আইপিএল
Published : 21 May 2025, 05:34 PM
বাহবা পেতে, প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু এসব থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করেন বৈভাব সুরিয়াভানশি। বিশ্ব রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির পর তাই কয়েক দিন ফোনই বন্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। ভারতের ১৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বললেন, ওই সময় পাঁচশর বেশি কল এসেছিল তার ফোনে।
গত নভেম্বরে আইপিএলের মেগা নিলামের পর থেকেই আলোচনায় সুরিয়াভানশি। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ কিছু ইনিংস খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে নিলামের টেবিলে চলে কাড়াকাড়ি। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে ৩০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের এই ক্রিকেটারকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস।
আইপিএলে দল পেয়েই একটি রেকর্ডে নাম উঠে যায় সুরিয়াভানশির। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে নিলামে দল পাওয়া সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হয়ে যান তিনি।
আসরের প্রথম দিকে তাকে খেলায়নি রাজস্থান। ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তার অভিষেক লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে। সেদিন আরেকটি রেকর্ড গড়েন সুরিয়াভানশি। ১৪ বছর ২৩ দিন বয়সে মাঠে নেমে আইপিএলে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হয়ে যান তিনি।
সুরিয়াভানশি বিস্ময় উপহার দেন ব্যাটিংয়ে নেমে। এত অল্প বয়সে বড় মঞ্চে নেমে যেখানে চাপে থাকার কথা তার, সেখানে তিনি প্রথম বলেই চোখধাঁধানো শটে মেরে দেন ছক্কা! ওইদিন ইনিংস বড় করতে না পারলেও ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২০ বলে ৩৪ রান করে জানিয়ে দেন নিজের আগমনী বার্তা।
তাতে শুরু হয়ে যায় সুরিয়াভানশিকে নিয়ে আলোচনার ঝড়। এক ম্যাচ পর রাজস্থানের বিস্ময় বালক তোলপাড় ফেলে দেন গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ১১ ছক্কায় ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি।
৩৫ বলে স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। আইপিএলে যা দ্বিতীয় দ্রুততম, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম। ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে ইনিংসটি খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ক্রিকেটারের প্রথম সেঞ্চুরি এটি।
ওই শতকের পর টানা দুই ম্যাচে শূন্য ও ৪ রানে আউট হওয়ার তেতো অভিজ্ঞতা হয় সুরিয়াভানশির। ব্যর্থতার জাল ছিঁড়ে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ১৫ বলে চারটি করে চার ও ছক্কায় ৪০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
এবারের আসরে রাজস্থানের শেষ ম্যাচে মঙ্গলবার ভারতীয় তরুণ সেনসেশন চারটি করে চার ও ছক্কায় ৩৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে দলের ৬ উইকেটের জয়ে যা রাখে বড় ভূমিকা।
৭ ম্যাচে ২৫২ রান করে এবারের আইপিএল শেষ করলেন সুরিয়াভানশি। তার স্ট্রাইক রেট ২০৬.৫৫, ব্যাটিং গড় ৩৬। চেন্নাই ম্যাচের পর রাজস্থান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে নিজের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি পর্ব নিয়ে কথা বলেন তিনি।
“আমি ৩-৪ বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং এর ফলাফলও দেখতে পেয়েছি। যা কিছু ঘাটতি ছিল, আমি সেসব নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। যেটা এক সময় কঠিন লাগত, সেটা সহজ হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে, মনোযোগী থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সহজাত খেলা বলে কিছু নেই। আপনাকে কেবল দলের প্রয়োজন অনুযায়ী খেলতে হবে। আর এই পর্যায়ে বাড়তি কিছুর চেষ্টা করা উচিত নয়। আমাকে আমার শক্তির জায়গায় অনড় থাকতে হবে এবং দলকে জেতাতে হবে।”
একই সঙ্গে সুরিয়াভানশি তুলে ধরেন, যশ-খ্যাতির মোহ দূরে ঠেলে কীভাবে তিনি স্রেফ মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করেন।
“৫০০ এর বেশি মিসড কল পেয়েছিলাম, কিন্তু আমি ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম। সেঞ্চুরির পর অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছিল, কিন্তু আমার এটা ভালো লাগে না। ২ থেকে ৪ দিন ফোন বন্ধ রেখেছিলাম। আমি কেবল পরিবারের মানুষ ও অল্প কিছু বন্ধুর সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি, এটাই যথেষ্ট।”
১০ দলের টুর্নামেন্টে নবম হয়ে এবারের আইপিএল শেষ করল রাজস্থান। ১৪ ম্যাচের মধ্যে কেবল ৪টি জিততে পেরেছে তারা।