Published : 31 Aug 2024, 08:11 PM
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসনের কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।
পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দও পর্যাপ্ত আছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আগে ত্রাণ কার্যক্রমটা শেষ হোক, এটাই প্রথম। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে…আমরা পর্যায়ক্রমে অ্যাড্রেস করছি। এরপরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
“বন্যায় পানিবাহিত রোগ হচ্ছে নানা রকমের। সেগুলোকে কীভাবে অ্যাড্রেস করা যাবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটার পর একটা করেই আসবে।”
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন দুর্যোগ উপদেষ্টা।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব স্থায়ী পুনর্বাসন যাতে আমরা শুরু করতে পারি…। এখানে ব্যাংক জড়িত আছে। অর্থ ঋণদানকারী সংস্থাগুলো জড়িত আছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো জড়িত আছে। যেগুলোকে আপনারা এনজিও বলেন তারাও জড়িত থাকবে। সবাই জড়িত থাকবে। সবাই মিলেই এটা আমরা করব।”
পুনর্বাসনে সরকারের বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক ই আজম বলেন, “পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। আমি টাকার অঙ্ক বলতে পারব না, তবে অভাব নাই।”
তিনি বলেন, “পানি নেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্তর আছে। যাদের ঘরবাড়ি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে তাদের বসতির জন্য ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আর যাদের আংশিক হয়েছে, তারা হয়ত এখনই ফেরত যাবে। এসব পর্যায়ক্রমে হবে।”
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, মাছ চাষী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্রঋণের সুদ মওকুফ বা সুদের হার কমানোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- সেই প্রসঙ্গে বলেন, “আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা যুক্ত করেছি। আপনি যা বলেছেন, সেটাও ওখানে বিবেচ্য হবে।
“সবকিছুই এড্রেস করছি। মাছের ঘের, পোল্ট্রি ফার্ম, যেখানে যেখানে ক্ষতি হয়েছে। সব ক্ষতিই নিরূপিত হবে। সেই নিরিখেই পুনর্বাসন প্রক্রিয়াগুলো আমরা করব।”
‘বন্যা-ত্রাণের কাজে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে’
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় অগাস্টের মাঝামাঝিতে ডুবে যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলা। বন্যা সবথেকে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ফেনীতে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফেনীতে মারা গেছে ২৩ জন।
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, “আমি যেখানে দেখেছি, সেখানে পানিবন্দি মানুষ এখনও রয়েছে। সেখানে শুকনো এবং রান্না করা খাবার বিপুল পরিমাণ মানুষ এখনও নিয়ে যাচ্ছে।
“এটা সত্য যে রাস্তা দুর্গম। এ সমস্ত অঞ্চলে নৌকার কালচার না থাকার কারণে নতুন করে দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা, সেনা বাহিনীর বোট ইত্যাদি দিয়ে দূরবর্তী মানুষের কাছে যেতে সময় লেগেছে অনেক।”
ত্রাণ পৌঁছে দিতে আন্তরিকতার কমতি ছিল না মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “এটা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে। এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সমাজ। অদ্ভুত এক পরিবর্তন হয়েছে দেশে। যেটা আমরা উপলব্ধি করেছি। সেটা হচ্ছে মানুষের উচ্ছ্বাস।
“মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছে এই বন্যা ত্রাণের কাজে এবং সেটা সরকারের জন্য একটা মস্ত বড় শক্তি। সরকারের পক্ষে বন্যার্তদের কাছে যাওয়া, তাদের সেবা দেওয়া সহজ হয়েছে।”
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি জানেন উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, “আগামী যে পুনর্বাসন কর্মসূচি হবে, সেটার একটা ধারণা পেতে চাইছিলাম। মাঠপর্যায়ে কী পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তার ধারণা নিয়েছি। এর নিরিখে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া গ্রহণ ও পরিচালনা করা হবে।”