Published : 24 Jun 2024, 03:12 PM
উৎসবের বাদ্যি থেমে গিয়ে অ্যান্টিগায় তখন বাজছে বিদায়ের রাগিনী। গ্যালারি ভরা দর্শক মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন আশাভঙ্গের বেদনাকে সঙ্গী করে। দেশের মাঠে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেছে সেমি-ফাইনালে ওঠার আগেই। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদেরও মন ভার। তবে হতাশার সেই আবহেও গর্বের উপকরণ খুঁজে পাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল।
র্যাঙ্কিংয়ে তলানির দিক থেকে গত কিছুদিনে অনেকটা ওপরে উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। এবারের বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানের দ্বীপ থেকে দ্বীপে এই দলকে ঘিরে দেখা গেছে প্রবল আগ্রহ। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও এই দুটি তৃপ্তিকে সঙ্গী করে সামনে ছুটতে চান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
একাধিক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী প্রথম দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার দেশের মাঠে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু তা ভেস্তে গেছে নক আউট পর্বের আগেই। গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচের সবকটি জিতলেও সুপার এইটে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি তারা। ইংল্যান্ডের কাছে হারার পর সোমবার উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে নিশ্চিত হয় তাদের বিদায়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারালেও সেই ধাক্কা সামাল দিতে পেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েছিলেন কাইল মেয়ার্স ও রোস্টন চেইস। কিন্তু এরপরই ভেঙে পড়ে ইনিংস। ১৩৫ রানের পুঁজি নিয়ে বোলাররা লড়াই করলেও ম্যাচ জিততে পারেনি। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক দায় দিলেন ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই।
“ছেলেদেরকে কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা শেষ পর্যন্ত লড়েছে। ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে এই পারফরম্যান্সকে ভুলে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমরা। দুই দলই একই উইকেটে ব্যাট করেছে। অবশ্যই ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেট সহজ ছিল না, বিশেষ করে নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য। মাঝের ওভারগুলোতে আমরা ঝাঁক ধরে উইকেট হারিয়েছি। টুর্নামেন্টে প্রথমবার এভাবে একসঙ্গে এতগুলো উইকেট হারালাম। এরকম হলে সবসময়ই তা ব্যাটিং দলের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।”
“বোলিং দারুণ ছিল। ১৩০ রানের (১৩৫) পুঁজি পাওয়ার পর মাঝবিরতিতে আমরা বলেছি, নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দেব। যা হওয়ার, হবে। ছেলেদেরকে কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা বিশ্বাস রেখেছে।”
সেই বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত জয়ে প্রতিফলিত হয়নি। তবে বিশ্বকাপের ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়ছেন না পাওয়েল। বরং গত এক বছরে পেছন ফিরে তাকিয়ে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন প্রেরণার ছবি।
“আমরা বিশ্বকাপ জিতিনি, সেমি-ফাইনালে উঠতে পারিনি। তবে আমার মনে হয়, বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে… গত ১২ মাস বা এরকম সময়ে যে মানের ক্রিকেট আমরা খেলেছি, তা ছিল প্রশংসনীয়। দলকে সেই কৃতিত্ব দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বর থেকে ৩ নম্বরে উঠে আসা মানে দুর্দান্ত ব্যাপার।”
“আমরা বিশ্বকাপ জিতিনি, তবে অনেক উন্নতি হয়েছে। উইন্ডিজের ক্রিকেট ঘিরে ক্যারিবিয়ানে এখন আবার অনেক উত্তেজনা ফিরে এসেছে। গত এক বছরে দারুণ কিছু কাজ আমরা করতে পেরেছি।”
মাঠ থেকে মাঠে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট ঘিরে যে কৌতূহল, উৎসাহ ও উৎসবের ছবি দেখা গেছে, সেটিকেও বড় প্রাপ্তি মানছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
“এটা (দর্শক সমর্থন) ছিল দারুণ। যে সব ভেন্যুতে আমরা খেলেছি, সামাজিক মাধ্যমে যত লাইক এবং এই ধরনের যা কিছু আমাদেরকে লোকে উপহার দিয়েছে, দল হিসেবে আমরা এসবের প্রশংসা করি। ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে ঘিরে সেই চর্চা ফিরে আসতে দেখাটা দারুণ, কারণ আমরা জানি কত আগে এটা মৃত হয়ে গিয়েছিল।”
“এখন লোকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ঘিরে আগ্রহী হচ্ছে। এখন জাতীয় সঙ্গীতের সময় আমরা ক্রিকেটাররা কিছু একটা অনুভব করি। আমার মনে হয়, এটা সঠিক পথেই এগোচ্ছে।”
বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় তাই দমে না গিয়ে প্রাপ্তিগুলোকে সঙ্গী করে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে চান পাওয়েল।
“এখন কাজ শুরু এখান থেকেই। দল হিসেবে একসঙ্গে একতাবদ্ধ থেকে, আঁটসাঁট থেকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের এবং আশা করি, স্রেফ আশা করি র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির পালা ধরে রেখে ক্যারিবিয়ার মানুষদের গর্বিত করতে পারব।”