Published : 30 Oct 2022, 07:48 PM
ভারতের দুই ওপেনারের প্রথম স্কোরিং শটেই হলো ছক্কা। তবে সেই গর্জন থেমে যেতে সময় লাগল না বেশি। উইকেটে গতি ও বাউন্সের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের কাঁপিয়ে দিলেন লুঙ্গি এনগিডি। এই পেসারের ছোবল সামলে প্রায় একার চেষ্টায় দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিলেন সূর্যকুমার যাদব। বোলাররা লড়াই করলেও বাজে ফিল্ডিংয়ে পেরে উঠল না ভারত। এইডেন মারক্রাম ও ডেভিড মিলারের দায়িত্বশীল দুটি ফিফটি গড়ে দিল ব্যবধান।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫ উইকেটে। পার্থ স্টেডিয়ামে ১৩৪ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ২ বল বাকি থাকতে।
এই জয়ে বাংলাদেশ ও ভারতকে টপকে দুই নম্বর গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমি-ফাইনালের পথে প্রোটিয়ারা এগিয়ে গেল আরেক ধাপ।
পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পর আসরে প্রথম হারের স্বাদ পেল ভারত। এই গ্রুপে একমাত্র দল হিসেবে অপরাজিত রইল দক্ষিণ আফ্রিকা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগির পর তারা হারাল বাংলাদেশ ও ভারতকে।
ভারতের ইনিংসের অর্ধেকের বেশি রান করেন সূর্যকুমার একাই। ৪০ বলে তিনি খেলেন ৬৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। বাকি ব্যাটসম্যানরা মিলে ৮০ বলে ৫৭! বাকি ৮ রান আসে ‘অতিরিক্ত’ থেকে।
৪৯ রানের মধ্যেই ভারত হারায় ৫ উইকেট। যার চারটিই নেন এনগিডি। এই পেসার ৪ ওভারে রান দেন ২৯। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।
জবাবে ৩ উইকেটে ২৪ রানের নড়বড়ে অবস্থানে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পথ দেখায় চতুর্থ উইকেটে মারক্রাম ও মিলারের ৭৬ রানের জুটি।
তিন-তিনবার আউট হতে হতেও বেঁচে গিয়ে ৪১ বলে ৫২ রান করেন মারক্রাম। শুরুতে সংগ্রাম করলেও ৪৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংসে জয় নিয়ে ফেরেন মিলার।
ভারত ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। মেডেন দিয়ে বোলিং শুরু করেন ওয়েইন পার্নেল। পরের ওভারে কাগিসো রাবাদাকে হুক করে ছক্কায় ওড়ান রোহিত শর্মা। পার্নেলের পরের ওভারে ছক্কা হাঁকান লোকেশ রাহুল।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসেই ভারত শিবিরে জোড়া ধাক্কা দেন এনগিডি। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে একাদশের বাইরে থাকা এই ডানহাতি পেসার নিজের ফিরতি ক্যাচে রোহিতকে ফেরানোর পর বাড়তি বাউন্সে বিদায় করেন রাহুলকে।
এ দিন একটি রেকর্ড অবশ্য রোহিত নিজের করে নেন ব্যাটিংয়ে নামার আগেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ডে শ্রীলঙ্কার তিলকারত্নে দিলশানকে (৩৫ ম্যাচ) পেছনে ফেলে এককভাবে চূড়ায় বসেন ভারত অধিনায়ক (৩৬ ম্যাচ)।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাহেলা জয়াবর্ধনের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙার হাতছানিতে খেলতে নেমে বিরাট কোহলি টানা দুটি চার মারেন এনগিডির পরের ওভারে। এতে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই তারকা।
ওই ওভারেই বাউন্সার পুল করতে গিয়ে রাবাদার অসাধারণ ক্যাচে বিদায় নেন কোহলি। প্রথম দুই ম্যাচে অপরাজিত ফিফটির এবার তার রান ১২।
জয়াবর্ধনের ১ হাজার ১৬ ছাড়াতে এখনও কোহলির দরকার ১৬।
আকসার প্যাটেলের জায়গায় দলে এসে দিপক হুডা খুলতে পারেননি রানের খাতা। এনগিডি আরেকটি বাউন্সারে দ্রুত বিদায় করেন হার্দিক পান্ডিয়াকে।
নবম ওভারে তখন ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে ভারত।
সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে দিনেশ কার্তিকের সঙ্গে ৫২ রানের জুটিতে দলের স্কোর একশ পার করেন সূর্যকুমার। জুটির ৪৩ রানই তার। কার্তিক ধুঁকতে ধুঁকতে আউট হন ১৫ বলে ৬ রান করে।
সূর্যকুমার ফিফটি করেন ৩০ বলে, আসরে তার টানা দ্বিতীয়। শেষের আগে ওভারে ক্যাচ থামে তার ৬ চার ও ৩ ছক্কায় গড়া ৬৮ রানের ইনিংস।
পার্নেল ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা পাওয়ার প্লেতে ২৪ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে শুরুর তিন ব্যাটসম্যানকে।
ইনিংসের দ্বিতীয় আর নিজের প্রথম ওভারে আর্শদিপ সিং ফিরিয়ে দেন কুইন্টন ডি কক ও রাইলি রুশোকে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা রুশো এবার খুলতে পারেননি রানের খাতা। এই সংস্করণে তার সবশেষ পাঁচ ইনিংসের দুটিতে সেঞ্চুরি ও বাকি তিনটিতেই শূন্য। আর এই তিনবারই তিনি আর্শদিপের শিকার। আগের দুটি বিশ্বকাপের আগে ভারতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে।
শুরু থেকে সংগ্রাম করতে থাকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ফেরেন ১৫ বলে একটি ছক্কায় ১০ রান করে। সবশেষ আট ইনিংসে তার সর্বোচ্চ এটিই!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপদ আরও বাড়তে পারত। নবম ওভারে মারক্রামকে রান আউট করার সুযোগ হারান রোহিত। তখন ২০ রানে খেলছিলেন ব্যাটসম্যান।
এরপর ৩৫ রানে মারক্রামের সহজ ক্যাচ ফেলেন কোহলি। পরের ওভারে এই ব্যাটসম্যানকে আরেকবার রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন রোহিত।
অবশেষে মারক্রামের ৬ চার ও এক ছক্কায় গড়া ৫২ রানের ইনিংস যখন থামল, জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ২৬ বলে ৩৪ রান। শেষ তিন ওভারে যেটি দাঁড়ায় ২৫ রানে।
অষ্টাদশ ওভারে অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের প্রথম দুই বলে টানা দুই ছক্কায় ব্যবধান কমিয়ে আনেন মিলার। মাঝে ট্রিস্টান স্টাবস বিদায় নিলেও শেষ ওভারে মিলার ৬ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দেন ভুবনেশ্বরকে পরপর দুটি চার মেরে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মুখোমুখি ছয়বারের দেখায় দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় জয় এটি। প্রথমটি ছিল সেই ২০০৯ আসরে। এর আগে-পরে চারবার হারের পর অবশেষে ধরা দিল আরেকটি জয়।
তিন ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট ৫। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ভারত, তিনে বাংলাদেশ। পরের তিনটি স্থানে থাকা জিম্বাবুয়ের ৩ পয়েন্ট, পাকিস্তানের ২, নেদারল্যান্ডসের শূন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৩৩/৯ (রোহিত ১৫, কোহলি ১২, সূর্যকুমার ৬৮, হুডা ৬৮, পান্ডিয়া ২, কার্তিক ৬, অশ্বিন ৭, ভুবনেশ্বর ৪*, শামি ০, আর্শদিপ ২*; পার্নেল ৪-১-১৫-৩, রাবাদা ৪-০-২৬-০, এনগিডি ৪-০-২৯-৪, নরকিয়া ৪-০-২৩-১, মহারাজ ৩-০-২৮-০, মারক্রাম ১-০-৫-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯.৪ ওভারে ১৩৭/৫ (ডি কক ১, বাভুমা ১০, রুশো ০, মারক্রাম ৫২, মিলার ৫৯*, স্টাবস ৬, পার্নেল ২*; ভুবনেশ্বর ৩.৪-০-২১-০, আর্শদিপ ৪-০-২৫-২, শামি ৪-০-১৩-১, পান্ডিয়া ৪-০-২৯-১, অশ্বিন ৪-০-৪৩-১)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: লুঙ্গি এনগিডি