Published : 02 Jun 2025, 10:38 PM
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট দিয়েছে, তাতে ‘গুণগত’ কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে না বিএনপি; সিপিবির চোখে এটি ‘গতানুগতিক’; আর নতুনত্বের ‘কোনো ছোঁয়া’দেখতে পাচ্ছে না বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে।
সোমবার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে।
বিএনপি বলছে, এবারের বাজেটে তারা ‘গুণগত কোনো পরিবর্তন’ দেখতে পাচ্ছে না।
সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আগে যেভাবে বাজেট চলে আসছে, মূলত সেখান থেকে আমরা খুব বেশি…সংখ্যার তারতম্য ছোটখাটো হয়েছে…বাজেটের প্রধান জায়গাগুলোয় আমরা আগের মত রয়ে গেছি।
“এটা আগামী দিনের সরকারের জন্য খুব একটা সহজ কিছু হবে না।”
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য কিনা, এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, “এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়নের মতো একটা ফিগার আছে, তাহলে আপনাকে ওইটা মাথায় রাখতে হবে, রাজস্ব আয়কে মাথায় রাখতে হবে।”
“ওটাকে মাথায় রেখে যদি আমার মন্তব্য দিতে হয়, তাহলে বলব, এই বাজেটের সাইজটা আরও ছোট হওয়া উচিত ছিল।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বলছে, এবারের বাজেট ‘গতানুগতিক’, কোনো ‘চমক’ নেই। এটাকে ‘মন্দার বাজেট’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে দলটি।
সোমবার দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেন, “এ বাজেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। সেই হিসেবে এটি একটি অনির্বাচিত সরকার প্রণীত বাজেট। স্বভাবতই এতে কোনো কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে কিছু পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেরকম কোনো চমক বাজেট দেখাতে পারেনি।
“এবারের বাজেট শুধু গতানুগতিক নয়, চমকহীনও বটে। উপরন্তু এবারের বাজেট হয়েছে সংকোচনমূলক ও মন্দার বাজেট।”
এই বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফএর নির্দেশ অনুযায়ী 'বেল্ট টাইট 'করে ব্যয় কমানোর জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
সিপিবি বলছে, “মোট বাজেটের আয়তন, মোট উন্নয়ন ব্যয়, মোট ঋণ প্রবাহ- এক কথায় উৎপাদনশীল ব্যয় প্রসারের ওপর এই বাজেটে মনোযোগ দেওয়া হয়নি।
“ফলে আগামীতে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশের মত, তা কার্যকর হবে না। বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণই বলে দেয় এই প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে। তার ফলে এ কথা প্রায় নিশ্চিত যে আগামীতে প্রবৃদ্ধি কমবে, বেকারত্ব ও দারিদ্র বাড়বে।”
সিপিবি নেতারা বলছেন, “বাজেটে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও কৃষকের কোনো সুখবর নেই। এই বাজেট তাই গণতান্ত্রিক ও নয়।
“যেসব পদচিহ্ন রেখে যাওয়ার বড় বড় কথা অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, তা তার বাজেটে শেষ পর্যন্ত আর স্থান পায়নি। এখন মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং টাকার মান কিছুটা স্থির করতে সরকার সক্ষম হয়েছে বটে, তবে এই বাজেটে সেটা নিশ্চিত করতে গিয়ে মন্দা বেকারত্ব বিদেশ নির্ভরতার বিপদ ডেকে আনার সমূহ আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।”
প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ বলেছে জামায়াতে ইসলামীও। এতে নতুনত্বের কোনো ছোঁয়া নেই বলেও মনে করে দলটি।
সোমবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মা‘ছুম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বাজেটে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রত্যয় আশানুরূপভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আগের মত এটিও গতানুগতিক বাজেট।
“প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের মোটা দাগে খুব একটা তফাত দেখা যায়নি। এবার বাজেটে ব্যয় না বাড়লে কমেওনি; এতে কোনো নতুনত্বের ছোঁয়াও পরিলক্ষিত হয়নি।”
তিনি বলেন, ‘‘আমি আশা করি, বাজেটকে গণমুখী করতে সরকার আয়কর আরও কমিয়ে এনে জনকল্যাণ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবে। ঘোষিত বাজেট পর্যালোচনা করে আমরা এ সম্পর্কে আমাদের বক্তব্য পরে জাতির সামনে উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।”
বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামী বলছে, “বাজেটে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, সামাজিক সুরক্ষা ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে তা আরও বরাদ্দের দাবি রাখে।”
দলটি বলছে, “মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করার কথা বলা হলেও বাজেটে এ লক্ষ্য অর্জনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি, যা কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি করেছে।”
বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাচারকৃত অর্থ এবং অন্যান্য অবৈধ অর্থ উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার স্পষ্ট পরিকল্পনা বাজেটে দেখা যায়নি, যা জাতিকে হতাশ করবে।
“কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই অপচেষ্টা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”