Published : 08 May 2025, 10:22 PM
প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। আফগানিস্তান ক্রিকেটে আগেই বেশ কিছু ‘প্রথম’ এর জন্ম দেওয়া হাশমাতউল্লাহ শাহিদি গড়লেন নতুন আরেক ইতিহাস। দেশটির প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
আফগানিস্তানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা আহমদ শাহ আবদালি চার দিনের টুর্নামেন্টে ধরা দিয়েছে শাহিদির এই অর্জন।
হিন্দুকুশ স্ট্রাইকার্সের হয়ে মাহ-ই-পার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম দিন ২২ রানে ২ উইকেট পতনের পর উইকেটে যান শাহিদি। একটা পর্যায়ে দলের স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৭০।
ওই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই শাহিদি গড়েন রানের সৌধ। ১৩৭ বলে স্পর্শ করেন শতক, ২৬৫ বলে দ্বিশতক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার তৃতীয় দ্বিশতক এটি।
হিন্দুকুশ স্ট্রাইকার্স থামে শেষ পর্যন্ত ৪০৫ রান। দলের অর্ধেক রান একাই করেন শাহিদি। ৪০৬ মিনিট ক্রিজে থেকে ২২ চার ও ২ ছক্কায় ২৮০ বলে ২০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
তিনি ছাড়া বিশের বেশি রান করতে পারেন দলটির আর দুজন- বিলাল আহমাদ ৮০ ও ইসমাত আলম ৫১। পঞ্চম উইকেটে বিলালের সঙ্গে শাহিদির জুটিতে আসে ২১৭ রান।
জবাবে মাহ-ই-পার স্টার্স দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ৪০৭ রানে। আরেক আফগান টেস্ট ব্যাটসম্যান শাহিদউল্লাহ ৩৬৬ বলে খেলেন ১৭৪ রানের ইনিংস।
ম্যাচের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ রান করেন শাহিদি। হিন্দুকুশ স্ট্রাইকার্স ৭ উইকেটে ২৮৩ রান করার পর ড্র হয় ম্যাচ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির কীর্তিতে শাহিদি আফগানিস্তানের প্রথম হলেও, বিশ্বে এই নজির হলো সব মিলিয়ে ৭৮টি। যার ৮টি টেস্ট ক্রিকেটে, ভিন্ন আট ব্যাটসম্যানের। এর মধ্যে একই টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির কীর্তি আছে ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ ও শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার।
একই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরি সবশেষ ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার মার্নাস লাবুশেন করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পার্থে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম এই কীর্তি গড়েন সিবি ফ্রাই। ১৯০০ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সাসেক্সের হয়ে সারের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১২৫ রানের পর দ্বিতীয়টিতে তিনি করেন ২২৯ রান। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে এই কীর্তি গড়তে পারেন শুধু তিনিই, যিনি ক্রিকেট ও ফুটবল দুটোয় খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে, সাউথ্যাম্পটনের হয়ে খেলেছেন ১৯০২ সালে এফএ কাপের ফাইনালে।
চারবার এই কীর্তি আছে পাকিস্তানের জাহির আব্বাসের, সবগুলোই ইংলিশ কাউন্টি দল গ্লস্টারশায়ারের হয়ে। ওই আট ইনিংসের সবকটিতে তিনি ছিলেন অপরাজিত!
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একই ম্যাচে দুই ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি আছে দুটি। ১৯৩৮ সালে এসেক্সের বিপক্ষে কেন্টের হয়ে আর্থার ফ্যাগ ও ২০১৯ সালে ননডেস্ক্রিপ্টসের হয়ে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে অ্যাঞ্জেলো পেরেরা পান এই স্বাদ।
শাহিদির আগে সবশেষ, ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির অর্জনে নাম লেখান শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান রোশান উইজেনায়েকে। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্টে প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয়টিতে অপরাজিত সেঞ্চুরি করেন কখনও শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলে না খেলা ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার।
শাহিদির বাকি দুটি ডাবল সেঞ্চুরি আফগানিস্তানের হয়ে টেস্টে, দুটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। দেশটির প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। দুটি টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি করা দেশটির একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনিই। গত ডিসেম্বরে বুলাওয়ায়োতে খেলা তার ২৪৬ রানের ইনিংস আফগানিস্তানের রেকর্ড।
সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩১ ম্যাচের ৫৫ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি ৯টি। ৫০.৬২ গড়ে রান ২ হাজার ৪৩০।
বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে শাহিদির শুরুটা অবশ্য মোটেও ভালো ছিল না। ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু হয়েছিল অভিষেক ইনিংসে ৮ বল খেলে শূন্য রানে আউট হয়ে! শুরুর সেই মলিনতা এখন অনেক সাফল্যে ঢাকা পড়ে গেছে।