Published : 25 Apr 2025, 07:43 PM
সকাল থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আঙিনায় জড়ো হলেন ক্রিকেটারারা। লম্বা সময় ধরে বিসিবি প্রধান ফারুক আহমেদসহ কয়েকজন বোর্ড পরিচালকের সঙ্গে মিটিং করলেন তারা। পরে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম ইকবাল বললেন, গত মাস চারেকের বেশ কিছু ঘটনায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন তারা। এসব নিয়ে ক্রিকেটারদের সবাই অসন্তুষ্ট।
মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে শুক্রবার সারা দিন ধরেই মিটিং করেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়রা। তাদের নিয়ে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে সভার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম।
“আমরা মূলত যে কারণে এখানে সবাই একসঙ্গে হয়েছি, সেটা হলো সর্বশেষ দুই তিন মাসে কিছু ঘটনা ঘটছে, যা নিয়ে প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের মনে একটা কষ্ট ছিল, খেলোয়াড়রা ভীষণ আপসেট। যে ধরনের ব্যবহার বা যে ধরনের কাজ-কর্ম হচ্ছিল, আমি দুই তিনটা পয়েন্ট আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারব।”
“এখানে একটা ইস্যু তাওহিদ হৃদয়। বাকি দুইটা… কেউ যদি অপরাধ করে থাকে আমরা সবাই চাই তার শাস্তি হোক। কিন্তু এর একটি প্রক্রিয়া আছে। আপনি তাদের প্রকাশ্যে অপমান করতে পারেন না। এটা হতে পারে না।”
অসুস্থতার জন্য আপাতত ক্রিকেটের বাইরে আছেন তামিম। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর অন্তত তিন মাস তার ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হবে। তবে ক্রিকেটারদের ডাকে তিনি ছিলেন শুক্রবারের সভায়। সতীর্থদের হয়ে তাদের কথাগুলো বললেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
“প্রথম কথা হলো তাওহিদ হৃদয়ের ইস্যুটা। ওর সঙ্গে মাঠে একটা ঘটনা ঘটে, ওকে দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করে। তখন কিন্তু কোনো খেলোয়াড় বা কেউ এটা নিয়ে কথা বলেনি। আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি মিলে তাকে নিষিদ্ধ করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মনে করতে পারি যে, সিদ্ধান্তটা কঠোর ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে আমরা কিন্তু কেউ কোনো কথা বলিনি।”
“এর কিছুদিন পর দেখলাম যে দুই ম্যাচ থেকে (শাস্তি কমিয়ে) এক ম্যাচ করা হলো। এটা বিসিবি করেছে, তখনও আমরা কেউ কোনো কথা বলিনি। তারপর হৃদয় (শাস্তির জন্য) একটা ম্যাচ না খেলে তারপর দুটা ম্যাচ খেলল। স্বাভাবিকভাবে ওর যে শাস্তি ছিল, সেটা সে ভোগ করে নিয়েছে। এখন দুটা ম্যাচ খেলার পর কালকে শুনলাম যে তাকে আবার নিষিদ্ধ করছে!”
এর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না তামিম। এক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষোভও লুকালেন না তিনি।
“এটা কোন নিয়মে, কীভাবে করছে এটা আমার কাছে জানা নেই। এটা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। এটা হাস্যকর ছিল। কোনোভাবে সাসপেন্ড হতে পারে না। যে ছেলে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে, তাকে বিসিবি খেলতে দিয়েছে দুই ম্যাচে, তাকে আবার আপনি কীভাবে নিষিদ্ধ করতে পারেন? এটা একটা আমাদের বড় পয়েন্ট ছিল।”
চলমান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে অনাকঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটে গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের ম্যাচ। শাইনপুকুরের দুই জন খেলোয়াড়ের অদ্ভুত দুই স্টাম্পিং আউট জন্ম দেয় নানা প্রশ্ন ও সন্দেহর। দুইবার সুযোগ পেয়েও ক্রিজে ফেরেননি এক ব্যাটসম্যান, আরেকজন পেছনে না তাকিয়ে সোজা হাঁটা দেন ড্রেসিং রুমের দিকে! এ নিয়ে তদন্তের সময় অ্যাকাডেমি মাঠে সেই দুই ক্রিকেটারকে আউটের পুর্নমঞ্চায়ন করানো হয়। এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না ক্রিকেটার, বললেন তামিম।
“দ্বিতীয়ত, কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন গুলশান ও শাইনপুকুর ম্যাচে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা এই জিনিসটা ক্রিকেট বোর্ডকে সরাসরি বলেছি যে দেখেন, যদি ওখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে বা কোনো খেলোয়াড় কোনো ধরনের দোষ করে থাকে, আমরা সবাই চাই এটার শাস্তি হোক। এতে আমর শতভাগ একমত।”
“কিন্তু তার মানে এটা না যে, আপনি ওই দুটা ছেলেকে নিয়ে গিয়ে মিডিয়ার সামনে অভিনয় করাবেন, এমনটা করার অধিকার কারোর নেই। বিশ্বের কোথাও দুর্নীতি দমন ইউনিটে এমন নিয়ম নেই যে, আপনি ওই দুটা ছেলেকে বেইজ্জত করবেন মিডিয়ার সামনে, একই জিনিস অভিনয় করিয়ে। এটা খেলোয়াড়দের অপমান করা। এই জিনিস নিয়ে আমরা একবিন্দুও খুশি ছিলাম না।”
গত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে কয়েক জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে। যাদের নাম গণমাধ্যমে আসার পেছনে বিসিবিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তামিম।
“বিপিএলেও ১০ জনের নাম ফাঁস হয়েছে বিসিবির ভেতর থেকে, ১০ জনের ছবি মিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই চাই ওখান থেকে কেউ যদি দোষী হয় তার শাস্তি হোক। তার যতদূর শাস্তি দেওয়া সম্ভব দেওয়া হোক। কিন্তু ওখানে দুটা নির্দোষ বা আটজন নির্দোষ-তাদের নামগুলো জনগণের সামনে ফাঁস করে দেওয়া অপমানজনক।”
“এই প্রত্যেকটা জিনিস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার হল ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের যদি এভাবে ট্রিট করা শুরু করেন, তাহলে তো হলো না। এ জিনিস নিয়ে আমরা প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করেছি আসতে, উনি এসেছেন সঙ্গে আরও দুজন পরিচালক (নাজমুল আবেদীন ও ইফতেখার আহমেদ) ছিলেন। আমরা লম্বা আলোচনা করেছি। আমাদের পয়েন্ট তুলে ধরে উনাকে বলেছি আমরা আপসেট।”
“হৃদয়ের বিষয়টা আমরা বলেছি যে এটা কোনোভাবে হয় না। হ্যাঁ, প্রথমে দুই ম্যাচ হয়ে গেলে সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এক ম্যাচ করে দু ম্যাচ খেলতে দিয়ে আবার করা এটা আসলে হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে। তো এ বিষয়গুলো নিয়ে বলছি আপনারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানান, যেহেতু কালকে খেলা। আমি নিশ্চিত উনারা খুবই দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। আপনারা সবাই জানতে পারবেন, আমরাও জানতে পারব। সব ক্রিকেটার এক হয়েছে কারণ দুই তিন মাসের ঘটনাগুলো সবাইকে বিরক্ত করছিল।”
মোহামেডানের চাপের জন্য হৃদয়ের শাস্তি কমে এক ম্যাচ হয়েছিল, এমন অভিযোগ উঠেছে জোরেশোরে। সেদিকে না গিয়ে অসুস্থতার আগ পর্যন্ত মোহামেডানকে নেতৃত্ব দেওয়া তামিম কাঠগড়ায় তুললেন বিসিবিকে।
“মোহামেডান থেকে চাপ দিয়ে খেলানো হয়েছে কি হয়নি, সেটা জরুরি না। তাকে কি বিসিবি খেলতে অ্যালাউ করেছিল? যদি অ্যালাউ করে তাহলে আবার একই ঘটনায় কীভাবে শাস্তি দেন? এটা নিয়ে আমাদের বিতর্ক হয়েছে। উনাদের আমরা সুন্দর করে অবস্থান পরিষ্কার করেছি আমরা কী অনুভব করি। তারপর উনারা উনাদের মতো সিদ্ধান্ত দেবেন।”
প্রিমিয়ার লিগের প্রাথমিক পর্বের শেষ রাউন্ডে আবাহনী ম্যাচে একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকতের সঙ্গে আগ্রাসী আচরণ করেন মোহামেডান অধিনায়ক হৃদয়। ম্যাচের পর আম্পায়ারকে নিয়ে করেন বিতর্কিত মন্তব্য। এই দুই ঘটনায় ২ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হন হৃদয়। কিন্তু এক ম্যাচ পরেই নিয়ম পাল্টে তাকে খেলার অনুমতি দেয় বিসিবি। যা নিয়ে এখনও চলছে সমালোচনা।