Published : 21 Apr 2025, 07:17 PM
মেঘাছন্ন সকালে গুমোট আকাশের নিচে পেসারদের ছিল বড় দায়িত্ব। গতির সঙ্গে বাউন্সের মিশেলে সেই কাজ ঠিকঠাক করেন নাহিদ রানা। পরে তার সঙ্গে যোগ হন হাসান মাহমুদ ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। রোদ ওঠার পর জিম্বাবুয়ের বাকি ৫ উইকেট নিয়ে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
সম্মিলিত পারফরম্যান্সে সফরকারীদের অলআউট করলেও লিড নেওয়া আটকাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে প্রথম দিনে ব্যাটে-বলে পর্যদুস্ত দল দ্বিতীয় দিনে লড়াইয়ে ফিরতে পেরেছে ভালোভাবেই।
ব্রায়ান বেনেট, শন উইলিয়ামসের ফিফটির সঙ্গে নিয়াশা মায়াভো ও রিচার্ড এনগারাভার গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে ২৭৩ রানে থামে জিম্বাবুয়ে।
৮২ রানে পিছিয়ে থেকে খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৫৭।
স্বাগতিকদের বিপদ বাড়তে পারত আরও। শেষ বিকেলে মাহমুদুল হাসান জয়ের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক নিয়াশা মায়াভো। পরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান জয়।
৬ ও ১৮ রানে জীবন পেয়ে ২৮ রানে অপরাজিত তরুণ ওপেনার। তার সঙ্গে ১৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন মুমিনুল হক।
উইকেট শিকারের বিচারে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে একাদশবার ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান এই অফ স্পিনার। তবে জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ভাঙন ধরানোর কাজটা করেন মূলত নাহিদ। গতি আর বাউন্সের তোপে ৩ উইকেট নিয়ে নেন তরুণ ফাস্ট বোলার।
সকালে মেঘলা আকাশের নিচে শুরুতেই চমৎকার এক বাউন্সারে বেন কারানকে ভড়কে দেন নাহিদ। শর্ট লেগে ক্যাচ নেন মুমিনুল।
আগের দিন ইতিবাচক ব্যাটিং করা বেনেট এদিনও ভালো শুরু করেন। মাত্র ৫৬ বলে তিনি পূর্ণ করেন ফিফটি। পরে নাহিদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি দূর থেকে খেলার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন ৫৬ রান করা ওপেনার।
দিনের শুরুতে কিছুটা এলোমেলো বোলিং করা হাসান ভেতরে ঢোকানো দুর্দান্ত ডেলিভারিতে উপড়ে দেন নিকোলাস ওয়েলচের অফ স্টাম্প। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে নাহিদের ব্যাক অব লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে কট বিহাইন্ড হন ক্রেইগ আরভাইন।
প্রথম সেশনে মাত্র ৬৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে লিড পাওয়ার আশা জাগায় বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়েসলি মাধভেরেকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন উইলিয়ামস। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে আরও একটি পঞ্চাশ করেন দারুণ ফর্মে থাকা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
৪৮ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি ভাঙতে কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পায় বাংলাদেশ। খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন মাধভেরে।
পরে নিজের উইকেট ছুড়ে আসেন উইলিয়ামস। দারুণ খেলতে খেলতে হুট করেই মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় হাওয়ায় বল ভাসিয়ে দেন ৩৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। লং অফে বেশ ভালো ক্যাচ নেন জয়।
দুইশর আগে ৬ উইকেট নিয়ে ফেলায় মনে হচ্ছিল জিম্বাবুয়েকে বেশি লিড নিতে দেবে না বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি মায়াভোর ব্যাটে। ৫ চারে ৫৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন কিপার-ব্যাটসম্যান।
নবম উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়ের লিড আরও বাড়ান এনগারাভা ও ব্লেসিং মুজারাবানি। ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করেন মুজারাবানি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ক্যারিয়ার সেরা ২৮ রানের ইনিংস খেলেন এনগারাভা।
দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে দুই বলের মধ্যে ভিক্টর নিয়াউচিকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মিরাজ। এর আগে ঘরের মাঠে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে সবশেষ এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন অফ স্পিনার।
দিনের শেষ দিকে দেড় ঘণ্টার জন্য নেমে আরও একবার ব্যর্থ বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। চতুর্থ ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন ৪ রান করা সাদমান। দ্রুত ফিরতে পারতেন জয়ও।
মুজারাবানির বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন মায়াভো। হতাশায় ক্রিজের পাশে মাটিতে লাথিই মেরে বসেন দীর্ঘদেহী পেসার। কয়েক ওভার পর এনগারাভার বলে তুলনামূলক চতুর্থ স্লিপে লাফিয়েও বল হাতে জমাতে পারেননি কারান। এটি অবশ্য বেশ কঠিন ছিল।
দুটি ক্যাচ ছাড়াও দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ফিল্ডিং হয় খুব বাজে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান বাড়িয়ে নেন জয় ও মুমিনুল। ৪২ বলে এরই মধ্যে ৬টি চার মেরেছেন জয়। ১৫ রানের পথে মুমিনুলের বাউন্ডারি ৩টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৯১
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৬৭/০) ৮০.২ ওভারে ২৭৩ (বেনেট ৫৭, কারান ১৮, ওয়েলচ ২, উইলিয়ামস ৫৯, আরভাইন ৮, মাধভেরে ২৪, মায়াভো ৩৫, মাসাকাদজা ৬, এনগারাভা ২৮*, মুজারাবানি ১৭, নিয়াউচি ৭; হাসান ১৭-৪-৫৫-১, নাহিদ ১৮-৩-৭৪-৩, খালেদ ১৫-৫-৩০-১, মিরাজ ২০.২-৫-৫২-৫, তাইজুল ১০-০-৫৩-০)
বাংলাদেস ২য় ইনিংস: ১৩ ওভারে ৫৭/১ (সাদমান ৪, জয় ২৮*, মুমিনুল ১৫*; নিয়াউচি ৫-২-১১-০, মুজারাবানি ৪-০-২১-১, এনগারাভা ৪-০-২০-০)