শ্রীলঙ্কা-নিউ জিল্যান্ড
Published : 26 Sep 2024, 07:39 PM
মিচেল স্যান্টনারকে লং-অফে ঠেলে সিঙ্গেল নেওয়ার পথেই দুই হাত মেলে উদযাপন শুরু করলেন দিনেশ চান্দিমাল। তিন অঙ্কের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দিলেন হুঙ্কার। জীবন পেয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলে অপরাজিত অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও কামিন্দু মেন্ডিস। নিউ জিল্যান্ডের সুযোগ হাতছাড়ার মহড়ায় দিনটি দারুণ কাটল শ্রীলঙ্কার।
গলে দুই দলের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে লঙ্কানদের রান ৩ উইকেটে ৩০৬।
অভিজ্ঞ ম্যাথিউস খেলছেন ৬ চারে ৭৮ রানে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কামিন্দু অপরাজিত ৫১ রান নিয়ে।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৮ টেস্টের সবগুলোতেই পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেন কামিন্দু। সুদীর্ঘ টেস্ট ইতিহাসে এই কীর্তি নেই আর কারও। প্রথম ৭ টেস্টে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে এখন পাকিস্তানের সাউদ শাকিল।
স্বাগতিকদের রান তিনশ ছাড়ানোর পথে বড় অবদান রাখা চান্দিমাল করেছেন ১৫ চারে ১১৬ রান। ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানের টেস্টে এটি ষোড়শ সেঞ্চুরি, কিউইদের বিপক্ষে প্রথম। টেস্টে সবশেষ অষ্টম ইনিংসে এটি তার চতুর্থ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। ৪ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ফিফটি করতে পারেননি দিমুথ কারুনারাত্নে।
অথচ, দিনটি হতে পারত নিউ জিল্যান্ডের। কিন্তু হতশ্রী ফিল্ডিংয়ে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। এদিন তারা পাঁচটি সুযোগ নষ্ট করেছে। দুইবার করে জীবন পেয়েছেন কারুনারাত্নে ও ম্যাথিউসকে, একবার বেঁচে গেছেন কামিন্দু। আরও কিছু হাফ-চান্স তো ছিলই।
দিনের শুরুতে ভালো কিছুর আভাসই দেয় কিউইরা। ঘাসহীন উইকেটে নতুন বল সুইং কাজে লাগিয়ে পাথুম নিসাঙ্কাকে প্রথম ওভারেই কট বিহাইন্ড করেন টিম সাউদি। চতুর্থ ওভারে পেতে পারত তারা আরেকটি উইকেট। কিন্তু উইল ও’রোকের বলে ৫ রানে থাকা কারুনারাত্নের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি স্লিপে থাকা ড্যারিল মিচেল।
ত্রয়োদশ ওভারে ফের বেঁচে যান কারুনারাত্নে, ১৭ রানে। এজাজ প্যাটেলকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি টম ব্লান্ডেল, সুযোগ হাতছাড়া হয় স্টাম্পিংয়ের।
এরপর চান্দিমালকে নিয়ে দলকে টানেন কারুনারাত্নে। জমে ওঠে তাদের জুটি। চান্দিমাল কিছুটা দ্রুত রান বাড়ালেও কারুনারাত্নে ছিলেন সাবধানী। তাদের ব্যাটে প্রথম সেশন পার করে দেয় শ্রীলঙ্কা। ততক্ষণে ৭৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন চান্দিমাল।
বিরতির পর ৪টি চারে ৪৬ রান করা কারুনারাত্নে রান আউট হলে ভাঙে ১২২ রানের জুটি। এখানেও তালগোল পাকিয়ে ফেলে নিউ জিল্যান্ড। মিডউইকেটে ঠেলে দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে যান কারুনারাত্নে। কিন্তু চান্দিমাল ক্রিজেই থাকায় ফিরে যেতে হয় তাকে। কিপারের কাছে ঠিকঠাক থ্রো করতে পারেননি গ্লেন ফিলিপস। শর্ট লেগে থাকা টম ল্যাথাম বল ধরে ভেঙে দেন স্টাম্প।
কিছুক্ষণ পর ও’রোক জীবন দেন ১২ রানে থাকা ম্যাথিউসকে। এই পেসার ‘ওভারস্টেপ’ করায় কট বিহাইন্ড হয়েও ‘নো’ বলের কারণে বেঁচে যান লঙ্কান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কয়েক ওভার পর তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পান চান্দিমাল, ১৭১ বলে। গলে ষষ্ট সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় সেশন শেষ করেন তিনি।
চা বিরতির পর ১১১ বলে ৪৪তম টেস্ট ফিফটিতে পা রাখেন ম্যাথিউস। কয়েক ওভার পর বিদায় নেন চান্দিমাল। ফিলিপসকে এগিয়ে এসে খেলে বলের লাইন মিস করে হন বোল্ড। শেষ হয় তার ২০৮ বলের চমৎকার ইনিংস। ভাঙে ম্যাথিউসের সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি।
ক্রিজে গিয়েই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দেন কামিন্দু। নিজের জোনে পেলেই বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে থাকেন তিনি। আরেক প্রান্তে দেখেশুনে রান বাড়ান ম্যাথিউস। দিনের শেষ দিকে এই দুইজনকে পরপর দুই ওভারে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন ও’রোক।
৮৪তম ২৬ রানে থাকা কামিন্দুকে ফেরাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। এবারও স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন মিচেল। এক ওভার পর স্লিপে ম্যাথিউসের ক্যাচ ছেড়ে চান দেন ল্যাথাম। তখন ৬৮ রানে খেলছিলেন ম্যাথিউস।
দিনের শেষ ওভারে স্যান্টনারকে চার মেরে ৫৩ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন কামিন্দু। তার ৫৬ বলের অপরাজিত ইনিংসটি গড়া ১ ছক্কা ও ৮ চারে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩০৬/৩ (নিসাঙ্কা ১, কারুনারাত্নে ৪৬, চান্দিমাল ১১৬, ম্যাথিউস ৭৮*, কামিন্দু ৫১*; সাউদি ১২-১-৫৪-১, ও’রোক ১৪-১-৬৬-০, এজাজ ২৭-৩-৯২-০, স্যান্টনার ২০-৩-৫১-০, ফিলিপস ১৬-২-৩৩-১, রাভিন্দ্রা ১-০-১-০)