Published : 12 Jun 2025, 11:52 PM
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল যেন রূপ নিলো দুই দলের পেসারদের লড়াইয়ে। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয়টিতেও আগুন ঝরালেন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। দুই দিনই ১৪ ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিং রুমে ফিরতে দেখলেন লর্ডসের গ্যালারিভর্তি দর্শকরা।
পেসারদের দাপটের ম্যাচে দ্বিতীয় দিন শেষে ২১৮ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। বাকি আছে আর ২ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ২১২ রানের পুঁজি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৩৮ রানে গুটিয়ে দেয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান শিরোপাধারীরা। ৭৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয়বারে অবশ্য স্বস্তিতে নেই তারা। বৃহস্পতিবারের খেলা শেষে তাদের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৪৪ রান।
প্রোটিয়াদের গুড়িয়ে দেওয়ার মূল কারিগর প্যাট কামিন্স। দ্বিতীয় দিন তাদের ছয় উইকেটের পাঁচটিই নেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। অন্যটি রান আউট। সব মিলিয়ে মাত্র ২৮ রানে ৬ উইকেট নিয়ে লর্ডসে এখন অধিনায়কদের মধ্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড কামিন্সের।
একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ পেসার ও অষ্টম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। অধিনায়ক হিসেবে কামিন্স পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই নিয়ে ৯ বার। এখানে তার ওপরে আছেন কেবল ইমরান খান (১২)। কামিন্সের সমান ৯ বার পেয়েছেন রিচি বেনো।
কামিন্সের চরম নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের জবাব দিতে একদমই সময় নেননি কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডিরা। দুজনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৭৩ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়ার ৭ উইকেট।
পরে অষ্টম উইকেটের প্রতিরোধে দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান অ্যালেক্স কেয়ারি ও মিচেল স্টার্ক। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকতে পারেননি কেয়ারি। তবু লিড দুইশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় শেষ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
৪ উইকেটে ৪৩ রান নিয়ে খেলা শুরু করে তুলনামূলক দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন টেম্বা বাভুমা ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। দিনের তৃতীয় ওভারে স্টার্কের বলে জোড়া বাউন্ডারি মারেন বাভুমা।
এক ওভার পর এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে বাভুমাকে আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান প্রোটিয়া অধিনায়ক। দিনের প্রথম ঘণ্টায় আর বিপদ ঘটতে দেননি দুই ব্যাটসম্যান। ১৩ ওভারে দুজন মিলে যোগ করেন ৪৩ রান।
পানি বিরতির পর আর টিকতে পারেননি বাভুমা। কামিন্সের বলে কাভারে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ৬৪ রানের জুটি থামান মার্নাস লাবুশেন। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৮৪ বলে ৩৬ রান করে ফেরেন বাভুমা।
কাইল ভেরেইনাকে নিয়ে প্রথম সেশনের বাকিটা কাটিয়ে দেন বেডিংহ্যাম। বিরতির আগে শেষ ওভারে বাউ ওয়েবস্টারের বলে 'হ্যান্ডলিং দা বল' উইকেটের আবেদন হয় বেডিংহ্যামের বিপক্ষে। তবে আম্পায়াররা বলটি 'ডেড' বিবেচনা করায় বেঁচে যান মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর ফিরে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন কামিন্স। মাত্র ৮.১ ওভারের মধ্যে ১৭ রানে বাকি ৫ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ৪ রান খরচ করে এর ৪টিই নেন কামিন্স। অন্যটি হয় রান আউট।
ছয় নম্বরে নেমে লড়াই করা বেডিংহ্যামের ব্যাট থেকে আসে ৬ চারে ১১১ বলে ৪৫ রান। ৩৯ বলে ১৩ রান করেন ভেরেইনা।
কামিন্সের কীর্তিময় বোলিংয়ে বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে ইতিবাচক শুরুরই আভাস দেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার। প্রথম দশ ওভারে কোনো উইকেট পড়তে দেননি লাবুশেন ও উসমান খাওয়াজা।
টানা ষষ্ঠ ওভার করতে এসে ২৮ রানের জুটি ভাঙেন রাবাদা। মাত্র ৬ রানে কট বিহাইন্ড হন খাওয়াজা। একই ওভারে ক্যামেরন গ্রিন ধরা পড়েন তৃতীয় স্লিপে। বিপদে পড়ে চা বিরতিতে যায় অস্ট্রেলিয়া।
শেষ সেশনের শুরুতে চাপ আরও বাড়ে তাদের। মার্কো ইয়ানসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২২ রান করা লাবুশেন। স্টিভেন স্মিথকে এবার বেশি দূর যেতে দেননি এনগিডি। সোজা যাওয়া বল ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
ট্রাভিস হেড, বাউ ওয়েবস্টার ও প্যাট কামিন্সও হতাশ করলে মাত্র ৭৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে একশর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
স্টার্ককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন কেয়ারি। ভাগ্যের সহায়তাও অবশ্য পান তারা। বেশ কয়েকটি বল ব্যাটের কানা ছুঁয়েও অল্পের জন্য যায়নি স্লিপ ফিল্ডারদের হাতে। এছাড়া আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে নিজেঁকে বাঁচান কেয়ারি।
দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৬১ রানের জুটি। দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বিদায় নেন ৪৩ রান করা কেয়ারি। রাবাদার বলে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
রিভিউ নিয়ে লাভ হয়নি কিপার-ব্যাটসম্যানের। 'আম্পায়ার্স কলের' কারণে ফিরতে হয় ড্রেসিং রুমে।
স্টার্ককেও আউট করার সম্ভাবনা জাগান বোলাররা। রাবাদার বলে ক্যাচ ছেড়ে দেন কিপার ভেরেইনা। আর দিনের শেষ ওভারে ভিয়ান মুল্ডারের বলে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি ইয়ানসেন।
দিন শেষে ৪৭ বলে ১৬ রানে অপরাজিত স্টার্ক। তার সঙ্গী লায়ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২১২
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: আগের দিন (৪৩/৪) ৫৭.১ ওভারে ১৩৮ (বাভুমা ৩৬, বেডিংহ্যাম ৪৫, ভেরেইনা ১৩, ইয়ানসেন ০, মহারাজ ৭, রাবাদা ১, এনগিডি ০*; স্টার্ক ১৩-৩-৪১-২, হেইজেলউড ১৫-৫-২৭-১, কামিন্স ১৮.১-৬-২৮-৬, লায়ন ৮-৩-১২-০, ওয়েবস্টার ৩-০-২০-০)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ৪০ ওভারে ১৪৪/৮ (লাবুশেন ২২, খাওয়াজা ৬, গ্রিন ০, স্মিথ ১৩, হেড ৯, ওয়েবস্টার ৯, কেয়ারি ৪৩, কামিন্স ৬, স্টার্ক ১৬*, লায়ন ১*; রাবাদা ১১-০-৪৪-৩, ইয়ানসেন ১২-৩-৩১-৩, মুল্ডার ৬-০-১৪-১, এনগিডি ৯-০-৩৫-৩, মহারাজ ২-০-১০-০)