Published : 27 Sep 2024, 10:49 AM
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) পথচলা থেমে যাওয়ার পর খেলোয়াড়ি জীবনের অধ্যায়ই চুকিয়ে দিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। কুঁচকির চোটে পড়ার পর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন টি-টোয়েন্টির ‘আইকন’ হয়ে ওঠা অলরাউন্ডার।
গত মঙ্গলবার সিপিএলের ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রাভো। টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়েন তিনি। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবারের আসর খেলেই বিদায় জানাবেন সিপিএলকে। প্রত্যাশার আগে তাই শেষ হয়ে যায় সেই পালা। বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রামে তিনি জানিয়ে দেন, সব ধরনের ক্রিকেট থেকেই বিদায় নিচ্ছেন।
ক্রিকেটার হিসেবে তার টি-টোয়েন্টি সত্তাই কেবল টিকে ছিল। আধুনিক ক্রিকেটে অবসরটা হয় ধাপে ধাপে। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন তিনি। গত বছর সরে দাঁড়ান আইপিএল থেকে। এর মধ্যে চেন্নাই সুপার কিংস ও আফগানিস্তান জাতীয় দলে বোলিং কোচ হিসেবেও কাজ করেছেন।
এবার সিপিএল থেকে বিদায় নেওয়ার পর আগামী জানুয়ারিতে আইএল টি-টোয়েন্টিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এমিরেটসের হয়ে খেলার কথা ছিল তার। কিন্তু আর দিন দশেক পরেই ৪১ বছর পূর্ণ হবে তার। এই বয়সে আর চোটের সঙ্গে লড়াই করার তাড়না পাননি।
তার বিদায়ের ঘোষণায় ক্রিকেট খেলাটির প্রতি ভালোবাসা ও আবেগের তীব্রতা ফুটে উঠল যথেষ্টই।
“যে খেলাটা আমাকে সবকিছু দিয়েছে, সেটিকে বিদায় জানানোর সময় আজ। পাঁচ বছর বয়স থেকেই আমি জানতাম যে কী করতে চাই-এই খেলাটার জন্যই জন্ম আমার। অন্য কোনো বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ ছিল না এবং পুরো জীবন তোমার (ক্রিকেট) জন্যই নিবেদিত করেছি। বিনিময়ে তুমি আমাকে দিয়েছো আমার ও আমার পরিবারের জন্য স্বপ্নের জীবন। এটির জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশই যথেষ্ট নয়।"
“পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ২১ বছর – অনেক উত্থান-পতনে ঠাসা অবিশ্বাস্য এক ভ্রমণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, স্বপ্নময় জগতে ছিলাম আমি, কারণ শতভাগ দিয়েছি প্রতিটি পদক্ষেপে।”
খেলা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে তার এখনই ছিল না। কিন্তু চোটের কাছে হার মানতেই হলো এই সময়ে এসে।
“এই সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আমার প্রবল, কিন্তু সময় হয়েছে বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার। আমার মন এখনও চায় ছুটে যেতে, কিন্তু আমার শরীর আর এত ব্যথা, ভেঙে পড়া ও ধকল সহ্য করতে পারবে না। এমন অবস্থায় নিজেকে নিতে চাই না, যেখানে সতীর্থদের, সমর্থকদের ও আমার দলকে হয়তো হতাশ করতে পারি।”
“তাই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এই খেলাটা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। চ্যাম্পিয়ন বিদায় বলে দিচ্ছে।”
২০ বছর আগে দারুণ সম্ভাবনাময় টেস্ট অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া জাগালেও পরে ব্রাভো হয়ে ওঠেন টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ। তার সময়ের আরও অনেকের মতোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই না করে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি খেলে বেড়িয়েছেন। ৪০ টেস্ট ম্যাচের ক্যারিয়ারের শেষটি খেলেছেন সেই ২০১০ সালে, ১৬৪ ওয়ানডের শেষটি ২০১৪ সালে। এরপর তার পরিচয় ছিল শুধুই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও খুব নিয়মিত খেলেননি। তবে দুটি বিশ্বকাপ জয়েই তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি কিংবদন্তি ও সর্বকালের সেরাদের একজন। তার রেকর্ড ও অর্জনই স্বাক্ষ্য দেবে তার হয়ে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮২ ম্যাচ খেলে বিদায় নিলেন তিনি। এই সংস্করণে সর্বোচ্চ ৬৩১ উইকেটের রেকর্ড তার। ব্যাট হাতে রান করেছেন ১২৫.৪৪ স্ট্রাইক রেটে ৬ হাজার ৯৭০।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট ও ৫ হাজার রানের যুগলবন্দি নেই আর কারও।
ক্যাচ নিয়েছেন ২৭৫টি, উইকেটকিপারদের বাইরে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
এই সংস্করণে ট্রফি জিতেছেন তিনি ২৬টি। এর চেয়ে বেশি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন কেবল তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও প্রিয় বন্ধু কাইরন পোলার্ড (২৯টি)।
সিপিএলের রেকর্ড ৫টি শিরোপা তার। এছাড়াও ট্রফি জিতেছেন তিনি আইপিএল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, বিপিএল, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, আইএল টি-টোয়েন্টিতে।
গত কয়েক বছরে তিনি খেলা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকটা ‘মেন্টর’ হিসেবেও কাজ করছিলেন, বিশেষ করে সিপিএলে, চেন্নাই সুপার কিংসে যে ভূমিকায় দেখা যায় মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে। খেলা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার পর এখন হয়তো কোচিংয়েই দেখা যাবে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ব্রাভোকে।