Published : 17 May 2025, 07:48 PM
দিনের আলো ততক্ষণে নিবু নবু। নিউ জিল্যান্ড 'এ' দলের হতাশার আঁধার বাড়িয়ে ম্যাচ ড্রয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মাহিদুল ইসলাম ও হাসান মুরাদ। ফ্লাডলাইটের কৃত্রিম আলোয় তখনই যেন জাদু ঝাঁপি খুলে দিলেন আদিত্য আশোক। চার বলের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে চোখের পলকে ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের মোড়। দুই ওভার পর শেষ ব্যাটসম্যানকে আউট করে উল্লাসে মেতে উঠল কিউইরা।
পরাজয় এড়াতে ৪ উইকেট বাকি থাকতে প্রায় ২৫ ওভার কাটাতে হতো বাংলাদেশ 'এ' দলের। সপ্তম উইকেটে মাহিদুল ও মুরাদ মিলে নির্বিঘ্নে পার করেন ১২ ওভারের বেশি। শেষ ঘণ্টায় আশোকের ওই ওভারে সব সম্ভাবনার অপমৃত্যু। পাঁচ রানের মধ্যে হারায় তারা শেষ চার উইকেট।
অথচ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টের শেষ দিনের শুরুতে বাংলাদেশের জয়ের ছবি আঁকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন দুই স্পিনার মুরাদ ও নাঈম হাসান। দুজন মিলে মাত্র ৪১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট নিলে ২৫৭ রানে গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। জয়ের জন্য বাংলাদেশ পায় ২৪৬ রানের লক্ষ্য।
প্রায় আড়াই সেশন ও ৭৫ ওভারে এই লক্ষ্য তাড়ায় ওভারপ্রতি সাড়ে তিনের কম রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। একপর্যায়ে সেই পথে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল তারা। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কেউই ইনিংস বড় করতে না পারায় ১৭৫ রানে গুটিয়ে যায় নুরুল হাসান সোহানের দল। ৭০ রানের জয়ে সিরিজে লিড নেয় নিউ জিল্যান্ড।
শেষ বিকেলে বাংলাদেশের ম্যাচ বাঁচানোর আশা মাড়িয়ে মাত্র ৫৪ রানে ৫ উইকেট নেন ২২ বছর বয়সী আশোক। ১৮ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এ নিয়ে পাঁচবার এই স্বাদ পেলেন নিউ জিল্যান্ডের হয়ে এরই মধ্যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলা লেগ স্পিনার।
দিনের শুরুতে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান মুরাদ। বাঁহাতি স্পিনে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। ৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১৩ বার ৫ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। নাঈম ৭৩ রানে ৪ উইকেট নিলে বাংলাদেশকে বেশি বড় লক্ষ্য দিতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড।
আড়াইশ ছুঁইছুঁই লক্ষ্যে প্রথম বলেই চার মারেন এনামুল হক। পরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কায় ওড়ান অভিজ্ঞ ওপেনার। এক বল পর স্কয়ার ড্রাইভে মারেন আরেকটি বাউন্ডারি।
উড়ন্ত শুরুর পর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি এনামুল। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে তাড়া করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগে একই পথ ধরেন মাহমুদুল হাসান জয় ও অমিত হাসান।
অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে বাজে শটে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন জয়। বাঁহাতি স্পিনার জেডন লেনক্সের আর্ম বলে এলবিডব্লিউ হন ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক আসরে রানের ফোয়ারা ছোটানো অমিত।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে পারত আরও। ১ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান জাকির হাসান। পরে আরও একাধিকবার অল্পের জন্য স্লিপের আশপাশ দিয়ে চলে যায় বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল।
দ্বিতীয় সেশনে ফিরে ধীরে ধীরে ছন্দে খুঁজে পান জাকির। অন্য প্রান্তে মাহিদুল শুরু থেকেই করেন জমাট ব্যাটিং। দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ভালোভাবেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশের ইনিংস।
হঠাৎই আশোকের ঝুলিয়ে করা ডেলিভারি ড্রাইভ করে শর্ট কাভারে ক্যাচ দেন জাকির। সমাপ্তি ঘটে তার ৬ চার ও ১ ছক্কায় খেলা ৮৯ বলে ৫০ রানের ইনিংসের।
পরে জুটি বাধেন মাহিদুল ও সোহান। প্রথম ইনিংসের মতোই ইতিবাচক শুরু করেন সোহান। প্রথম চার বলে দুটি চার মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১০ বলে করে ফেলেন ১৪ রান। এরপর কিছুটা খোলসে ঢুকে দেখেশুনে খেলতে থাকেন তিনি। চা বিরতির আগে আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।
প্রথম তিন দিনের মতো শেষ দিনও বাগড়া বাধায় প্রকৃতি। শেষ সেশনের খেলা শুরুর আগে বৃষ্টি নামলে প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। লম্বা বিরতিতে যেন মনোযোগও কিছুটা নড়ে যায় ব্যাটসম্যানদের।
লেনক্সের সোজা যাওয়া ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন সোহান। আগের ইনিংসে ঝড়ো সেঞ্চুরি করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ২৭ রানে।
পরের ওভারে নাঈমও ফিরে গেলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে মুরাদকে নিয়ে কিছুক্ষণ লড়াই করেন মাহিদুল। ৫ চারে ১৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার।
এরপর আশোকের সেই ওভার। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে স্লিপে ধরা পড়েন মুরাদ। এক বল পর এনামুল হকও ক্যাচ দেন স্লিপে। পরে ইবাদত হোসেনকে এলবিডব্লিউ করেন তরুণ লেগ স্পিনার। হ্যাটট্রিক বলটি গুগলি করেন আশোক। কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
কিন্তু দুই ওভার পর লেনক্সের জোরের ওপর করা বল আর ফেরাতে পারেননি বাংলাদেশের ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল স্লিপে এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রিস মারিয়ু। নন স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দলের পরাজয় দেখেন ৫৭ রান করা মাহিদুল।
সোহানের বিদায় থেকে ৩১ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ ‘এ।’
আশোকের ৫ উইকেট ছাড়াও ৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন লেনক্স।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার শুরু দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড 'এ' ১ম ইনিংস: ২৫৬
বাংলাদেশ 'এ' ১ম ইনিংস: ২৬৮
নিউ জিল্যান্ড 'এ' ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২১৬/৫) ৮০.১ ওভারে ২৫৭ (কেলি ১২২, হে ১৮, ফক্সক্রফট ২১, ক্লার্ক ১, আশোক ৪, লেনক্স ৩*; খালেদ ১২-০-৩৫-১, এনামুল ৫-০-৪১-০, নাঈম ২৯-৩-৭৩-৪, ইবাদত ৯-২-৩৩-০, মুরাদ ২৪.১-১-৬১-৫, জয় ১-১-০-০)
বাংলাদেশ 'এ' ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৪৬) ৬৫.২ ওভারে ১৭৫ (বিজয় ১৬, জাকির ৫০, জয় ৪, অমিত ৫, মাহিদুল ৫৭*, সোহান ২৭, নাঈম ৬, মুরাদ ৭, এনামুল ০, ইবাদত ০, খালেদ ১; ক্লার্ক ৮-১-৪০-১, ক্লার্কসন ৯-১-২৪-১, লেনক্স ২৩.২-৬-৩৮-৩, ফক্সক্রফট ৮-৩-১৮-০, আশোক ১৭-৩-৫৪-৫)
ফল: নিউ জিল্যান্ড 'এ' ৭০ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড 'এ' ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: আদিত্য আশোক