Published : 03 Jun 2025, 11:48 PM
এবারের কোরবানির ঈদে সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা।
তাদের ভাষ্য, গেল বছর তারা সাড়ে তিন লাখের বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এবার সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করা হলেও তা চার লাখের মত হতে পারে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সংগৃহীত তিন লাখ ৬০ হাজার ৯৫০টি চামড়ার মধ্যে তিন লাখই ছিল গরুর।
আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, “এবছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি সাড়ে চার লাখের। তবে সেটি চার লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে আমাদের ধারণা।”
তিনি জানান, তাদের সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১১২। তাদের মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করেন জনা ত্রিশেক আড়তদার। অন্যরা নানা কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
আড়তদার মুসলিম বলেন, “আগে চট্টগ্রামে ২২টি ট্যানারি ছিল; এখন আছে একটি। এ ট্যানারি আমাদের কাছ থেকে ৪০ হাজারের মত চামড়া সংগ্রহ করে। বাকি চামড়া বিক্রির জন্য আমরা ঢাকার ট্যানারিগুলোর উপর নির্ভরশীল।
“ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের আড়তদারদের অনেক টাকা পাওনা আছে। তবে ২০২০ সালের পর থেকে তারা আগের বকেয়াগুলো রেখে নতুনগুলো পরিশোধ করছে; যার কারণে আমাদের কিছুটা স্বস্তি এসেছে।”
বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা- তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে জবাই করা পশু থেকে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম।
আগামী ৭ জুন কোরবানির ঈদ হবে। তার পরের দুই দিনও পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।
ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম ঠিক করে দিয়েছে সরকার; এবার গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গতবছর যা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল।
এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা, যা গতবার ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা।
আড়ৎদার সমিতির সাবেক নেতা মুসলিম উদ্দিন বলেন, “সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটি সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না।
“তারা মনে করেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।”
লবণের দাম নিয়ে স্বস্তি
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদারদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১০০টি চামড়া সংরক্ষণের জন্য এক বস্তা (৭৪ কেজি) লবণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রতিবছর কোরবানির ঈদের মাস খানেক আগে থেকে বাজারে লবণের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এবছর কিছুটা বাড়ানো হলেও গত বছরগুলোর তুলনায় কম বলে জানান আড়তদাররা। তারা বলছেন, গত বছর প্রতি বস্তা লবণের দাম ৯৩০ টাকা হলেও এবছর তা মিলছে সাড়ে ৮০০ টাকায়।
এবারও মাঠে থাকবে গাউসিয়া কমিটি
‘ন্যায্য দাম’ না পাওয়ার অজুহাতে ২০১৯ সালে মৌসুমী ক্রেতারা সড়কে ফেলে রাখে কোরবানির পশুর চামড়া। ফলে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়েছিল। এর পরের বছর মহামারী ও লোকসানের শঙ্কায় একপ্রকার অদৃশ্য হয়ে পড়েছিলেন কোরবানি কেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
২০২১ সালে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীর দেখা মিললেও তারা আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই চামড়া কিনেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন।
তবে ২০২২ সাল থেকে গাউসিয়া কমিটি চামড়া সংগ্রহ করায় অনেকটা উধাও ছিল ফড়িয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহম্মদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্টের অধীনে দেশে পরিচালিত হয় দুই শতাধিক সুন্নিয়া মাদরাসা। এ ট্রাস্টের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নাম গাউসিয়া কমিটি। মহামারীর মধ্যে কোভিডে মৃতদের শেষ কাজের মধ্য দিয়ে সংগঠনটি আলোচনায় আসে।
আগের কয়েক বছরের মতো এবারও চামড়া সংগ্রহে গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মুখপাত্র মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত বছরগুলোর মত এবারও তারা বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হবে। মহানগরীর পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমাদের সদস্যরা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করবে।
“ইতোমধ্যে পত্রিকায় আমরা বিজ্ঞাপন দিয়েছি। যিনি বেশ দর দেবেন, তিনি চামড়াগুলো কিনে নেবেন। যে আড়তদার আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে নিবেন, তিনি তার লোকবল দিয়ে সেগুলোতে লবণ দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করবেন।”
গতবারের মত এবারও মুরাদপুর সুন্নিয়া মাদ্রাসা মাঠে চামড়া সংরক্ষণ করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “যে আড়তদার আমাদের কাছ থেকে চামড়াগুলো কিনে নেবেন, তার নির্ধারণ করা স্থানে সেগুলো সংরক্ষণ করা হবে।”
চামড়া সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে ১০০টি ও বিভিন্ন উপজেলায় আরও ১০০টিসহ মোট ২০০ গাড়ি থাকবে।
পুরানো খবর:
কোরবানি: বর্গফুটে ৫ টাকা বাড়িয়ে গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ