Published : 15 May 2025, 06:28 PM
আগুনের জবাবে আগুন। চেপে বসা চাপকে পাল্টা জবাব। নুরুল হাসান সোহান দেখালেন, বিরুদ্ধ স্রোতে কীভাবে সাঁতার কাটতে হয়। ঝুঁকিরা চোখ রাঙাল, শঙ্কারা উঁকি দিল। কিন্তু রোমাঞ্চের পাল উড়িয়ে ছুটতে থাকলেন সোহান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান পৌঁছে গেলেন অসাধারণ আরেকটি শতরানের ঠিকানায়।
বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক। তার পরও অবশ্য খুব স্বস্তিতে নেই দল। তিনি ছাড়া ভালো করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটার। একটি জুটি ছাড়া হড়ে উঠেনি বড় কোনো বন্ধন।
সিলেটে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দল এগিয়ে আছে সাত রানে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের উইকেট বাকি দুটি।
৮ উইকেটে ২২৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে কিউইদের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৫৬ রানে। আগের দিনের চার উইকেটের সঙ্গে আরও দুটি উইকেট যোগ করে সৈয়দ খালেদ আহমেদ থামেন ৫৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইনিংসে ৫ উইকেটে স্বাদ পেলেন তিনি নবমবার।
দিন শেষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান ৮ উইকেটে ২৪৯।
৮১ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে গিয়ে প্রবল প্রতিআক্রমণ চালিয়ে দলকে এগিয়ে নেন সোহান। ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ৮৮ বলে ১০৭ রান করে আউট অধিনায়ক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার দ্বাদশ শতরান এটি।
বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান ২৫ রান ছাড়াতে পারেননি।
চার উইকেট শিকার করেন জশ ক্লার্কসন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আগের ২৮ ম্যাচে কখনোই ইনিংসে দুই উইকেটের বেশি পাননি এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সকালে শেষ দুই জুটিতে নিউ জিল্যান্ড খেলতে পারে আরও ঘণ্টাখানেক। যোগ করে ৩০ রান। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিচেল হে ও ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক দলকে পার করান আড়াইশ। নবম উইকেটে ৪৪ রান তোলেন দুজন।
পরপর দুই ওভারে এই দুজনকেই ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেন খালেদ। ২৮ রান করা ক্লার্ককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙার পাশাপাশি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্বিতীয় শতরানের আশায় থাকা মিচেল হে আউট হন ৮১ রানে। ৮ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস শেষ হয় ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার পর প্রথম আধ ঘণ্টা কেটে যায় নির্বিঘ্নেই। এবারের জাতীয় লিগে ৭০০ রান করা এনামুল হক শুরুর করে আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে। দুটি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি মুহাম্মাদ আব্বাসকে পুল করে। তবে তিনিই বিদায় নেন আগে। সেটিও চেনা ভঙ্গিতেই। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা নিয়ে ক্যাচ দেন কিপারকে (৩৭ বলে ২৪)।
৩৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর টপ অর্ডারের অন্যরাও ভালো করতে পারেননি। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার যেভাবে আউট হয়ে আসছেন জাকির হাসান ও মাহমুদুল হাসান জয়, এবারও তারা কাটা পড়েন সেভাবেই। স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে আলগা ড্রাইভ খেলে কিপারকে ক্যাচ দেন জাকির (১২)। জয় চার রানে জীবন পান গালিতে ক্যাচ দিয়ে। কিন্তু চারটি চারে ১৮ করে স্লিপে ক্যাচ দেন অফ সটাম্পের বাইরের বলে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দিয়ে আলোচনায় থাকা অমিত হাসানের শুরুটা ছিল সাবলীল। কয়েকটি ভালো ড্রাইভ ও ফ্লিক খেলেন তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের মতো বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। বাঁহাতি আব্বাসের লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে হুক করে ধরা পড়েন তিনি সীমানায় (২৮ বলে ২৪)।
৮১ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে দল তখন নড়বড়ে।
সেখান থেকে সোহান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের শতরানের জুটি। দুজনের রথ যদিও ছিল ভিন্ন, তবে মিলে যায় পথ। রান করার উপায়ই পাচ্ছিলেন না অঙ্কন। ২৪ বলে কোনো রান না পাওয়ার পর অন ড্রাইভে চার মেরে প্রথম রানের দেখা পান তিনি। সোহান শুরু থেকেই ছিলেন দুঃসাহসী।
প্রথম বলে ড্রাইভে দুই রান নিয়ে শুরু। একটু পরই তিনি চড়াও হন কিউইদের একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার ক্রিস্টিয়ান ক্লার্কের ওপর। শর্ট বলে হুক করে ছক্কা মারেন ফাইন লেগ দিয়ে, পরের বলে মারেন চার। এর পরের ডেলিভারিই আবার পুল শটে উড়িয়ে দেন ছক্কায়।
সেই যে শুরু হলো, আর থামাথামি নেই। অন সাইডে ঝাঁক ধরে ফিল্ডার রেখে শর্ট বল করে গেছে কিউইরা। সোহান পুল-হুক খেলে গেছেন। ঠিকমতো খেলতে পারেননি বেশ কয়েকবারই। কিন্তু দমে না গিয়ে চালিয়ে গেছেন। বল সামনে পেলে ড্রাইভ খেলেছেন। স্পিন আক্রমণে আসার পরও তাকে থামানো যায়নি।
৩৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে গিয়ে যেতে থাকেন সোহান। সঙ্গী অঙ্কনের রান তখন ৩৭ বলে ৫। চার রানে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার নিজের মতো সঙ্গ দিয়ে যান অধিনায়ককে।
ফিফটির পর সোহানকে একটু দমিয়ে রাখতে পেরেছিলেন কিউই ম্পিনাররা। তবে ৮০ ছুঁয়ে আবার ঝড় তোলেন তিনি। কিউইদের সেরা বোলার ক্লার্কসনকে বাউন্ডারি মারেন টানা দুটি। ৯০ ছোঁয়ার পর বাঁহাতি স্পিনার জেডন লেনক্সকে টানা দুই বলে একইরকম পুল শটে চার ও ছক্কা মেরে শতরানে পা রাখেন ৭৩ বলে।
১৩২ রানের জুটি ভাঙে অঙ্কনের বিদায়ে। ৭৯ বলে ২৫ রান করা ব্যাটসম্যান আউট হন অনেক বাইরের বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে।
সঙ্গীকে হারিয়ে পরের ওভারেই বিদায় নেন সোহান। ঝুঁকিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি খেলছিলেন, আউটও হন একই পথে। ক্লার্কের লেগ স্টাম্পে থাকা লেংথ বল স্কুপের মতো করে উড়িয়ে দেন। সীমানায় ক্যাচ নেন ক্লার্কসন।
পরে খালেদও বাজে শট খেলে আউট হলে ৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লোয়ার-অর্ডার নাঈম হাসান ও হাসান মুরাদ লড়াই করেন কিছুটা। দিনের শেষ সময়ে নাঈম বিদায় নেন ২০ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ‘এ’: (আগের দিন ২২৬/৮) ৭৫.২ ওভারে ২৫৬ (হে ৮১, ক্লার্ক ২৮, লেনক্স ০*; ইবাদত ১৭-২-৬০-১, খালেদ ২১.৬-৫৯-৬, মুরাদ ১৪-১-৪২-০, এনামুল ১০-১-৩২-৩, নাঈম ১২-১-৪৯-০, জয় ১-০-৩-০)।
বাংলাদেশ ‘এ’: ৬০ ওভারে ২৪৯/৮ (এনামুল ২৪, জাকির ১২, জয় ১৮, অমিত ২৫, অঙ্কন ২৫, সোহান ১০৭, নাঈম ২০, খালেদ ০, মুরাদ ১৩*, ইবাদত ১*, ক্লার্ক ১৪-১-৭৬-২, আব্বাস ৮-০-৪২-১, লেনক্স ১৩-২-৩২-২, ক্লার্কসন ১৫-৩-৪৪-৪, আশোক ১০-২-৫৫-১)।