Published : 31 May 2025, 09:05 AM
পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে ম্যান অব দা ম্যাচের ট্রফি নিয়ে এগিয়ে এলেন সাহিবজাদা ফারহান। সঞ্চালক রামিজ রাজার প্রশ্ন, “এই ট্রফির অর্থ আপনার কাছে কি?” সাহিবজাদার উত্তর, “রামিজ ভাই, আমার জন্য খুবই আবেগময় মুহূর্ত। খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি…।” তার কণ্ঠ একটু ধরে এলো বলতে বলতে। শুধু কথায় নয়, চোখেমুখেও ফুটে উঠল আবেগটুকু। এই দিনটির জন্য কত বছরের অপেক্ষা ছিল তার!
এই বছর এখনও পর্যন্ত ২০ ওভারে ক্রিকেটে হাজার রান করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। তবে দেশের হয়ে ছিল না বলার মতো কিছুই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেক প্রায় সাত বছর আগে। তখন ছিলেন সম্ভাবনায় এক টগবগে তরুণ। এখন বয়স ২৯ পেরিয়ে গেছে।
এতটা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে দেশের জার্সিতে কিছু করতে পারলেন। প্রথমবার ম্যাচ-সেরা হলেন পাকিস্তানের হয়ে। আবেগের উথালপাথাল ঢেউ তো তার মনে বইবেই!
বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শুক্রবার ছয় ছক্কায় ৪১ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে ম্যাচ-সেরা হন সাহিবজাদা।
পাকিস্তানের হয়ে এর আগে ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলে তার মোট রান ছিল ৮৬। সাত ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। সবশেষটি ছিল গত ডিসেম্বরে। সেই তিনি বোর জাতীয় দলে ফেরার ম্যাচেই উপহার দিলেন দুর্দান্ত ইনিংস।
পাকিস্তান ক্রিকেটে গত কয়েক মাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম নিঃসন্দেহে সাহিবজাদাই। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টির দুই আসরে যে রানের সুনামি বইয়ে দিয়েছেন!
ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ৫৯ বলে ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস দিয়ে শুরু। এরপর ৪৮ বলে ৬২, ৩৯ বলে ৭৬ রানের পর খেলেন ৭২ বলে অপরাজিত ১৬২ রানের ইনিংস, পাকিস্তানের যা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। এরপর এক ম্যাচে ব্যর্থ (১৩ বলে ২৬) হলেও পরের ম্যাচেই আবার ৭২ বলে ১৪৮!
ওই আসরে সাত ম্যাচে ১২১ গড় ও প্রায় ১৯০ স্ট্রাইক রেটে ৬০৫ রান করেন ৭ ইনিংসে। পরে পাকিস্তান সুপার লিগে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই উপহার দেন আরেকটি সেঞ্চুরি (৫২ বলে ১০৬)!
৯ ম্যাচের মধ্যেই করে ফেলেন ৪ সেঞ্চুরি। এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি শতরানের বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করে ফেলেন এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতেই!
এরপর আর সেঞ্চুরি এখনও পর্যন্ত করতে পারেননি। তবে তার ব্যাটে রানের ধারা থেমে নেই। পাকিস্তান সুপার লিগে ১৫২.২০ স্ট্রাইক রেট ৪৪৯ রান করে তিনিই রানের তালিকায় সবার ওপরে। এই আসরের পথেই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এ বছর হাজার রান স্পর্শ করেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ইনিংসটির পর এ বছর তার রান এখন ১ হাজার ১২৮। অথচ বছরের ৫ মাসও এখনও শেষ হয়নি! ব্যাট করেছেন কেবল ২০ ইনিংসে।
এই বছর তার ব্যাটিং গড় ৬২.৬৬, স্ট্রাইক রেট ১৭২.২১। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১১০টি চার ও ৬৭ ছক্কাও এসেছে তার ব্যাট থেকে।
রানের তালিকায় দুইয়ে থাকা নিকোলাস পুরান চার ইনিংস বেশি খেলেও রান করেছেন ৮২৬, তিনে থাকা এইডেন মার্করামের রান ৬ ইনিংস বেশি খেলেও ৭৮৫।
এমন রান জোয়ারেও তার মনে ছিল অপূর্ণতার ঢেউ। অবশেষে দেশের জার্সিতে ভালো একটি ইনিংস খেলে তার হৃদয় ভিজছে উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে।
“আমার জন্য খুবই আবেগময় মুহূর্ত। খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছি। কারণ পাকিস্তানের হয়ে প্রথম ম্যান অব দা ম্যাচ হলাম এবং ফেরার পর প্রথম ম্যাচে এভাবে ফিরতে পারলাম। ফেরার পর কাজটা কিছুটা কঠিন থাকেই। সব মিলিয়ে দারুণ খুশি আমি।”
এই সিরিজের আগে পাকিস্তানের হয়ে ৯টি ইনিংস খেললেও তা ছিল ৭ বছরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। দলে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে বারবার। এবার স্কোয়াডে ফিরলেও প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি। অবশেষে শুক্রবার মাঠে নামতে পারেন ফাখার জামান অসুস্থ থাকায়।
প্রতিবার প্রত্যাবর্তনের সময়টা মনে যে শঙ্কার ছায়া ভর করে, এবার তা করেনি বলেই জানালেন তিনি।
“(ব্যর্থতার) ভয়টা এখন শেষ হয়ে গেছে। কারণ, তৃতীয় বা চতুর্থবার দল ফিরলাম এবার নিয়ে। প্রতিবারই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে এসেছি। আমার মনে হয়, সেই ভয়টা এখন মরে গেছে। আজকে আপনাদেরও বোঝার কথা, ওই ভয় আর নেই।”
ঘরোয়া দুই আসরের অসাধারণ সাফল্যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সুরটা অবশষে ধরতে পেরেছেন সাহিবজাদা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই পথ অনুসরণ করেই পেয়েছেন রানের দেখা। এখানেই না থেমে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চান তিন সংস্করণ মিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৪ সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান।
“পিএসএলের আগে ঘরোয়া আরেকটিতে খেলেছি, এরপর পিএসএল খেলেছি, একটা ধারণা তাতে হয়ে গেছে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এভাবেই খেলতে হবে। এজন্যই আন্তর্জাতিক ম্যাচে এসে সফল হয়েছি।”
“তবে এখন উন্নতির পথে যেতে চাই। শট বাড়াতে আরও কাজ করতে চাই। আরও পরিশ্রম করব।”