Published : 06 Jun 2025, 10:24 AM
গত দুই মাসের গুঞ্জনই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। নিউ জিল্যান্ডের কোচের দায়িত্ব পেলেন রব ওয়াল্টার। আগামী তিন বছরের বেশি সময় তিন সংস্করণেই কিউইদের দায়িত্বে থাকবেন ৪৯ বছর বয়সী এই কোচ।
মাস দুয়েক আগেও ওয়াল্টার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বলের দলের কোচ। চুক্তির বাকি ছিল দুই বছরের বেশি সময়। কিন্তু গত এপ্রিলে হুট করেই প্রোটিয়াদের দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। এরপর থেকেই সংবাদমাধ্যমে খবর আসতে থাকে, নিউ জিল্যান্ডের দায়িত্ব পেতে পারেন এই কোচ। এরপর যখন গ্যারি স্টেড নিউ জিল্যান্ডের সাদা বলের দলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন, ওয়াল্টারের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার গুঞ্জন জোরাল হয় আরও।
তখন ধারণা করা হচ্ছিল, সংস্করণভেদে আলাদা কোচ বেছে নিতে পারে নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু এই বৃহস্পতিবার স্টেড ঘোষণা দেন, কোনো সংস্করণেই কোচের চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করবেন না তিনি। শুক্রবারই তিন সংস্করণের কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হলো ওয়াল্টারের নাম।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা বলের কোচের দায়িত্বে মোটামুটি সফলই ছিলেন ওয়াল্টার। তার কোচিংয়ে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে ফাইনালে। দেশের মাঠে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে তাক ছাড়তে প্রস্তুত ছিল না ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ওয়াল্টার মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন মূলত পারিবারিক কারণে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম হলেও ওয়াল্টারের কোচিং ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে নিউ জিল্যান্ডে। সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটে আছে তার দারুণ সাফল্যও। পরিবার নিয়ে থিতু হয়েছেন নিউ জিল্যান্ডেই। নেপিয়ারের কাছে হক’স বেতে থাকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। নিউ জিল্যান্ড থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছুটোছুটি করতে করতে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। নিউ জিল্যান্ডের দায়িত্বটি পাওয়া তাই তার পারিবারিক জীবনের জন্য বড় স্বস্তির।
স্বীকৃত কোনো পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই ওয়াল্টারের। তবে কোচ হিসেবে পরিচিতি গড়েছেন তিনি বেশ আগে থেকেই। নিউ জিল্যান্ডে তার কোচিংয়ে ২০১৯-২০ মৌসুমের সুপার স্ম্যাশের (টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট) প্লে-অফ খেলে ওটাগো ভোল্টস। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ মৌসুমের ফোর্ড ট্রফির (লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্ট) ফাইনালেও খেলে দলটি।
পরে তাকে দায়িত্বে আনে সেন্ট্রাল স্ট্র্যাগস। এখানে তার সাফল্যের পরিধি বাড়ে আরও। তার কোচিংয়ে ২০২১-২২ ফোর্ড ট্রফিতে রানার্স আপ হয় সেন্ট্রাল স্ট্যাগস, পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয় ফোর্ড ট্রফি ও প্লাঙ্কেট শিল্ডে (প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট)।
ওই বছর নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দরের কোচের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এছাড়া আইপিএলে পুনে ওয়ারিয়র্স ও দিলি ডেয়ারডেভিলসের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলের আগে কোচিং করিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের দল ইস্টার্ন টাইটান্সকে।
নিউ জিল্যান্ডের কোচের ওপর এমনিতে প্রত্যাশার চাপ ততটা থাকে না কখনোই। তবে এবার ওয়াল্টারের বাস্তবতা একটু ভিন্ন। তিনি দায়িত্বে আসছেন দেশটির ইতিহাসের সফলতম কোচ গ্যারি স্টেডের সাত বছরের মেয়াদ শেষে। আরও বেশি সাফল্য না হোক, অন্তত একই সাফল্যের ধারাবাহিকতার দাবি তার কাছে থাকবে কিউইদের।
ওয়াল্টারের এই মেয়াদে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পুরো একটি চক্রের পাশাপাশি আরেকটি চক্রের অর্ধেকভাগ, ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৬ ও ২০২৮ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকস (কোয়ালিফাই করতে পারলে) খেলবে নিউ জিল্যান্ড।
সেই চ্যালেঞ্জের রোমাঞ্চ ফুটে উঠল ওয়াল্টারের কণ্ঠেও।
“অনেক দিন ধরেই ব্ল্যাকক্যাপরা বিশ্ব আঙিনায় বেশ সফল দল এবং তাদেরকে দারুণ সমীহের চোখে দেখা হয়। সেটির সঙ্গে বাড়তি কিছু যোগ করার দায়িত্ব পাওয়াটা দারুণ সম্মানের। এমন প্রতিভাবান সব ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের সঙ্গে কাজ করার সুযেগ পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার, যে সময়টায় এতগুলো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও মহাগুরুত্বপূর্ণ নানা দ্বিপাক্ষিক সিরিজের লড়াই অপেক্ষায়।”
“শুরু করতে তর সইছে না আমার। এটা খুবই রোমাঞ্চকর, চ্যালেঞ্জিং এবং সবার জন্যই বিশাল সুযোগ।”
এই মাসের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন ওয়াল্টার। নিউ জিল্যান্ডের কোচ হিসেবে তার প্রথম সিরিজ অবশ্য আপাত সহজ, আগামী মাসের জিম্বাবুয়ে সফর। সেখানে দুটি টেস্ট খেলবে কিউইরা। এরপর আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ।