Published : 30 Jan 2025, 10:15 PM
ম্যাচের ভাগ্য তখন গড়া হয়েই গেছে। মধুর এক লড়াই চলছিল চিটাগংয়ের দুই পেসারের মধ্যে। পাঁচ উইকেটে হবে কার! সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম, দুজনেরই তখন উইকেট চারটি করে। খালেদের সুযোগ ছিল হ্যাটট্রিক করে ৫ উইকেট পূর্ণ করার। কিন্তু পারেননি তিনি। পরের ওভারে ৫ উইকেটের সুযোগ পেয়ে যান শরিফুল। তবে শেষ পর্যন্ত পারলেন না তিনিও। বরং নিজের বলে ফিল্ডিং করে তার সরাসরি থ্রোয়ের রান আউটে পতন হলো শেষ উইকেটের। দুই বোলারই শেষ করলেন চার উইকেট করে নিয়ে।
তাতে অবশ্য আক্ষেপ থাকার কথা নয় দুজনের কারও। মূল লক্ষ্য তো অর্জন হয়েছে! সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৯৬ রানে বিধ্বস্ত করেছে চিটাগং কিংস। এই জয় চিটাগংকে পৌঁছে দিয়েছে প্লে-অফে।
প্রায় এক যুগ পর বিপিএলে এসেই এই সাফল্য পেল দলটি। শনিবার ফরচুন বরিশালকে হারাতে পারলে শীর্ষ দুইয়ে থেকে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলার সুযোগও মিলবে তাদের।
সিলেটের জন্য শেষ ম্যাচটি গোটা মৌসুমে তাদের পারফরম্যান্সের প্রতীকী। ১২ ম্যচে স্রেফ দুটি জয় নিয়ে তলানিতে থেকে আসর শেষ করল ২০২৩ বিপিএলের রানার্স আপ দলটি।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ২০ ওভারে ১৯৬ রান তুলে চিটাগং ১০০ রানে গুটিয়ে দেয় সিলেটকে।
স্রেফ ৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ শরিফুল ইসলাম। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে সবচেয়ে কম রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এটি।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার জোর দাবিদার ছিলেন খালেদও। এমনিতে ‘অলরাউন্ডার’ পরিচয় তার নেই। তবে নিজের মূল কাজ বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার আগে ব্যাটিংয়ে ১২ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ক্যামিও খেলেছেন তিনি এ দিন।
পারভেজ ১ ক্লার্ক ১
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চিটাগং প্রথম তিন ওভারে হারায় দুই উইকেট। আগের ম্যাচে ৪১ রানের ইনিংস খেলে ফর্মে ফেরার আভাস দেওয়া পারভেজন হোসেন ইমন আবার মিইয়ে যান দ্রুতই। ১ রান করে আউট হন তিনি তানজিম হাসান সাকিবের প্রথম ওভারেই।
তানজিম পরের ওভারেই বিদায় করেন চট্টগ্রামের বড় ভরসা গ্রাহাম ক্লার্ককে (১)। সপ্তাহ দুয়েক আগে চট্টগ্রামে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা ইংলিশ ব্যাটসম্যান পরের ছয় ইনিংসে আর ফিফটির দেখা পেলেন না।
নাফের ঝলক, মিঠুনের দ্যুতি
জোড়া উইকেটের ধাক্কার মধ্যই পাল্টা আক্রমণ চালান আসরে প্রথমবার খেলতে নামা ওপেনার খাওয়াজা নাফে। প্রথম উইকেটের পতনের পরপর ছক্কা মারেন তিনি রুয়েল মিয়াকে, দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর তানজমের ওই ওভারেই মারেন ছক্কা ও চার।
পরের দুই ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে আরও দুটি ছক্কা। ৩৫ রান করে ফেলেন তিনি ১৪ বল খেলেই।
অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ক্রিজে যাওয়ার পর নতুন গতি পায় দলের ইনিংস। চার-ছক্কা আসতে থাকে নিয়মিত। দশম ওভারে নাহিদুলকে ইসলামের বলে মিঠুনের টানা দুটি ছক্কায় চিটাগংয়ের রান পেরিয়ে যায় একশ।
নাফে ফিফটিতে পা রাখেন ২৭ বলে। ২০২৩ বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে তিন ম্যাচ খেলে তার মোট রান ছিল ১৩। পাকিস্তানের ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এবার প্রথম সুযোগে ছাপ রাখলেন তার সামর্থ্যের।
৫ ছক্কায় ৩০ বলে ৫২ রান করে নাফের ইনিংস শেষ হয় সামিউল্লাহ শিনওয়ারির শর্ট বলে ছক্কা মারার চেষ্টায়।
তানজিম আক্রমণে ফিরে থামান মিঠুনকে। চিটাগং অধিনায়ক তিন ছক্কায় করেন ৩৮ বলে ৫২।
এবারের আসরে তার প্রথম ফিফটি এটি। আগের ১০ ইনিংসের ছয়টিতে ২০ ছুঁয়েও পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে পারেননি।
নাফে-মিঠুনের জুটিতে ৯৪ রান আসে ৫১ বলে।
শামীম-খালেদের ঝড়ো জুটি
চিটাগংয়ের আগের ম্যাচের নায়ক হায়দার আলি এবার ফেরেন কেবল ৯ রান করেই। রাহাতুল ফেরদৌস আউট হয়ে যান একটি চার মেরে।
চিটাগংয়ের রানের গতি তাতে কমে যায় কিছুটা। কোদশ থেকে ষোড়শ, এই ছয় ওভারে রান ওঠে কেবল ৩৪।
তবে শেষ দিকে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে তা পুষিয়ে দেন শামীম হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। দুজনের জুটিতে আসে ৩০ বলে ৬১ রান।
২৩ বলে ৩৮ রান করে শামীম ফেরেন শেষ ওভারে।
চমকে দেন খালেদ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ছিল ১৪ রান। সেটিকে ছাড়িয়ে দুটি করে চার ও ছক্কায় করেন তিনি ১৩ বলে ২৫।
চিটাগং পৌঁছে যায় দুইশ রানের কাছে।
সিলেটের আত্মসমপর্ণ
এবারের বিপিএলে সিলেটের যা অবস্থা, ১৯৭ রানের লক্ষ্য তাদের নাগালের বাইরে এমনিতেই। শেষ ম্যাচে উজ্জীবিত কোনো পারফরম্যান্স তারা দেখাতে পারেননি। দলের কোনো ব্যাটসম্যান ২০ রানও ছুঁতে পারেননি।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার জাওয়াদ আবরার বিপিএল অভিষেকে ২ রান করে শরিফুলের বল টেনে আনেন স্টাম্পে। এরপর একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে দ্রুতই।
১২ বলে ১৯ রান করে আউট হন জাকির হাসান। ১৭ রান করতে ২৩ বল খেলেন জাকের আলি। ধুঁকতে ধুঁকতে ১০০ ছুঁয়েই শেষ সিলেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১৯৬/৮ (নাফে ৫২, পারভেজ ১, ক্লার্ক ১, মিঠুন ৫২, হায়দার ৯, শামীম ৩৮, রাহাতুল ৪, খালেদ ২৫*,শরিফুল ০; তানজিম ৪-০-৩৭-৩, রুয়েল ৪-০-৪২-২, সুমন ৪-০-৩০-১, নাহিদুল ৪-০-৪২-০, শিনওয়ারি ৪-০-৩৬-২)।
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৫.২ ওভারে ১০০ (জাওয়াদ ২, রনি ১৭, জাকির ১০, জোন্স ৩, জাকের ১৭, নাহিদুল ১৪, আরিফুল ১১, তানজিম ০, শিনওয়ারি ৪*, রুয়েল ০, সুমন ২; ফার্নান্দো ২-০-১৬-০, শরিফুল ৩.২-০-১-৫-৪, আলিস ৩-০-২০-০, খালেদ ৩-০-৩১-৪, রাহাতুল ৪-০-১৯-১)।
ফল: চিটাগং কিংস ৯৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শরিফুল ইসলাম।