Published : 07 May 2025, 05:52 PM
টস ভাগ্যকে আবার পাশে পেলেন নিক কেলি। ভাগ্য বদলের আশায়ই হয়তো এবার বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ অধিনায়ক। কিন্তু সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে পারলেন না তার বোলাররা। এলোমেলো বোলিংয়ের প্রাপ্য সাজা দিয়ে সেঞ্চুরি করলেন নুরুল হাসান সোহান ও মাহিদুল ইসলাম। পরে স্বাগতিকদের বড় পুঁজির কোনো জবাব দিতে পারল না কিউই ব্যাটাররা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডকে ‘এ’ দলকে ৮৭ রানে হারায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচ সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করে ফেলে তারা।
প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু করলেও লক্ষ্য বেশি বড় না হওয়ায় ৪২ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহিদুল। এবার আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন ২৬ বছর বয়সী মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
গত মাসে শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দারুণ ছন্দ এই সিরিজেও বয়ে আনা সোহানের ব্যাট থেকে আসে আগ্রাসী শতরান। সবশেষ ৯ ম্যাচের মধ্যে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। ৭টি করে চার-ছক্কা মেরে ১০১ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশ ‘এ’ অধিনায়ক।
চতুর্থ উইকেটে সোহান ও মাহিদুলের ২২৫ রানের জুটির সৌজন্যে ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় স্বাগতিক দল।
এই সংস্করণে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে এর চেয়ে বড় স্কোর আছে আর একটি। ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ড উলভসের (‘এ’ দল) বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৮৬ রান করেছিল তারা।
সাড়ে তিনশ ছুঁইছুঁই লক্ষ্যে ডেল ফিলিপস শুরুতে ঝড় তুললেও আর কারও সমর্থন পাননি। ৪১ বল বাকি থাকতেই ২৫৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
বাংলাদেশের তিন স্পিনার মিলে নেন সাত উইকেট।
প্রথম ম্যাচের মতো এ দিনও সকালে উইকেট থেকে বাউন্স ও মুভমেন্ট পান পেসাররা। কিন্তু শুরুর কয়েক ওভার ছাড়া সেটি আর কাজে লাগাতে পারেনি কিউইরা। এলোমেলো বোলিংয়ে অতিরিক্ত ২৬ রান খরচ করে তারা।
চতুর্থ ওভারে ক্রিস্টিয়ান ক্লার্কের অফ স্টাম্পের বাইরে চমৎকার ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন পারভেজ হোসেন। তিন নম্বরে নেমে শুরুতে কয়েকটি শর্ট বলে অস্বস্তিতে ভোগেন এনামুল হক।
তবে দ্রুতই সামলে নেন। সপ্তম ওভারে জ্যাক ফোকসের বলে পুল করে মারেন ম্যাচের প্রথম ছক্কা। দুই বল পর বোলারের মাথার ওপার দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান তিনি। পরের ওভারে দুটি চার মারেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৬ বলে ৭৩ রান যোগ করেন এনামুল ও নাঈম। কিন্তু দুজনের কেউই সম্ভাবনাময় ইনিংসের পূর্ণতা দিতে পারেননি। নিজের ভুলে রান আউট হয়ে ফেরেন ৩৪ বলে ৩৯ রান করা এনামুল।
দুই ওভার পর দলকে একশর কাছে রেখে আউট হন নাঈম। ৬ চারে ৪১ বলে ৪০ রান করে বাঁহাতি ওপেনার ধরা পড়েন লং অফ সীমানায়।
এরপর শুরু মাহিদুল ও সোহানের ম্যারাথন জুটির। শুরুতে রানের জন্য কিছুটা ধুঁকতে থাকেন মাহিদুল। তবে সোহান ছিলেন সাবলীল। পরপর তিন ওভারে তিনটি ছক্কা মেরে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক।
৩ ছক্কার সঙ্গে ৪টি চার মেরে ফিফটি ছুঁতে ৫৩ বল খেলেন সোহান। অন্য প্রান্তে মাহিদুলের পঞ্চাশ করতে লাগে ৬৮ বল।
ফিফটির পর দুজনই রানের গতি বাড়ানোয় মন দেন। জেডেন লেনক্সের পরপর দুই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন মাহিদুল। ক্লার্কের ওভারে মারেন জোড়া চার। লেনক্সের বল ছক্কায় ওড়ান সোহানও।
ক্লার্কের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফাইন লেগে ক্যাচ দেন সোহান। কিন্তু সহজ সুযোগ নিতে পারেননি ফোকস। ৮০ রানে জীবন পেয়ে পরের ওভারেই জশ ক্লার্কসনের পরপর দুই বল ছক্কায় ওড়ান অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান।
ছন্দময় পথচলায় ৯২ বলে লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সোহান।
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগে মাহিদুলও বেঁচে যান অল্পের জন্য। ক্লার্কসনের বলে পয়েন্টে ক্যাচ নিয়ে ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেননি কার্টার। ৯১ রানে জীবন পান মাহিদুল। এরপর আর ঝুঁকি না নিয়ে ১০৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে মাত্র ৩৫ বল খেলেন তিনি।
মাহিদুলের সেঞ্চুরির আগেই অবশ্য ড্রেসিং রুমে ফিরে যান সোহান। তার বিদায়ে ভাঙে ১৯৩ বলের ম্যারাথন জুটি। দেশের ক্রিকেটে এই সংস্করণে চতুর্থ উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে স্রেফ একটি।
২০১৩ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ২৭৬ রানের জুটি গড়েছিলেন মুমিনুল হক ও রোশেন সিলভা। এখন পর্যন্ত চতুর্থ উইকেট জুটির বিশ্ব রেকর্ড সেটি।
সোহানের বিদায়ের পর কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। আশা জাগিয়েও সাড়ে তিনশ ছোঁয়া হয়নি তাদের।
অবশ্য ৩৪৪ রানও কিউইদের জন্য অনেক বেশি বানিয়ে ছাড়েন তিন স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন, তানভির ইসলাম ও শামীম হোসেন।
আগের ম্যাচে নতুন বলে আগুন ঝরানো সৈয়দ খালেদ আহমেদ এ দিন ছিলেন বিবর্ণ। প্রথম স্পেলে শরিফুল ইসলামও তেমন কিছু করতে পারেননি। ইবাদত হোসেন চৌধুরির জায়গায় সুযোগ পাওয়া তৃতীয় পেসার রেজাউর রহমান রাজাও ছিলেন বেশ খরুচে।
শুরুর কয়েক ওভার দেখেশুনে কাটিয়ে পরে ঝড় তোলেন ফিলিপস। পঞ্চম ওভারে খালেদের বলে ছক্কার পর দুটি চার মারেন নিউ জিল্যান্ড জাতীয় দলের অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপসের দুই বছরের ছোট এই ভাই।
পরের ওভারে শরিফুলের বলে দুটি চার মারেন তিনি। তিন চারে তানভিরকে বোলিংয়ে স্বাগত জানান ফিলিপস। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি করেন তিনি।
অন্য প্রান্তে কার্টিস হিফি ধুঁকছিলেন। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে তাকে ফিরিয়ে ৪৬ বলে ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক।
তবু ঝড় থামাননি ফিলিপস। তানভিরের বল লং অন দিয়ে ওড়ান বিশাল ছক্কায়। পরের দুই ওভারে মারেন দুটি করে চার। পাওয়ার প্লে ৭০ রান করে ফেলে নিউ জিল্যান্ড।
১৫তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ফিলিপসকে আউট করেন শরিফুল। বড় শটের খোঁজে মিড অনে ক্যাচ দেন ১৪ ও ২ ছক্কায় ৫৪ বলে ৭৯ রান করা ওপেনার।
এরপর ম্যাট বয়েল, জো কার্টার ও নিক কেলি দ্রুত ফিরলে চাপে পড়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।
ছয় নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ক্লার্কসন। তবে তাকে বেশি দূর যেতে দেননি তানভির। বোল্ড হওয়ার আগে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৪ রান।
গত মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৮ বলে ৯৯ রানের ইনিংস খেলা মিচেল হে এবার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন। তবে ক্রমেই বাড়তে থাকে চাপ। দ্রুত রানের খোঁজে বড় শট খেলার চেষ্টায় ওয়াইড লং অনে এনামুলের দারুণ ক্যাচে বিদায় ঘটে তার। ২টি করে চার-ছক্কায় করেন ৪৪ বলে ৩৮ রান।
শেষ দিকে ৩৬ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ৯ নম্বরে নামা ক্লার্ক।
স্বাগতিকদের পক্ষে মোসাদ্দেক নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। এছাড়া শরিফুল, তানভির ও শামীমের শিকার ২টি করে উইকেট। একাদশে সুযোগ পাওয়ার ম্যাচে ১ উইকেট পেলেও ৬ ওভারে ৫৭ রান দেন রাজা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে শনিবার তৃতীয় ও শেষ এক দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ‘এ’: ৫০ ওভারে ৩৪৪/৫ (নাঈম ৪০, পারভেজ ৮, এনামুল ৩৯, মাহিদুল ১০৫, সোহান ১১২, মোসাদ্দেক ১৩*, শামীম ১*; ফোকস ১০-০-৭৪-১, ক্লার্ক ১০-০-৭১-২, ক্লার্কসন ৯-০-৭৬-০, লেনক্স ১০-০-৫০-০, আশোক ৮-০-৪৫-১, ফিলিপস ৩-০-২৩-০)
নিউ জিল্যান্ড ‘এ’: ৪৩.১ ওভারে ২৫৭ (ফিলিপস ৭৯, হিফি ৫, কার্টার ১৩, বয়েল ১, কেলি ১৪, ক্লার্কসন ৩৪, হে ৩৮, ফোকস ১১, ক্লার্ক ৩৯*, আশোক ১৩, লেনক্স ১; খালেদ ৭-০-৫৪-০, শরিফুল ৭-০-২৯-২, তানভির ১০-০-৫৫-২, মোসাদ্দেক ১০-১-৫০-৩, রাজা ৬-০-৫৭-১, শামীম ৩.১-১-৯-২)
ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ ৮৭ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ‘এ’ ২-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: নুরুল হাসান সোহান