Published : 02 Jun 2025, 07:57 AM
‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেব কোথা’- বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা অনেকটা এরকমই। একেক ম্যাচে একেক সমস্যায় পড়ছেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। একেক দিনে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে দলের নতুন নতুন জায়গায়। হোয়াইটওয়াশড হওয়ার ম্যাচে যেমন তার চোখে দায় বোলারদের।
তবে দায় যেটিরই হোক, ফলাফল তো আরেকটি পরাজয়। পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশড হয়ে সমর্থকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, প্রত্যায় জানালেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৯৬ রানের সংগ্রহ নিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। মোহাম্মদ হারিসের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে লক্ষ্যটাকে মামুলি বানিয়ে ১৬ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ করে ফেলে পাকিস্তান।
অথচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ২০১ রানের পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ দেয়নি স্বাগতিকরা। প্রথম ম্যাচে তবু কিছুটা লড়াই করলেও দ্বিতীয়টিতে অসহায় আত্মসমর্পন করে লিটনের দল।
পরাজয়ে সিরিজ শুরুর পর ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই বাজে পারফরম্যান্সের কথা বলেছিলেন লিটন। দ্বিতীয় ম্যাচ হারের পর শরিফুল ইসলামের চোটের পাশাপাশি ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
শেষ ম্যাচে দলের ব্যাটিংয়ে খুশি লিটন। এবার তিনি ম্যাচের পর আঙুল তুললেন বোলিং পারফরম্যান্সের দিকে।
“অবশ্যই (হতাশ)… আমরা ভালো বোলিং করিনি। গত দুই ম্যাচে ব্যাটিং আর ফিল্ডিংও ভালো করিনি। সম্ভবত এই ম্যাচে এই উইকেটে খুব ভালো ব্যাটিং করেছি।”
গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হারের পর লিটন বলেছিলেন, বোলারদের শারজাহ স্টেডিয়ামের মতো ছোট মাঠের কৌশল রপ্ত করতে হবে। পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশড হয়ে তিনি টের পেয়েছেন ভিন্ন ব্যাটসম্যানের জন্য ভিন্ন পরিকল্পনা সাজানোর প্রয়োজনীয়তা।
“এটি খুব ভালো উইকেট। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যানকে কীভাবে বোলিং করতে হয়, আমাদের শিখতে হবে। একেক ব্যাটসম্যানের একেক রকম শক্তি ও দুর্বলতা থাকে। আমাদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বোলিং করতে হবে।”
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসান। দুজন মিলে ৬৪ বলে গড়ে তোলেন ১১০ রানের জুটি। পাকিস্তানের মাঠে সফরকারী ওপেনারদের এটিই প্রথম শতরানের জুটি।
পারভেজ ৩৪ বলে ৬৬ ও তানজিদ ৩২ বলে ৪২ রান করে ফেরার পর আর কেউই ত্রিশ ছুঁতে পারেননি। ফলে শেষের ৫৬ বলে ৮৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
তৃতীয় উইকেটে জুটিতে বেধে দুইশ ছাড়ানোর আশা জাগান লিটন ও হৃদয়। দুজন মিলে ৩২ বলে যোগ করেন ৪৯ রান। তাদের কাছে দাবি ছিল ইনিংস শেষ করে আসার। কিন্তু স্কুপ করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান লিটন (১৮ বলে ২২)।
পরের ওভারে ১৮ বলে ২৫ রান করা হৃদয়ও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। দুই চারে যাত্রা শুরু করা শামীম হোসেন আর কিছু করতে পারেনি। শেষ দিকে জাকের আলি ও তানজিম হাসান একটি করে ছক্কা মারলে দুইশর কাছাকাছি যায় বাংলাদেশ। যা পরে যথেষ্ট হয়নি।
তবে অধিনায়কের মতে, দুই ওপেনারের পাশাপাশি দলের বাকিরাও দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের কাজটা করতে পেরেছেন।
“(পারভেজ হোসেন) ইমন ও (তানজিদ হাসান) তামিম খুব ভালো শুরু করেছে। শুধু তামিম ও ইমন নয়, বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের কাজটা করেছে।”
একের পর এক ম্যাচ হারলেও, সিরিজজুড়ে গ্যালারি থেকে দারুণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে তাদেরকে আনন্দের কোনো উপলক্ষ্য দিতে পারেননি লিটন, মিরাজরা।
সিরিজ শেষে বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলেন অধিনায়ক।
“দর্শক অসাধারণ ছিল। তারা সবাই সমর্থন দিচ্ছিল। দুই দলকেই সমর্থন দিয়েছে। খুব উপভোগ করেছে খেলা। আশা করি, পাকিস্তান আবার যখনই খেলবে, তারা মাঠে খেলা দেখবে।”
“আর বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে আমি সত্যিই দুঃখিত। আমরা কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। আশা করি, আমরা ঘুরে দাঁড়াব।”