Published : 11 Jun 2025, 12:29 AM
চট্টগ্রামের সড়কে কোরবানির পশুর বহু চামড়া নষ্ট হওয়ার পরও আড়তদাররা বলছেন, তাদের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে।
এবার প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার চামড়া সংগ্রহের দাবি করেছেন এখানকার আড়তদাররা।
কোরবানির আগে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা সাড়ে ৪ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। তবে সবমিলিয়ে ৪ লাখ পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ হতে পারে বলে ধারণা ছিল তাদের।
বাংলাদেশে সারা বছর যত পশু জবাই হয়, তার মোটামুটি অর্ধেক হয় কোরবানিতে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। আবার বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দান করা চামড়াগুলোও কর্তৃপক্ষ আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন।
চামড়া ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য এবার অবশ্য মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সরকার বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করেছে।
আড়তদাররা হাতে চামড়া পাওয়ার পর লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে।
মঙ্গলবার ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যববসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের’ সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবছর চট্টগ্রাম মহানগরী ও ১৬টি উপজেলা মিলে তারা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৩৫১টি কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবছর চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে গরুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩০০টি। আর বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১টি।
“সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় শুধু গরুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৩৫১টি।”
এদিকে গরুর চামড়া ছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় ১০ হাজার ৫০০টি মহিষ ও ৫২ হাজার ৫০০টি ছাগলের চামড়া সংগ্রহের তথ্য দেন মুসলিম উদ্দিন।
ঈদের আগে তিনি বলেছিলেন, “এবছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি সাড়ে চার লাখের। তবে সেটি চার লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে আমাদের ধারণা।”
গেল বছর চট্টগ্রাম জেলায় কোরবানির চামড়া সংগ্রহ হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি। যার মধ্যে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১৫০টি গরুর, ১২ হাজার ২০০টি মহিষের এবং ৫১ হাজার ৬০০টি ছাগলের চামড়া ছিল।
এবার চট্টগ্রাম নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে সংগ্রহ করা কোরবানির চামড়া কাঙ্খিত দামে বিক্রি করতে না পেরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সেগুলো পথে ফেলে দিয়েছিলেন। তাদের ফেলে যাওয়া চামড়া যেমন সড়কে পচেছে, তেমনি শ্রমিক সংকটে লবণ না মেশাতে পেরে আড়াতদারদেরও সংগ্রহ করা অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে দাবি তারা দাবি করেছেন।
মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল আড়তদাররা ‘সিন্ডিকেট’ করে চামড়ার দরপতন ঘটিয়েছে।
রোববার নগরীর বহদ্দারহাট, চৌমুহুনী, আতুরার ডিপো এলাকায় বিপুল পরিমাণ চামড়া সড়কে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। যা পরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সরিয়ে নেন।
ফড়িয়াদের দাবি মানতে নারাজ আড়াতদাররা
আড়তদার সমিতির নেতা মুসলিমের দাবি, “যতটা বলা হচ্ছে, চামড়া ততটা নষ্ট হয়নি।
“এবারের আবহাওয়াটা চামড়া অনুকূলে ছিল না। অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক চামড়া দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী আবার বেশি লাভের আশায় চামড়া ধরে রেখেছিল। যার কারণে তাদের কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে।”
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কেনার কথা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
আড়তদারদের কাছ থেকে লবণযুক্ত চামড়া বর্গফুট হিসেবে কেনেন ট্যানাররা। আর আড়তদার ও ফড়িয়ারা চামড়া কেনেন গড়পড়তা আকার ধরে।
পুরানো খবর:
চট্টগ্রামে হাজার হাজার চামড়া নষ্ট হলো কেন?
চট্টগ্রামে চামড়ার দাম 'কম', আড়তদারদের দুষছেন ফড়িয়ারা
কোরবানি: সাড়ে চার লাখ চামড়া কেনার লক্ষ্য চট্টগ্রামের আড়তদারদের