Published : 20 Oct 2023, 09:59 PM
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের পাশ থেকে বাণিজ্যিক শিশু পার্ক অপসারণ করে জায়গাটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ‘অপরাজেয় বাংলা’।
একই দাবিতে বেশ কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা সংগঠনটি শুক্রবার বিকালে পার্কের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
এতে সংহতি জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা পংকজ কুমার দস্তিদার বলেন, “১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় এই সার্কিট হাউজেই। মুক্তিযুদ্ধের পর সার্কিট হাউজের সামনে এ মাঠটিতে মুক্তিযোদ্ধারা এসে জড়ো হয়েছিলেন। এ মাঠেই প্রথম বিজয় মেলার সূচনা হয়।
“এটি ইতিহাসের স্মারক হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে রাখতে হবে।”
সমাবেশে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, “বাংলাদেশ সৃষ্টির তথা স্বাধীনতা অর্জনে চট্টগ্রামের অনন্য অবদান থাকলেও এখানে স্বাধীনতার স্মৃতি চিহ্ন কিংবা স্বাধীনতার ইতিহাস, কৃষ্টি চর্চা কিংবা ভবিষ্যত প্রজন্মের জানার জন্য উল্লেখযোগ্য কোন স্মৃতি চিহ্ন বা স্মৃতি স্তম্ভ নেই।
“এছাড়া আপামর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত মাঠের স্বল্পতা রয়েছে। শিশু পার্কের জায়গাটি উচ্ছেদ করে জায়গাটিতে উন্মুক্ত স্থানসহ মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক এবং মাঠ তৈরি করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার জোর দাবি জানাই।”
মাসুদুল রানার সঞ্চালনায় এবং আব্দুল্লাহ আল তানিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তেব্য দেন ফয়সাল রফিক, মেহেদী হাসান, এমরান ইরান, রেজাউল ইসলাম রিপন, কুতুব উদ্দিন, হানিফ, মোরশেদ, মারুফ, জিএস আমিনুল করিম, মিজানুর রহমান মিজান, মোস্তাফা করিম কাউসার, সুমিত বডুয়া, আরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মাসুদ, মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ শাকিল, সাফায়েত ফাহিম, যুবরাজ দাশ, মুহাম্মদ জালাল, আবু হানিফ সৌরভ, সালেক আহমেদ।
এর আগে ২০২১ সালের ৯ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রামের মেয়রকে চিঠি দিয়ে ‘চিটাগাং শিশু পার্ক’ নামের পার্কটির ইজারা বাতিলে অনুরোধ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আগ্রহে ১৯৯২ সালে ১৩ জুলাই তিন একর জমিতে শিশুপার্ক স্থাপনে নগর সংস্থাটিকে অনাপত্তি দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরে ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রতিষ্ঠান ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড’কে ২৫ বছরের জন্য জমিটি প্রথমবার ইজারা দিয়েছিল সিসিসি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়।
এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আবার ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্কের জমিটির ইজারা চুক্তি নবায়ন করে নগর সংস্থা। তখন সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।
পার্কটি অপসারণের দাবিতে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল। ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে ছয় মাসের দায়িত্ব পালনকালে সুজনও পার্কটি বিকল্প স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেন। তবে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
১৯৮৮ সাল থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের আউটার মাঠ, জিমনেসিয়াম এবং সেসময়ের পুরাতন সার্কিট হাউজের মাঠ ঘিরে মুক্তিযু্দ্ধের বিজয় মেলা শুরু হলে শিশু পার্কের ওই স্থানটিতে ‘বিজয় মঞ্চ’ স্থাপিত হয়েছিল।