Published : 30 May 2025, 09:45 PM
সেই ছেলেবেলায় ক্রিকেট মাঠে পদচারণা শুরু। সেই থেকে এতদিন মাঠের মানুষই ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। খেলা ছাড়ার পর কোচিং করিয়েছেন। এরপর এসিসি ও আইসিসিতে তার দায়িত্বও ছিল অনেকটা মাঠের ক্রিকেট সংক্রান্তই। প্রশাসক হিসেবে তার প্রথম দিনটিতেও থাকল সেই ছোঁয়া। বিসিবি সভাপতি হিসেবে নিজের লক্ষ্যের কথা বললেন ক্রিকেটের ভাষাতেই।
৩০ মে থেকে অক্টোবর- আপাতত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে আমিনুলের মেয়াদ সর্বোচ্চ হতে পারবে এটুকুই। এই স্বল্প সময়ে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয়, ভালোভাবেই জানেন সাবেক এই অধিনায়ক। তাই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো অল্প সময়ে কার্যকর কিছু করার ইচ্ছা তার।
অনেক বছর ধরেই তিনি থিতু অস্ট্রেলিয়ায়। আট দিন আগে বাংলাদেশে এসে শুক্রবার বিসিবি প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আমিনুল। বোর্ডের ষোড়শ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সারা দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন ৫৭ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার।
সেটি করার জন্য সময় অবশ্য বেশি পাবেন না বুলবুল। আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। আপাতত তার মেয়াদ তাই নির্বাচন পর্যন্তই।
এইটুকু সময়ে কতটুকু পার্থক্য তিনি গড়তে পারবেন, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক। সংবাদ সম্মেলনে আমিনুল উত্তরটা দিলেন তিন সংস্করণের উদাহরণ দিয়ে।
“যেহেতু সময় কম... আমরা জানি টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিনের হয়, ওয়ানডে হয় সাত ঘণ্টার। আমি একটা কুইক টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলতে এসেছি এখানে। একটা ভালো টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলব, যেটা আপনারা সবাই মনে রাখবেন।”
“চেষ্টা করব, ক্রিকেটটা যাতে সবাই খেলতে পারে, যাতে সবার খেলা হয়। আমাদের যেন একটা স্টেটমেন্ট হয়, ক্রিকেটটা সবার জন্য। এইরকম একটা কাজ শুরু করে দিয়ে যেতে চাই।”
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিসিবি সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর নিজের স্বাগত বক্তব্যে সারা দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানান আমিনুল।
“আজকে একটা বড় দায়িত্ব পেয়েছি। দায়িত্বটা হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট না, ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশে কী ক্রিকেট আছে, সেটা আমরা ঘুরে দেখে চেষ্টা করব আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
“আমি বিশ্বাস করি যে, শুধু ১১ জন ক্রিকেট খেলে না, দেশের সবাই ক্রিকেট খেলে। আপনারা (সংবাদমাধ্যম) খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য এবং ক্রিকেটের স্থায়িত্বের জন্য। তো আমি আশা করব যে আমরা একটা দল হিসেবে কাজ করব।”
নতুন দায়িত্ব নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আমিনুল বলেন, বেশ কিছু ‘এজেন্ডা’ নিয়ে কাজ করবেন তিনি। সেই পরিকল্পনায় ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ পাবে অগ্রাধিকার।
“আমরা যে পরিকল্পনা করছি, এক নম্বর হচ্ছে... আমাদের যে (আইসিসির) সহযোগী দেশের ক্রিকেটগুলো ছিল যেখানে শিখেছি, সেই আঙ্গিকে চেষ্টা করব বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করা বা একটা উপজেলার ছেলে কীভাবে ক্রিকেট খেলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মূলধারায় আসতে পারবে, সেই চেষ্টাটা করব।”
সবাইকে এক জোট হয়ে ক্রিকেটকে ভিন্ন উচ্চতায় তুলতে কাজ করার আহ্বান জানান সাবেক এই অধিনায়ক।
“আমরা ২৫ বছর ধরে টেস্ট খেলছি। ভালো পারফরম্যান্স করছি। আমাদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল বিশ্বকাপ জিতেছে, মেয়েদের দল এশিয়া কাপ জিতেছে। আমরা আরও ভালো কিছু আশা করতে পারি এবং আশা করব। সেটার সামর্থ্য আমাদের আছে। এজন্যই বললাম যে, আমরা সকলে মিলে একটা দল, আমরা সকলে বাংলাদেশকে সাপোর্ট করি। চলুন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভিন্ন উচ্চতায় তুলতে একসঙ্গে কাজ করি।”
২০০৩ সালে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পর কোচিংয়ে নাম লেখান আমিনুল। পরে পরিবার নিয়ে তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। তখনই এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়।
সেখান থেকে পরে গত এক দশক ধরে ডেভেলপমেন্টের নানা ভূমিকায় আইসিসিতে কাজ করছেন আমিনুল। সবশেষ আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
আইসিসি ও এসিসির বিভিন্ন দায়িত্বে সহযোগী সদস্য দেশগুলোতে ক্রিকেটের প্রচার-প্রসারে কাজ করেছেন আমিনুল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার নিজ দেশের ক্রিকেট উন্নতিতেও সফল হওয়ার আশা তার।
“আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি, আমার এই মুহূর্তে যে স্কিলসেট আছে, এটা একটা প্যাকেজ। আমি ছোট্ট দেশ তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান যেখানে ক্রিকেট খেলা হয় না তেমন (সেখানে কাজ করেছি) এবং পাকিস্তান, ইন্ডিয়াতে যেখানে খেলা হয়, তাদের সাথেও কাজ করি।”
“আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। ইনশাল্লাহ ব্যর্থ হব না। আমার অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করব বাংলাদেশের সঙ্গে। ক্রিকেটার হিসেবে আমি এখানে বসিনি, আমার যে দায়িত্বটা আছে, সেটা আমি ভালো করে পালন করার চেষ্টা করব।”
বিগত বছরগুলোতে অনেকবারই নানা সাক্ষাৎকারে দেশের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আমিনুল। তবে এর বেশিরভাগই ছিল কোচ কিংবা বোর্ডের ক্রিকেট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছা।
নিজের চাওয়ার চেয়ে এবার বেশিই পেয়েছেন আমিনুল। তবে বোর্ড সভাপতির চেয়ারে বসে সরাসরি ক্রিকেট উন্নতিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন না তিনি। এটি নিয়ে অবশ্য দুর্ভাবনা নেই আমিনুলের। বরং এটিই বেশি ভালো বললেন তিনি।
“আমার মনে হয়, এই দায়িত্বটা আরও ভালো। যেখানে আমাকে হয়তো কম কাজ করতে হবে, অভিজ্ঞ পরিচালকদের সাহায্য নিয়ে বেশি দিকনির্দেশনা দিতে হবে।”