Published : 18 May 2025, 01:00 AM
সেই ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম ইকবাল। এরপর এত দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান এই সংস্করণে শতরানের দেখা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে সেই খরার অবসান পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটে। তরুণ বাঁহাতি ওপেনারের ছক্কার রেকর্ড গড়া ইনিংসের পথ ধরে প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৭ রানে হারাল বাংলাদেশ।
শারজাহ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার ৫৪ বলে ১০০ রানের ইনিংস উপহার দেন পারভেজ। ৫টি চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা মারেন ৯টি। এক ইনিংসে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড।
তবে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান ২০ ছাড়াতে পারেননি। ১০ ওভারে শতরান পেরিয়েও তাই ২০০ হয়নি দলের রান। ২০ ওভারে তারা তোলে ১৯১ রান।
রান তাড়ায় সহজে হাল ছাড়েনি সংযুক্ত আরব আমিরাত। শুরুতে মুহাম্মাদ ওয়াসিম, পরে আসিফ খান বেশ বিপাকেই ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত পরিষ্কার ব্যবধানে জিতলেও এক পর্যায়ে পরাজয়ের চোখরাঙানিও ছিল বাংলাদেশের প্রতি। তবে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি তিন অভিষিক্ত নিয়ে খেলতে নামা আমিরাত।
শারজাহতে চারটি টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে লিটন কুমার দাসের শুরু হলো জয় দিয়ে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ অভিজ্ঞ সৌম্য সরকারকে বাইরে রেখে তানজিদ হাসান ও পারভেজকে দিয়ে শুরু করেন ইনিংস। দুই বাঁহাতির জন্য অফ স্পিনার ধ্রুব পারাশারকে প্রথমে আক্রমণে আনেন আমিরাতের অধিনায়ক। তাকে পাত্তা না দিয়ে প্রথম ওভারেই চার ও ছক্কায় শুরু করেন তানজিদ।
তবে পরের ওভারেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। ৩২ বছর বয়সে অভিষিক্ত মাতিউল্লাহ খান উইকেটের স্বাদ পান প্রথম ওভারেই।
নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে লিটন কুমার দাস (১১) বিদায় নেন একটি ছক্কা মেরেই। বাঁহাতি পেসার জাওয়াদউল্লাহ প্রথম বলেই উইকেট পান ইয়র্কারে।
পারভেজের ছক্কার অভিযান শুরু হয়ে যায় অবশ্য এর আগেই। ওভারের পর ওভার তা চলতেই থাকে। হৃদয় ক্রিজে গিয়ে একটু সময় নেন। পারভেজেরে ব্যাটে রানের জোয়ার বইত থাকে। মিডিয়াম পেসার সাঞ্চিত শার্মার এক ওভারে তিন ছক্কা ও এক চারে ফিফটির কাছে পৌঁছে যান তিনি। হায়দার আলিকে বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন ২৮ বলে।
হৃদয়ের রান একপর্যায়ে ছিল ৯ বলে ৭। পরে লেগ স্পিনার মুহাম্মাদ জুহাইবকে স্বাগত জানান তিনি প্রথম দুই বলেই ছক্কা ও চার মেরে।
দশম ওভারে একশ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ।
তবে হৃদয় বিদায় নেন একটু পরই (১৫ বলে ২০)। পাঁচ নম্বরে প্রমোশন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি নতুন সহ-অধিনায়ক শেখ মেহেদি হাসান (৫ বলে ২)।
পারভেজের ব্যাটও তখন একটু মিইয়ে যায়। টানা প্রায় পাঁচ ওভার আসেনি বাউন্ডারি।
জুহাইবকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে শেকল ভাঙেন পারভেজই। আরেকপ্রান্তে যোগ্য কাউকে না পেলেও তিনি ছুটতে থাকেন।
একটু ছন্দপতন অবশ্য হয়েছিল তার ৮৪ রানে। মাতিউল্লাহর ফুল টস বলে ধরা পড়েন তিনি লং অফ সীমানায়। কিন্তু মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সময় জানতে পারেন তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত, ‘নো’ বল!
রক্ষা পেয়ে ফ্রি হিটে মারেন চার। ওই ওভারে আরেকটি ছক্কায় এগিয়ে যান শতরানের দিকে। ১৯তম ওভারের শেষ বলে কাঙ্ক্ষিত সেই মাইলফলক ছুঁয়ে লাফিয়ে ওঠেন আনন্দে।
৫৩ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন পারভেজ। তামিমের শতরান ছিল ৬০ বলে। ৯ ছক্কায় পারভেজ পেরিয়ে যান রিশাদ হোসেনের ৭ ছক্কার রেকর্ডও।
৯ ছক্কার ৮টিই ছিল লং অন আর লং অফ দিয়ে। এতে ফুটে ওঠে, পারভেজের শক্তির জায়গাতেই বোলিং করেছেন আমিরাতের বোলাররা।
জাকের আলি (১৪ বলে ১৩) ও শামীম হোসেন (৬ বলে ৫) ততক্ষণে ফিরে গেছেন শেষের দাবি মেটাতে না পেরে। শেষ ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন পারেভজও। তানজিম হাসান ৯ বল খেলে করতে পারেন ৭ রান। বাংলাদেশের স্কোর তাই যেতে পারেনি দুইশতে।
ইনিংসে মোট ছক্কা ছিল ১৩টি, যা এক ম্যাচে বাংলাদেশের দলীয় রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল দুই ম্যাচে ১২টি করে ছক্কা।
দারুণ বোলিংয়ে ২১ রানে চার উইকেট নেন জাওয়াদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেট পূর্ণ করার দিনে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান বাঁহাতি এই পেসার।
রান তাড়ায় মুহাম্মাদ ওয়াসিম প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দেন ব্যাটের তেজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এক ছক্কা ও তিন চারে হকচকিয়ে দেন তিনি শেখ মেহেদিকে। পরের ওভারে তানজিম হাসানকেও মারেন একটি ছক্কা দুটি চার।
আরেক ওপেনার মুহাম্মাদ জোহাইবকে অবশ্য দ্রুতই ফেরান হাসান মাহমুদ। তিনে নামা আলিশান শারাফুকে দাঁড়াতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। তবে তৃতীয় উইকেটে ওয়াসিম ও রাহুল শার্মা কাঁপিয়ে দেন বাংলাদেশকে।
হাসানের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কা মারেন রাহুল, তানভির ইসলামের ওভারে তিনটি চার মারেন ওয়াসিম। একাদশ ওভারে যখন একশ পেরিয়ে যায় আমিরাত, তাদের জয় তখন মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব।
তানজিম আক্রমণে ফিরে ওয়াসিমকে ফিরিয়ে ভেঙে দেন ৪২ বলে ৬২ রানের জুটি। আমিরাতের অধিনায়ক বিদায় নেন ৩৯ বলে ৫৪ করে। এই পেসার একটু পর বিদায় করেন রাহুলকেও (২২ বলে ৩৫)।
বাংলাদেশকে তবু স্বস্তি পেতে দেননি আসিফ খান। আগ্রাসী ব্যাটার টানা তিন বলে ছক্কা মারেন শেখ মেহেদিকে। এক প্রান্ত থেকে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে সঙ্গী পাননি কাউকে। শেষ পর্যন্ত তাই পারেননি তিনি আর তার দল। মুস্তাফিজের স্লোয়ার ও কাটারের জবাব দিতে পারেননি তারা।
আসিফ করেন চার ছক্কায় ২১ বলে ৪২। আমিরাতের শেষ ছয় ব্যাটারের কেউ ছুঁতে পারেননি দু অঙ্ক। ১০ রানের মধ্যে হারায় তারা শেষ ৫ উইকেট।
সিরিজের শেষ ম্যাচ সোমবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৯১/৭ (তানজিদ ১০, পারভেজ ১০০, লিটন ১১, হৃদয় ২০, শেখ মেহেদি ২, জাকের ১৩, শামীম ৬, তানজিম ৭*, তানভির ১*; ধ্রুব ৪-০-৩২-১, মাতিউল্লাহ ৪-০-৪৬-১, হায়দার ৪-০-৩০-০, জাওয়াদউল্লাহ ৪-০-২১-৪, সাঞ্চিত ১-০-১৮-০, জুহাইব ৩-০-৩৬-১)।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: ২০ ওভারে ১৬৪ (জোহাইব ৯, ওয়াসিম ৫৪, শারাফু ১, রাহুল ৩৫, আসিফ ৪২, ধ্রুব ৩, সাঞ্চিত ৪, জুহাইব ০, হায়দার ০, মাতিউল্লাহ ০*, জাওয়াদউল্লাহ ৬; তানজিম ৪-০-২২-২, শেখ মেহেদি ৪-০-৫৫-২, হাসান ৪-০-৩৩-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-২, তানভির ৪-০-৩০-১)।
ফল: বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ : পারভেজ হোসেন ইমন।