Published : 22 Mar 2025, 03:31 PM
এভারেস্ট আর লোৎসে জয়ের পর এবার পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বত অন্নপূর্ণা-১ অভিযানে যাচ্ছেন পর্বতারোহী বাবর আলী। এ যাত্রা সফল হলে এটি হবে- আট হাজার মিটারের বেশি তৃতীয় কোনো পর্বত আরোহণ।
বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক শৃঙ্গ অন্নপূর্ণা-১ এ এটিই হতে চলেছে বাংলাদেশ থেকে প্রথম অভিযান।
এ অভিযানের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে।
অভিযান শুরুর জন্য বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন আগামী সোমবার। নেপালের গণ্ডকী প্রদেশে অবস্থিত অন্নপূর্ণা-১ এর উচ্চতা ২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট বা ৮ হাজার ৯১ মিটার।
বাবর আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানের পর থেকেই বিশ্বের ১৪টি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহনের ইচ্ছা পোষণ করছি। অন্নপূর্ণা-১ সেই লক্ষ্যের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে বাকি পর্বতগুলোর চূড়া ছুঁতে চেষ্টা করব। আমাদের দেশ থেকে এরকম প্রচেষ্টা কখনো হয়নি। এমনকি ভারতে কেউ নেই- যিনি ১৪টি আট হাজার মিটার (পর্বত) আরোহণ করেছেন।
“অন্নপূর্ণা-১ অভিযান নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। এখানে সামিটের সাথে পর্বতে প্রাণ হারানো আরোহীদের অনুপাত লক্ষ্য করলেই এই পর্বতারোহণের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। আমি সবসময় নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি বলেই অন্নপূর্ণা-১ এর মতো শৃঙ্গ বেছে নিয়েছি।”
পর্বতের গায়ে খাড়া ঢাল, তুষারধসের প্রবণতা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়ার কারণে অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় পর্বতারোহীদের কাছে।
বাবর আলী বলেন, “অন্নপূর্ণা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প পৃথিবীর জনপ্রিয়তম বেস ক্যাম্প। অন্নপূর্ণা-১ এ সামিটের তুলনায় ডেথ রেট খুব হাই। কয়েকটি বিষয় একে খুব চ্যালেঞ্জিং করেছে। অন্নপূর্ণার গাত্রের ঢাল খুব বিপদজনক। একইসাথে খুবই তুষারধস প্রবণ।
“এটা ৮০৯১ মিটার। এই পাহাড়ে বাংলাদেশ থেকে কখনো অভিযানই হয়নি। অন্নপূর্ণা-৪ এ বাংলাদেশ থেকে একবার অভিযান হয়েছিল, সেটা আট হাজার মিটারের পর্বত নয়।”
ক্যাম্প-২ থেকে ক্যাম্প-৩ এর দিকের পথ খুবই বিপদজনক এবং সেখানে যখন-তখন তুষার ধসও হয় জানিয়ে বাবর আলী বলেন, “এটা যেন শত্রুপক্ষের এমন এক প্যাসেজের মধ্যে দিয়ে যাওয়া- যেখানে সবসময় গুলি হচ্ছে। আপনি শুধু প্রত্যাশা করবেন, যখন আপনি ক্লাইম্ব করছেন- সে সময়ে যেন তুষার ধস না হয়।”
অন্নপূর্ণা-১ অভিযানের জন্য বছরের খুব অল্প সময় খোলা থাকে জানিয়ে বাবর আলী বলেন, “মোটামুটি দুই দিনে ক্লাইম্ব হয়ে আবার সামিট উনডো ক্লোজ হয়ে যায়। এখানে সাকসেস রেটও খুব কম। এটা লেস ক্লাইম্বড। যাদের অন্য আট হাজার মিটারে আরোহণের অভিজ্ঞতা আছে- তারাই এখানে আসে।”
গত বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লোৎসে আরোহণ করেন বাবর আলী। একই অভিযানে দুটি আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত আরোহণের কৃতিত্ব বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের মধ্যে কেবল বাবর আলীরই আছে।
এর আগে ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমা দাবালাম আরোহণ করেন তিনি।
অন্নপূর্ণা-১ অভিযানের জন্য বাবর আলী বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়ার পর নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশে যাবেন। চারদিনের ট্রেকিং শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। সেখান থেকেই মূল অভিযান শুরু হবে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স' এর সভাপতি ফরহান জামান বলেন, বেস ক্যাম্প থেকে উপরের ক্যাম্পগুলোতে ওঠানামা করে শরীরকে অতি উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবেন বাবর আলী। পুরো অভিযানে প্রায় ৪০ দিন সময় লাগবে।
“আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এপ্রিলের তৃতীয় কিংবা শেষ সপ্তাহে অন্নপূর্ণা-১ চূড়ায় আরোহণ করবেন বাবর আলী।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল নিটওয়ারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল।
এবারের অভিযানের অন্য দুই পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হল- ফ্লাইট এক্সপার্ট ও এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল।