Published : 10 Oct 2023, 08:15 PM
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন খাল থেকে এক লাইটারেজ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, মারধর করে তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার কর্ণফুলী নদীর সংযোগ শিকলবাহা খালের কালারপুল ব্রিজ এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার করা লাশটি ফজলুল করিম শাকিল (২১) নামে এক লাইটারেজ শ্রমিকের। তিনি ‘এমভি তারিবুন নাজাত-৩’ নামে একটি লাইটারেজের সুকানি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সদরঘাট নৌ থানার ওসি একরাম উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শিকলবাহা খালের কালারপুল ব্রিজ এলাকা এক লাইটারেজ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি রোববার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে।
সকালে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
ফজলুল করিম শাকিলকে মারধর করার বিষয়টি নিয়ে ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, “পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নিতে চেয়েছিলেন। আমরা তবুও ময়নাতদন্ত করিয়েছি। প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে ফজুলল করিমের।”
ওসি জানান, রোববার রাতে এস আলম সুগার মিলের জন্য আমদানি করা লাইটারেজ থেকে চিনি চুরির অভিযোগে সেখানকার সিকিউরিটি অফিসার নগরীর বাকলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। লাইটারেজের হেজের ওয়্যারসিল কেটে চিনির বস্তা ভরে পাচার করে দেয়ার সময় পাঁচজনকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় সেখানে।
মামলার প্রেক্ষিতে লাইটারেজের পাঁচ জনকে ৩৫ বস্তা চিনিসহ গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।
নিহতের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে লাইটারেজ জাহাজের মাস্টার তাকে ফোন করে ফজলুল করিম নিখোঁজ থাকার তথ্য জানায়। এরপর তারা এসে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়েও সোমবার ফজলুলকে পাওয়া যায়নি।
জাহেদুল বলেন, “এস আলম সুগার মিলের চিনি নিয়ে আমার ভাইদের লাইটারেজটি সেখানে গিয়েছিল। জানতে পেরেছি রোববার রাত দেড়টার দিকে বোট নিয়ে কিছু লোকজন লাইটারেজে উঠে তাদের মারধর করে। এসময় আমার ভাইসহ কয়েকজন নদীতে লাফ দেয়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল।”
এদিকে লাইটারেজে উঠে শ্রমিকদের মারধরকারীরা এস আলম গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মী বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নদীতে এসআলম গ্রুপের মালামাল বহনকারী লাইটারেজ জাহাজগুলো পাহাড়া দেয়ার জন্য তাদের নিজস্ব কিছু সিকিউরিটি টহল দেয়। রোববার রাতে তরিবুল নাজাত লাইটারেজ থেকে চিনি চুরি করে বিক্রি করে দিচ্ছে-এমন তথ্যে সিকিউরিটিরা জাহাজে উঠে শ্রমিকদের মারধর করে। ”
এস আলম সুগার মিলের সিকিউরিটি অফিসার মো. নুর ছাপা বাদি হয়ে সোমবার বাকলিয়া থানায় করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, এসআলম সুগার মিলের জন্য আমদানি করা চিনি নিয়ে ‘এমভি তারিবুন নাজাত-৩’ লাইটারেজটি কর্ণফুলী নদীর বাকলিয়ার চর এলাকায় অবস্থান করছিল। সেখান থেকে চিনি চুরি করা হচ্ছে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যায়।
“রাত আড়াইটার দিকে লাইটারেজে গিয়ে দেখা যায়, জাহাজের শ্রমিকদের সহযোগিতায় সেখানকার হেজের ওয়্যারসিল কেটে হেজ থেকে বস্তায় চিনি ভর্তি করে ডেকের উপরে রাখা হয়েছে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে কিছু লোক লাফ দিয়ে নদীতে সাঁতার কেটে পালিয়ে যায়।”
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিষয়টি সদরঘাট নৌ পুলিশকে অবহিত করলে তাদের টহল দল এসে জাহাজে অবস্থানরত সুকানি সাখাওয়াত হোসেন (৩০), লস্কর সিরাজুল ইসলাম (৩৫), নূর উদ্দিন (৩৮), আশরাফ উদ্দিন (২৮) ও মো. আরিফকে আটক করে হেফাজতে নেয়। তাদের দেখানো মতে ৩৫ বস্তা চিনিও জব্দ করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সুকানি ফজলুল করিম শাকিল ও বাবুর্চি ফজলুর রহমানসহ অজ্ঞাত তিন/চার জন বহিরাগত নদীতে লাফ দিয়ে সাঁতার কেটে পালিয়ে যায় বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।