Published : 22 Oct 2024, 07:55 PM
আদালতে বাদীর আইনজীবীর সঙ্গে বিতণ্ডার ঘটনায় চট্টগ্রামের একজন মহানগর হাকিমকে ‘আপাতত’ ছুটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে মহানগর হাকিম মো. অলি উল্লাহর আদালতে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পিপি মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাকের সাথে ওই বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। তিনি বাদীর আইনজীবী হিসেবে একটি মামলার আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন।
বাক-বিতণ্ডার পর হাকিম অলি উল্লাহ এজলাস থেকে নেমে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে মুখ্য মহানগর হাকিমকে অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের অধীন ১০ জন বিচারকের সবাই এজলাস ছেড়ে যান।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারককে বদলি করার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। এরপরে তারা মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রবিউল আলমের সঙ্গে এবং পরে মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনের সঙ্গেও দেখা করেন।
জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ আমাদের সেক্রেটারির সাথে যে আচরণ করেছেন, তাতে আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমরা বলেছি, আপাতত উনাকে ছুটিতে পাঠাতে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন দেখা যাবে। কাল থেকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। কোনো সমস্যা হবে না আর।”
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির নেছার আহাম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু ‘জানেন না’ বলে মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এদিকে মহানগর দায়রা জজ ও মুখ্য মহানগর হাকিমের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির সভার পর মঙ্গলবার বিকেলে আবার বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেন মহানগর হাকিমরা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, “সকালে ওই ঘটনার পর এজলাস থেকে নেমে যান ম্যাজিস্ট্রেটরা। পরে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আইনজীবী এবং বিচারকেরা। বৈঠক শেষে বিকালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।”
তবে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ মো. অলি উল্লাহ মঙ্গলবার বিকেলে আর এজলাসে যাননি বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আইনজীবী আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৭ জুলাই মুরাদপুরের ঘটনায় আহত সোয়েব ইমরানের একটি মামলার আবেদন নিয়ে আমরা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে যাই।
“বাদীর পিঠে এখনো গুলির ক্ষত আছে। সব জানিয়ে মামলাটি যাতে থানায় এফআইআর হিসেবে নেওয়া হয়, সেই আদেশ চেয়েছিলাম। এরপর নিয়ম অনুসারে বাদী শপথ নিয়ে আদালতকে ১২-১৪ জন আসামির নাম বলেন। কিন্তু বিচারক বাদীর কাছে সকল আসামির নাম জানতে চান।”
জেলা পিপি আশরাফ বলেন, “তখন আমি বলি, এত নাম বলা সময়ের ব্যাপার। ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম দেওয়া হয়েছে। সব নাম তো আসামি বলতে পারবে না। এরপর আবারও আদেশ চাই।
“এরপর বিচারক বলেন, ‘আমার কাজ আমাকে করতে দেন।’ তারপর তিনি মামলার আবেদনটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞতাও জানাই। এসময় তিনি বলেন, ‘আমার কোর্টে জোর খাটানোর চেষ্টা করবেন না’। তখন আমি বলি, জোর কোথায় খাটালাম?”
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনার (হাকিম) বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। সমিতির পক্ষ থেকে আমরা উনার আদালত বর্জন করলাম। সিএমএম মহোদয়কে দুদিন আগেও টেলিফোনে আমি জানিয়েছি, এই ম্যাজিস্ট্রেট মিসবিহেভ করেন। এই সপ্তাহর মধ্যে উনাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তা না হলে আমরা আদালত বর্জন করব।”
গত ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়া চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩টি পদে জয়ী হয়।
৫ অগাস্টের ছাত্র অভুত্থানের পর ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের আগের পিপি-এপিপিদের বাদ দিয়ে নতুন ৩৪৬ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তখনই জেলা পিপির দায়িত্ব পান আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক।
আইনজীবীর সঙ্গে বিতণ্ডা, চট্টগ্রামের হাকিম আদালতে বিচার কাজ স্থগিত