Published : 25 May 2025, 06:08 PM
হয়রানির কারণে মানুষ এখনো সেবা নিতে অফিসে যেতে ভয় পায় জানিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন সেবাপ্রার্থীদের ডিজিটাল সেবা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণে তিনদিনব্যাপী ভূমি মেলা-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “গোটা বাংলাদেশ একটা ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মধ্যে আছে। আমরা এখন অফিসে আর যেতে চাই না। আমার যে অভিজ্ঞতা, দেখা গেল আমার কোনো আত্মীয় ভূমি উন্নয়ন কর দেবে, নামজারি দেবে। আমাকে সকাল বিকাল পীড়াপীড়ি করছে, একটু তহসিলদার সাহেবকে বলে দেন না। যেন আমার সঙ্গে একটু ভালো করে কথা বলে।
“এখানে ডিআইজি মহোদয় আছেন, উনাকে সারাদিন উনার আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসী ফোন করে- ‘থানায় একটু বলে দিবেন, আমার একটু কাজ আছে’। মানে মানুষজন এখনো অফিসে যেতে ভয় পায়।”
তিনি বলেন, “যতদিন আপনি সেবা নিতে আমাদের কাছে আসবেন, সামনা সামনি আসবেন, ততদিন আপনাকে আসলে হয়রানির শিকার হতেই হবে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আপনি আপনার কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকবেন, অবসর সময়ে ডিজিটাল কোনোকিছু ব্যবহার করে আবেদন করে আপনার সেবাটা পেয়ে যাবেন। এটা সবচেয়ে আদর্শ পন্থা, যেটা আমরা সবাই মনে মনে চাই।”
জিয়াউদ্দীন বলেন, “আমি চাই থানা থেকে একটা সেবা পাব, কিন্তু থানায় যাব না। ভূমি থেকে একটা সেবা পাব, ভূমিতে যাব না। এভাবে বাংলাদেশে যত অফিস রয়েছে সবগুলো ধীরে ধীরে সেই অবস্থায় নিয়ে যাব। সবাই সবকিছু পেয়ে যাবেন কিন্তু কোন অফিসে ধর্না দিতে যেতে হবে না। আর যখন কোনো অফিসে ধর্না দিতে না যাবেন, তখন আপনাকে কোনো হয়রানির শিকারও হতে হবে না।”
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ বলেন, “দেশে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ কম বলে জমির চাহিদা বেশি। তাই এ নিয়ে বিরোধও বেশি। দেশে মোট মামলা ৩৫ লাখ তার মধ্যে বেশি জমি সংক্রান্ত। যদি এ বিরোধ নিষ্পত্তি করা যেত অনেক অপরাধ কমে যেত। সবার আগে ভূমি সংস্কার দরকার।
“ডিজিটাল সেবাগুলোর সাথে অভ্যস্ত হতে হবে। অনেকের ভয় থাকে, কীভাবে করব। একটু অভ্যস্ত হয়ে উঠলে সবাই পারবেন। আমরা সেবা দিতে চাই। মানুষের অনেক প্রত্যাশা জানি, তবে আমাদেরও অত সেবা দেবার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমরা সেবা দিতে সবসময় চেষ্টা করি।”
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মনোয়ারা বেগম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা গম্ভীরা গানের মাধ্যমে ভূমি সেবার ডিজিটাল সুবিধা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে নগরীর ছয়টি ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্রের অনুমতিপত্র হস্তান্তর করা হয়। ছয়টি এসি ল্যান্ড অফিসের কাছাকাছি এসব কেন্দ্রে ভূমি সংক্রান্ত সব আবেদন করা যাবে।
মেলায় জেলা রেকর্ড রুম শাখা ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপ ভূমি সংস্কার কমিশনের কার্যালয়, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস এবং আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, সদর, কাট্টলী, চান্দগাঁও এবং পতেঙ্গা এই ছয়টি ভূমি অফিসের স্টল আছে।