Published : 26 Aug 2024, 01:12 AM
আগে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক হলেও কখনও পানি ওঠেনি লক্মীনধর দাশের ঘরে, ফলে এবার পানি বাড়ার সময়ও নির্ভয়েই ছিলেন।
তার বাড়ির পাশেই মুহুরী নদীতে পানি ফুলেফেঁপে ওঠে মঙ্গলবার, পরদিন বুধবার দুপুর থেকে পানি আরও বাড়ছিল। এরপর সন্ধ্যায় ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
সত্তরোর্ধ জেলে লক্মীনধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পানি এত বেশি হয়ে গেছে যে, এক কাপড়েই সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। সবাই মিলে গিয়ে উঠি বোর্ড অফিসে (ইউনিয়ন পরিষদ)।”
লক্মীনধরের বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর জেলেপাড়ায়। মুহুরী নদীর খুব কাছেই তার ঘর। স্ত্রী-সন্তানসহ ১০ জন থাকেন সেখানে।
বন্যায় ঘর তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নেওয়া লক্মীনধর ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ফাজিলপুর বালুর মহাল সংলগ্ন রেল লাইনে।
রোববার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এত পানি জীবনেও দেখিনি। আমাদের ফেনীতে এত পানি হয় না। ৮৮’র বন্যায়ও আমাদের ঘর ডুবেনি। এবার চোখের নিমিষেই সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল।”
পানি আর নদীর সঙ্গেই যার মিতালি, নদীই উপার্জনের ভরসা, সেই লক্ষ্মীনধর এবারের বন্যার ভয়াবহতা দেখে ভরকে গেছেন।
উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে গত কয়েকদিন ধরে ভাসছে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। এর মধ্যে ফেনীতে সবথেকে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ফেনীর মুহুরী সেতু সংলগ্ন বালুর মহালের কাছেই বাড়ি ট্রাকচালক মো. ইউসুফের। বৃদ্ধ লক্মীনধরের সুরেই একই কথা জানালেন তিনি।
ইউসুফ বলেন, “মঙ্গলবার রাত থেকে পানি আসা শুরু। বুধবার দুপুরের পর থেকে পানি বেড়ে গেছে। পুরো পানির ঢল এসেছে উত্তর দিক থেকে। এত পানির স্রোত, না দেখলে আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না।
“পুরো ঘর পানির নিচে। এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে বালুর মহালের উঁচু জায়গায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। আমার জীবনে ফেনীতে এত পানি হয়েছে বলে শুনিনি। এ বানের পানি সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।”
ঢলের পানি ও অতিবৃষ্টিতে গত বুধবার থেকে তলিয়ে গেছে ফেনী। জেলার সদর উপজেলা থেকে শুরু করে ছয়টি উপজেলায় তলিয়ে গেছে পানির নিচে। সবকিছুই যেন পানিতে ভাসছে।
ফেনীর মহাসড়ক থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে ফাজিলপুর রেল স্টেশন। সেখানেও আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশ মানুষ।
মহাসড়ক থেকে স্টেশন সড়ক পাঁচ দিন ধরে কোথাও বুক আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে। পানিতে হেঁটে কিংবা রেল লাইন ধরে মুহুরি ব্রিজের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন লোকজন।
ফাজিলপুর স্টেশনের শাহ আলমের দোকানে বসে গল্প করছিলেন কয়েক যুবক। পাশে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ আরও কয়েকজন।
দোকানি শাহ আলম বলেন, “১৯৮৮ সালের বন্যা আমরা দেখেছি। দেশের অনেক জায়গায় ক্ষয়-ক্ষতি হলেও ফেনীতে কিছু হয়নি। নিচু জায়গাগুলোর ঘরের উঠান পর্যন্ত পানি হয়েছে।
“ওই বছর বন্যার পানি দুয়েক দিনের মধ্যে নেমে গিয়েছিল। তবে এবছর পানিও বেশি, ক্ষতিও বেশি। ফেনীর মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি, এত পানি কখনও দেখেনি ফেনীর মানুষ।”
দুই দিনের বেশি পানি বাড়ার পর শনিবার বিকাল থেকে পানি কমছে ফেনীতে। স্থানীয়রা জানান, আগের দিনের চেয়ে রোববার অন্তত চার ফুট পানি কমেছে।
পানি নেমে গেলে বন্যার ক্ষত সেরে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা লক্মীনধর ও শাহ আলমদের।