জাতীয় ক্রিকেট লিগ
Published : 16 Nov 2024, 08:32 PM
সবশেষ ম্যাচে উইকেটশূন্য, সবশেষ চার ইনিংস মিলিয়ে উইকেট কেবল একটি। জাতীয় ক্রিকেট লিগের চলতি আসরে এমনই বিবর্ণ পরিসংখ্যান নিয়ে পঞ্চম রাউন্ডে খেলতে নেমে আলো ছড়িয়েছেন সুমন খান। প্রায় একাই খুলনা বিভাগের প্রথম ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এই পেসার।
চার ম্যাচের তিনটিতেই শনিবার ছিল বোলারদের প্রবল দাপট। সুমনের মতোই ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন ফাহাদ হোসেন। তার ৫ উইকেটে রাজশাহী বিভাগকে কম রানেই গুটিয়ে দিয়ে লিড নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ।
সুমনের ৬ উইকেটের পরও অস্বস্তিতে ঢাকা
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সুমনের দারুণ বোলিংয়ে প্রথম দিনই গুটিয়ে গেছে খুলনা। তবে বোলারদের দাপটের দিনে দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে লড়াই করছে তারা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে খুলনাকে ১৭২ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন সুমন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৮ ম্যাচে পঞ্চমবার তিনি নিলেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট। আগের সেরা ছিল ২৫ রানে ৫ উইকেট।
ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ না দিয়ে খুলনার হয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। ৯৪ বলে ১২ চারে এই কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ৬৯ রান।
আর কেউ যেতে পারেননি ত্রিশ পর্যন্ত। নেই কোনো পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বিদায়ী ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি ইমরুল কায়েস।
জবাব দিতে নেমে স্বস্তিতে নেই ঢাকা। ৩ উইকেটে ৫৮ রানে দিন শেষ করা দলটি এখনও ১১৪ রানে পিছিয়ে।
দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি দুই ওপেনার জয়রাজ শেখ ও রনি তালুকদার। দুই অঙ্ক ছুঁয়েই বিদায় নেন আশিকুর রহমান শিবলি।
দুই ছক্কা ও এক চারে ২৯ বলে ২০ রানে ব্যাট করছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তিনে নামা আরিফুল হক দুই চারে ৫৬ বলে খেলছেন ১৫ রানে।
৭ ওভারে ৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন আল আমিন হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা ১ম ইনিংস: ৪৮.৪ ওভারে ১৭২ (এনামুল ২৮, অমিত ১০, ইমরুল ১৬, মিঠুন ৬৯, নাহিদুল ২, জাওয়াদ ১৪, পারভেজ ০, মাসুম ১৩, আরিদুল ৪*, হালিম ০, আল আমিন ৬; সাকিল ১৫-২-৫৭-২, সুমন ১৭.৪-৫-৫০-৬, এনামুল ১৪-৩-৪৯-১, মাহফুজুর ২-১-৮-১)
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ২১.১ ওভারে ৫৮/৩ (জয়রাজ ৯, রনি ২, আরিফুল ১৫*, আশিকুর ১১, মোসাদ্দেক ২০*; আল আমিন ৭-৩-৯-২, মাসুম ৩-০-১১-০, হালিম ৭-১-২৩-১, আরিদুল ৪-১-১৩-০, পারভেজ ০.১-০-১-০)
ফাহাদের ৫ উইকেটের পর ওপেনারদের দৃঢ়তা
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে রাজশাহীর প্রথম ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ফাহাদ। পরে দুই ওপেনারের দৃঢ়তায় লিড নিয়েছে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ফাহাদের ছোবলে ১১২ রানে গুটিয়ে যায় রাজশাহীর ইনিংস।
গোলাম কিবরিয়া ছাড়া দলটির আর কেউ যেতে পারেননি বিশ পর্যন্ত। কোনো জুটিই যায়নি ত্রিশ পর্যন্ত।
৩১ রানে ৫ উইকেট নেন ফাহাদ। বাঁহাতি এই পেসারের আগের সেরা ছিল ৬২ রানে ৪ উইকেট।
জবাব দিতে নেমে ৮ উইকেটে ১৭৩ রানে দিন শেষ করা চট্টগ্রাম এগিয়ে ৬১ রান। লিড আরও বাড়িয়ে নেওয়ার আশা হয়ে টিকে আছেন শামীম হোসেন। ১৯ রানে ব্যাট করছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পারভেজ হোসেনের সঙ্গে ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রামকে ভালো শুরু এনে দেন সাদিকুর রহমান। ৫৭ বলে এক ছক্কা ও ছয় চারে তিনি করেন ৫৪ রান। পারভেজ ৬৮ বলে করেন ৪১ রান।
দুই ওপেনারকেই ফেরান ওয়াসি সিদ্দিকী।
৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি চট্টগ্রাম।
এতে বড় ভূমিকা আছে সাব্বির হোসেনের। ওয়াসি ও তার ৩ উইকেটে লিড একশর নিচে রাখার আশা জাগিয়েছে রাজশাহী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ৩৪ ওভারে ১১২ (তানজিদ ১৯, সাব্বির ১, রহমতউল্লাহ ১৯, মেহেরব ১২, প্রিতম ৬, শাকির ০, কিবরিয়া ২৩, সানজামুল ৯, ওয়াসি ১৭, ওয়ালিদ ০*, মোহর ১; ফাহাদ ৯-২-৩১-৫, ইফরান ১৩-৪-৩৮-২, শরিফ ৫-০-২০-১, আশরাফুল ৭-১-২১-২)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস: ৪২ ওভারে ১৭৩/৮ (সাদিকুর ৫৪, পারভেজ ৪১, সাজ্জাদুল ০, ইয়াসির ১৭, শুক্কুর ১০, শামীম ১৯*, নাঈম ২, ইফরান ০, আশরাফুর ০*; ওয়ালিদ ৮-০-৪৪-১, মোহর ৯-১-৩২-১, মেহেরব ৫-১-২২-০, সাব্বির ৯-০-৩১-১, ওয়াসি ১০-১-৩৪-৩, সানজামুল ১-০-২-০)
নাসুম-খালেদ-রেজাউরের ছোবলে এলোমেলো ঢাকা মেট্রো
তিন বোলার মিলে গুঁড়িয়ে দিলেন ঢাকা মেট্রোর প্রথম ইনিংস। ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তাদের মধ্যে সফলতম বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও রেজাউর রহমান রাজা নিলেন তিনটি করে উইকেট, দুই পেসারই দিলেন ২৮ রান করে।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৩.১ ওভারে ১৩০ রানে গুটিয়ে যায় মেট্রোর ব্যাটিং।
শুরুটা খারাপ ছিল না তাদের। মাহফিজুল ইসলামের সঙ্গে ৫৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বরং বড় কিছুরই আশা দেখিয়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তাকে বিদায় করে শুরুর জুটি ভাঙেন রেজাউর, এরপর আর তেমন কোনো জুটিই গড়তে পারেনি মেট্রো।
নাঈম (৩১) ও মাহফিজুল (২৭) ছাড়া আর কেউ যেতে পারেননি বিশের ঘরে। দলটি শেষ ৬ উইকেট হারায় কেবল ৩০ রানে।
২ উইকেটে ১৩৭ রানে দিন শেষ করা সিলেট এগিয়ে গেছে ৭ রানে।
৭ চারে ৭৯ বলে ৫১ রানে ব্যাট করছেন সিলেট অধিনায়ক অমিত হাসান। আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ানের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি গড়া মুবিন আহমেদ খেলছেন ১৯ রানে।
টি-টোয়েন্টি ঘরানার ব্যাটিংয়ে চার ছক্কা ও তিন চারে ৪১ রানের জুটিতে সিলেটকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন তৌফিক খান। তবে ৫৮ রানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে কিছুটা আশা জাগায় মেট্রো। সেটা অনেকটাই উবে গেছে অমিতের দৃঢ়তায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৪৩.১ ওভারে ১৩০ (নাঈম ৩১, মাহফিজুল ২৭, আইচ ৪, মার্শাল ১০, শামসুর ১৭, আমিনুল ১৩, তাহজিবুল ২, আবু হায়দার ৮, রকিবুল ২, আরিফ ০, ফাহিম ৪*; নাঈম ৫-২-১০-০, খালেদ ১১.১-৪-২৮-৩, তোফায়েল ৭-০-৩৮-০, রেজাউর ১১-১-২৮-৩, নাসুম ৯-১-১৯-৪)
সিলেট ১ম ইনিংস: ৩৩ ওভারে ১৩৭/২ (পিনাক ১৬, তৌফিক ৪১, মুবিন ১৯*, আমিত ৫১*; আবু হায়দার ৮-০-৫৭-০, রকিবুল ১৩-৫-৩৫-০, আরিফ ৪-২-৯-১, ফাহিম ৫-০-২৬-১, আমিনুল ৩-১-৬-০)
তিন ফিফটিতে তিনশর কাছে বরিশাল
শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে ইফতেখার হোসেন, সালমান হোসেন ও তাসামুল হকের ফিফটিতে ৭ উইকেটে ২৬৬ রানে দিন শেষ করেছে বরিশাল বিভাগ।
টস জিতে বোলিং নেওয়া রংপুর বিভাগের শুরুটা ভালো হয়েছিল। ৪৩ রানে ফিরিয়ে দিয়েছিল তিন ব্যাটসম্যানকে।
তবে চতুর্থ উইকেটে সালমান হোসেনের সঙ্গে ১১১ রানের জুটিতে দলকে উদ্ধার করেন ওপেনার ইফতেখার। ৯ চারে ১৪৫ বলে তিনি করেন ৭০ রান।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি সালমান। ৭ চারে ১৩৫ বলে তিনি করেন ৬৭ রান।
দুই থিতু ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর বরিশালকে ৬৯ রানের জুটিতে টানেন তাসামুল ও সোহাগ গাজী। ৬৬ বলে ৩৫ রান করে সোহাগের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি তাসামুল। ৫ চারে ৯৮ বলে ৫১ রান করে ফেরেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল বিভাগ ১ম ইনিংস: ৮৩.৩ ওভারে ২৬৬/৭ (মজিদ ৮, ইফতেখার ৭০, বিন সিদ্দিক ৫, মাহমুদ ৮, সালমান ৬৭, তাসামুল ৫১, সোহাগ ৩৫, মইন ০*, তানভির ৬*; মুকিদুল ১৯-৫-৪৯-১, সাকলাইন ১৪.৩-৩-৪৬-১, আল মামুন ১৩-০-৪৭-২, আরিফুল ৭-১-১৮-১, রিজোয়ান ৫-০-২৫-০-, আবু হাশিম ১৪-৪-৩৬-০, নাঈম ৩-০-১৫-০, নবীন ২-০-১১-০, তানবীর ৬-১-১২-১)