উদ্যোগটা নিতে হয়েছে।”
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আবারও বললেন, নিয়মের কোনো লঙ্ঘন তারা করেননি, তাই নিষেধাজ্ঞার শঙ্কাও নেই।
“কোনো একজন ক্রিকেটার খারাপ করলে, আপনি নির্বাচক কমিটিতে থাকলে তাকে রাখবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সেই সুযোগটা ছিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো ব্যত্যয় আমরা ঘটাইনি। আইসিসির গাইডলাইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি। জোরপূর্বক কাউকে সভাপতি থেকে অপসারণ করিনি। আমরা আমাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছি এবং নতুন একজনকে মনোনয়ন দিয়েছি।”