ভারতীয় ক্রিকেট
Published : 18 May 2025, 05:07 PM
প্রথম দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি, এরপর অধারাবাহিকতার বলয়ে বন্দিদশা। রোহিত শার্মার টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল এমন। কয়েক বছর পর ব্যাটিং পজিশন বদলে সাদা পোশাকে নতুন অধ্যায় শুরু করেন ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান। তাতে ধরা দেয় সাফল্যও। লাল বলের ক্রিকেটে রোহিতের ক্যারিয়ারের এমন বাঁকবদলের কারিগর ছিলেন ভারতের সাবেক কোচ রাভি শাস্ত্রী।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রোহিতের অভিষেক ২০০৭ সালে, ওয়ানডে দিয়ে। ওই বছরই ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিও খেলা শুরু করেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে দীর্ঘদিন তার পরিচয় ছিল সীমিত ওভারের বিশেষজ্ঞ।
রঙিন পোশাকে অভিষেকের প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর সাদা পোশাকে শুরু হয় রোহিতের বিচরণ। ততদিনে সাদা বলের ক্রিকেটে তারকা হয়ে গেছেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটাও তার ছিল দুর্দান্ত। ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে খেলেন ১৭৭ রানের ইনিংস, পরের টেস্টেও করেন সেঞ্চুরি।
শুরুর সেই দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি রোহিত। সময়ের সঙ্গে অধারাবাহিক হতে শুরু করেন তিনি। প্রথম দুই সেঞ্চুরির চার বছর পর টেস্টে আরেকটি শতকের স্বাদ পান তিনি।
সীমিত ওভারের ওপেনার রোহিত টেস্টে তখন খেলতেন মিডল অর্ডারে। এমন অধারাবাহিকতা দেখে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন ওই সময় ভারতের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকা শাস্ত্রী। দ্রুতই তাকে ফর্মে ফেরানোর পথ পেয়ে যান তিনি।
কদিন আগে অবসর নেওয়া রোহিতকে নিয়ে রোববার আইসিসি রিভিউয়ে আলোচনা করেন শাস্ত্রী। সেখানেই তুলে ধরেন টেস্টে রোহিতের দুর্দান্ত এক ওপেনার হয়ে ওঠার পেছনে তার ভাবনার ভূমিকার কথা।
“চার, পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করে এই ছেলে (রোহিত) বিরক্ত হয়ে যেত। এরপর আমি ভাবতে শুরু করলাম, ওয়ানডে ক্রিকেটে সে কেন এত সফল? খুঁজে পেলাম, সে শুরুতে ব্যাটিং করতে পছন্দ করে।”
“আমার মনে হলো, সে যদি শুরুতে ক্রিজে যায় এবং মানিয়ে নিতে পারে, গতিময় ডেলিভারি খেলার জন্য তার হাতে অনেক সময় থাকে, পেসারদের বিপক্ষে শট খেলতে পারে, আক্রমণ করতে পারে। টেস্টে ফিল্ডাররা উপরে থাকে, ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করাকে সে যদি আলিঙ্গন করে নিতে শুরু করে, তাহলে টেস্ট ক্রিকেট তার জন্য হানিমুন হতে পারে।”
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সময় কাটান রোহিত। পাঁচ সেঞ্চুরিতে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। ৮১ গড়ে করেছিলেন ৬৪৮ রান। মূলত এরপরই শাস্ত্রীর মনে হয়, টেস্টেও রোহিতকে ওপেন করানোর কথা।
২০১৯ সালের অক্টোবরে রোহিতের টেস্ট ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরু হয় ওপেনিংয়ে। প্রথমবার ওপেন করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের দুই ইনিংসে খেলেন ১৭৬ ও ১২৭ রানের ইনিংস। দুই ইনিংস মিলিয়ে ছক্কা মারেন ১৩টি, এক টেস্টে যা সবচেয়ে বেশি ছক্কার বিশ্বরেকর্ড।
সেখানেই থামেননি তিনি। এক টেস্ট পরে ছাড়িয়ে যান নিজেকে। রাঁচিতে পেয়ে যান ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সফল অধ্যায়টুকু ইনিংস শুরু করতে নেমেই।
টেস্টে রোহিতের ১২ সেঞ্চুরির ৯টিই এসেছে ওপেন করতে নেমে। ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৩ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ২ হাজার ৬৯৭ রান।
“পাঁচ ও ছয় নম্বরে সে অনেক ব্যাটিং করেছে, তেমন কিছু করতে পারেনি। ২০, ৩০ রান করে সে উইকেট দিয়ে আসত। আমি ভাবলাম, তাকে চাপে রাখা যাক এবং উপরের দিকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো যাক। আমার মনে আছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাকে বলেছিলাম, ‘আমরা চাই তুমি ওপেন করো’। এটা ছিল ২০১৯ সাল (অগাস্ট), আমি যদি ভুল না করি, বিশ্বকাপের পর। সে দুর্দান্ত একটি বিশ্বকাপ কাটায়, অসাধারণ ফর্মে ছিল সে। সম্ভবত এটা (টেস্টে ওপেন করা) নিয়ে কিছু দিন ভেবেছিল, তবে সে প্রস্তুত ছিল।”
“এরপর (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) প্রথম টেস্টে সে ইনিংস শুরু করতে নামল এবং সেঞ্চুরি উপহার দিল। আমি যদি ভুল না করি, প্রথম ইনিংসে বড় ইনিংস খেলেছিল সে। তারপর আর পেছনে তাকায়নি, কারণ সে এটা উপভোগ করছিল।”
গত ৭ মে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেন রোহিত। এই সংস্করণে ৬৭ ম্যাচ খেলে ৪ হাজার ৩০১ রান করেছেন তিনি ৪০.৫৭ গড়ে।