নিউ জিল্যান্ড-ইংল্যান্ড সিরিজ
Published : 29 Nov 2024, 01:16 PM
আকাশে তখন কালো মেঘের আনাগোনা। ইংল্যান্ডের ড্রেসিং রুমও গুমোট। স্কোরবোর্ডে রান ৩ উইকেটে ৪৫। হ্যারি ব্রুক ক্রিজে গেলেন তখন। সময় যত গড়াল, কালো মেঘ ফুঁড়ে ক্রাইস্টচার্চে দেখা গেল রোদের ঝিলিক। ক্রমে ঝলমল হয়ে উঠল ব্রুকের ব্যাটও। দিন শেষে সেই ব্রুক মাঠ ছাড়লেন অপরাজিত থেকে ব্যাট উঁচিয়ে। গোটা গ্যালারি তাকে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাল করতালিতে।
দিনের আলো তখনও মরে যায়নি। তবে নিউ জিল্যান্ডের ড্রেসিং রুমে নেমে এসেছে আঁধার। হয়তো আত্মজিজ্ঞাসার পালা চলছিল কিউই ক্রিকেটারদের। ব্যাটে-বলে যেমনই হোক, ফিল্ডিংয়ে যুগের পর যুগ ধরেই নিউ জিল্যান্ড অসাধারণ। সেই দল একদিনেই হাতছাড়া করল ছয়টি পরিষ্কার সুযোগ। অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দিন শেষ করা ব্রুক একাই জীবন পেলেন চার-চারবার!
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ৩৪৮ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করা নিউ জিল্যান্ড বোলিংয়ে নেমে চেপে ধরেছিল ইংল্যান্ডকে। কিন্তু ক্যাচ মিসের মহড়ায় তারা আলগা করেছেন ফাঁস। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইংলিশরা এখন লিড নেওয়ার পথে। দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা ৫ উইকেটে ৩১৯ রান করে।
দিন শেষে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১৬৩ বলে ১৩২ রান করে অপরাজিত ব্রুক। ২২ টেস্টে তার সপ্তম সেঞ্চুরি এটি, এর মধ্যে দেশের বাইরেই ছয়টি। নিউ জিল্যান্ডে তিন টেস্টে দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে তার গড় এখন ১১৫.২৫!
তার ইনিংস শেষ হতে পারত অনেক আগেই। সুযোগ তিনি দিয়েছেন বারবার। বেঁচে গেছেন ১৮, ৪১, ৭০ ও ১০৬ রানে।
ছয়ে নেমে অলিভার পোপ করেছেন ৯৮ বলে ৭৭। ব্যতিক্রমী হিসেবে তিনিই জীবন পাননি। বরং অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিয়ে তাকে ফিরিয়েছেন গ্লেন ফিলিপস।
তবে ২৩ রানে জীবন পেয়ে ৪৬ রান করেছেন বেন ডাকেট। ৩০ রানে রক্ষা পেয়ে ৩৭ রানে অপরাজিত রয়ে গেছেন বেন স্টোকস।
নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম একাই ছেড়েছেন তিনটি ক্যাচ। একটি করে ক্যাচ ছেড়েছেন ফিলিপস, ডেভন কনওয়ে ও কিপার টম ব্লান্ডেল।
সকালে ৮ উইকেটে ৩১৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। ৮ ওভারে ২৯ রান যোগ করে শেষ হয় তাদের ইনিংস।
৪১ রানে দিন শুরু করা ফিলিপস অপরাজিত থেকে যান ৫৮ রানে।
এ দিনের দুটিসহ চার উইকেট নিয়ে শেষ করেন ব্রাইডন কার্স। তার তিন ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং এটি।
আগের দিন চার উইকেট শিকার করা স্পিনার শোয়েব বাশির এ দিন বোলিংই পাননি। সাকিব আল হাসানের ৫০ রানে ৪ উইকেট তাই ক্রাইস্টচার্চে স্পিনে সেরা বোলিং এখনও।
মেঘলা আকাশের নিচে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডও বিপাকে পড়ে যায়। সবুজাভ উইকেটে বেশ মুভমেন্ট আদায় করে নেন কিউই পেসাররা। ওপেনার জ্যাক ক্রলি বিদায় নেন ১২ বলে কোনো রান না করেই।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রলির বাজে রেকর্ড তাতে নাজুক হলো আরও। কিউইদের সঙ্গে ১৬ ইনিংস খেলে কোনো ফিফটি নেই তার, দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন কেবল পাঁচবার। ব্যাটিং গড় ১০.৪৩।
কঠিন কন্ডিশনে অভিষেকে তিনে নামার চ্যালেঞ্জে প্রথম সুযোগে ব্যর্থ জ্যাকব বেথেল। দারুণ ডেলিভারিতে তাকে ফিরিয়েই প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান ন্যাথান স্মিথ। অভিষিক্ত পেসার ওই ওভারেই ধরে ফেলেন আরেকটি বড় শিকার। দুটি ‘নো’ বলের পর ফিরিয়ে দেন তিনি জো রুটকে!
১৫০তম টেস্ট খেলতে নামা রুট স্টাম্পে টেনে আনেন বাইরের বল। অসাধারণ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হলেন ৩৯ ইনিংস পর।
লাঞ্চের ঠিক আগে ওই দুই উইকেট হারিয়ে নড়বড়ে হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। ওপেনার বেন ডাকেট অবশ্য নিজের মতোই আগ্রাসী খেলছিলেন। লাঞ্চের পরও একইভাবে ছুটে ফিফটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ৪৬ রানে তাকে থামান উইল ও’রোক।
৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ইংল্যান্ড। ক্যাচগুলি না ছাড়লে বিপদ আরও বাড়ত ইংলিশদের। এতবার সুযোগ পেলে ব্রুকের মতো ব্যাটসম্যান তো নির্মমভাবেই তা কাজে লাগাবেন!
কিপিংয়ের জন্য তিন নম্বর থেকে দুই বছর পর ছয় নম্বরে নামা অলিভার পোপও দারুণ খেলতে থাকেন। গড়ে ওঠে বড় জুটি।
ব্রুক ফিফটি করেন ৬৫ বলে। ৬৯ রান করে টেস্ট ক্রিকেটে ২ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি।
ইনিংসের হিসেবে এই মাইলফলকে টেস্ট ইতিহাসের অষ্টম দ্রুততম তিনি (৩৬ ইনিংস)। তবে বলের হিসেবে তিনি দ্বিতীয় দ্রুততম। ২ হাজার ৩০০ বল খেলেই ২ হাজার রান হলো তার। সতীর্থ বেন ডাকেটের লেগেছিল ২ হাজার ২৯৩ বল।
তিন দফায় জীবন পেয়ে ব্রুকের শতরান আসে ১২৩ বলে। সেঞ্চুরির পরপর আরেকবার বেঁচে যান তিনি।
পোপের সেই সৌভাগ্য হয়নি। টিম সাউদির বলে কাট করেছিলেন তিনি, দারুণ গতিতে ছুটে যাচ্ছিল বল। গালিতে চোখের পলকে অনেকটা লাফিয়ে পুরো শরীর শূন্যে ভেসে এক হাতে অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্সে ক্যাচ নেন ফিলিপস।
জুটি থামে ১৮৮ বলে ১৫১ রানে।
কিউইদের শেষ সাফল্য সেটিই। জীবন পাওয়ার সুযোগে ব্রুক ও স্টোকস গড়ে তোলেন আরেকটি জুটি। দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন এই জুটির রান ৯৭।
৫ উইকেট নিয়ে লিড থেকে আর মাত্র ৩০ রান দূরে ইংল্যান্ড। নিউ জিল্যান্ড তাকিয়ে ৬ ওভার পরের দ্বিতীয় নতুন বলের দিকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯১ ওভারে ৩৪৮ (আগের দিন ৩১৯/৮) ( ফিলিপস ৫৮*, সাউদি ১৫, ও’রোক ০; ওকস ২০-৫-৭০-০, অ্যাটকিনসন ১৮-২-৬১-২, কার্স ১৯-১-৬৪-৪, স্টোকস ১৩-১-৫৯-০, বাশির ২০-১-৬৯-৪, বেথেল ১-০-৫-০)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৪ ওভারে ৩১৯/৫ (ক্রলি ০, ডাকেট ৪৬, বেথেল ১০, রুট ০, ব্রুক ১৩২*, পোপ ৭৭, স্টোকস ৩৭*; সাউদি ১৬-৪-৫৪-১, হেনরি ১৫-৪-৫০-১, স্মিথ ১৮-০-৮৬-০, ও’রোক ১৬-১-৮২-১, ফিলিপস ৯-০-৩৫-০)