Published : 21 May 2025, 06:39 PM
প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে একটি টেস্ট খেলার পর এই সংস্করণের বিবেচনায় আর সেভাবে আসেননি মোহাম্মদ নাঈম শেখ। এবার সেঞ্চুরি করে নির্বাচকদের একটি বার্তা দেওয়ার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসী সেই পথেই ছুটছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় আর দুর্দান্ত একটি ক্যাচ মিলিয়ে শেষ হয়ে গেল তার সেই সম্ভাবনা।
নাঈমের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী এনামুল হক উইকেট ছুড়ে ফিরলেন ফিফটির কাছাকাছি গিয়ে। সাইফ হাসান বাজে শটে আউট হলেন ফিফটি পেরিয়েই। থিতু হয়েও উইকেট বিলিয়ে দিলেন জাকির হাসান। স্কোরবোর্ডের চেহারা খারাপ নয়। কিন্তু আক্ষেপের খোরাক জোগাল চার ব্যাটসম্যানের আউট হওয়ার ধরন।
নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্টের প্রথম দিন শেষে মিরপুরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান ৪ উইকেটে ২২৫। বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনে খেলা হয়েছে স্রেফ ৫৭.৩ ওভার।
১০ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ৮২ রান করে ডিন ফক্সক্রফটের অসাধারণ ক্যাচে আউট হয়েছেন নাঈম। সাইফ ফিরেছেন ৫১ রানে, এনামুল ৪৮।
টস জিতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান জানান, আগে ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়ার লক্ষ্য তাদের। চতুর্থ ইনিংসে উইকেটে স্পিন ধরবে বলেও আশা তার। এক পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ গঠনেও সে ভাবনারই প্রকাশ।
আগের ম্যাচে নাঈম ছিলেন না দলে। এবার তিনি ফেরেন মাহমুদুল হাসাস জয়ের বদলে। ম্যাচ শুরু করেন তিনি প্রথম ওভারে চার মেরে। তবে তাকে ছাড়িয়ে পরে দ্রুতই ২০ রান পেরিয়ে যান এনামুল।
দশম ওভারে আক্রমণে আনা হয় অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার ডিন ফক্সক্রফটে। প্রথম ওভারেই তাকে ছক্কায় স্বাগত জানান এনামুল।
নাঈম প্রথম ঘণ্টায় ছিলেন বেশ সতর্ক। ১৫ ওভার শেষে তার রান ছিল ৩৮ বলে ১৩। প্রথম ওভারের পর আর বাউন্ডারিই পাননি।
তবে এরপর তিনি চড়াও হন স্পিনারদের ওপর। ফক্সক্রফটকে চার মারার পর বাঁহাতি স্পিনার জেডন লেনক্সকে এক ওভারেই মারেন চার ও ছক্কা।
নাঈমকে ফেরাতেই মূলত ফক্সক্রফটের অফ স্পিন চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিউই অধিনায়ক। কিন্তু এই বোলারকেই এক ওভারে টানা পাঁচটি বাউন্ডারি মারেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফিফটি করে ফেলেন ৬১ বলে।
এনামুল ততক্ষণে মন দিয়েছেন লম্বা ইনিংস খেলায়। ৩০ রানে অবশ্য জীবন পান শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েও।
লাঞ্চের আগেই ১১৩ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
লাঞ্চের পর নাঈম শুরু করেন দ্বিতীয় ওভারেই ফক্সক্রফটকে ছক্কা মেরে। কিউইরা প্রথম সাফল্য পায় আক্রমণে পেস ফিরিয়ে। কাজে দেয় শর্ট বলের কৌশল। সাবধানে এগোতে থাকা এনামুল বিদায় নেন পুল শট খেলার চেষ্টায়। তার ব্যাটের পেছনে লেগে বল যায় কিপারের কাছে (৯৭ বলে ৪৮)। জুটি থামে ১৩০ রানে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান কিউইদের বিপক্ষে এই সিরিজে দুই সংস্করণ মিলিয়ে ছয় ইনিংস খেলে কোনো ফিফটি করতে পারলেন না।
পরের ওভারেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন নাঈম। লেনক্সের বলে সুইপ করে চার মারার পরের বলেই উড়িয়ে মারেন তিনি। মিড অফ থেকে পেছন দিকে ছুটে লং অফ সীমানার কাছে গিয়ে সামনে ডাইভ দিয়ে বল মুঠোয় জমান ফক্সক্রফট।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর রানের গতিও কমে যায়। আগের ম্যাচে দুই ইনিংসেই ওপেন করা জাকির এবার নামেন চারে। প্রথম রানের দেখা পেতে ১৮ বল লাগে তার। সাইফের রান ৩২ বলে ৮। পরে লেনক্সকে ছক্কা মারার পর সাবলীল হয়ে ওঠেন তিনি। একটু পর এই বাঁহাতি স্পিনারের এক ওভারেই ছক্কা মারেন সাইফ ও জাকির।
জমে ওঠার মুখেই থেমে যায় এই জুটি। অনিয়তিম লেগ স্পিনার ম্যাথু বয়েল আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলেই পান সাফল্য। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ খেলে উইকেট হারান জাকির (১৯)।
আগের ম্যাচে না খেলা সাইফ অবশ্য ততক্ষণে দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। লেনক্সকে আবার একই ওভারে চার ও ছক্কা মারেন তিনি। ৭৭ বলে আসে তার ফিফটি।
কিন্তু তিনিও উইকেট হারান নিজের ভুলে। জ্যাকারি ফোকসের স্লোয়ার শর্ট বলে দৃষ্টিকটূভাবে ক্যাচ দেন তিনি লং লেগে।
এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন অমিত হাসান ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। কিন্তু দুপুর তিনটার দিকে চারপাশ অনেকটা কালো হয়ে আসে, সাড়ে তিনটার দিকে নামে তুমুল বৃষ্টি। এরপর আর খেলা শুরু হতে পারেনি।
বাংলাদেশ ‘এ’: ৫৭.৩ ওভারে ২২৫/৪ (নাঈম ৮২, এনামুল ৪৮, সাইফ ৫১, জাকির ১৯, অমিত ১৬*, মাহিদুল ১*; ফোকস ১৩-২-৪০-২, লিস্টার ৮-১-২২-০, ফক্সক্রফট ১০.৩-০-৬৫-০, লেনক্স ১৮-৭-৭১-১, ফিলিপস ৪-০-১৬-০, বয়েল ৪-১-৯-১)।