Published : 14 Jun 2025, 09:42 PM
অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে আইএমএফ ও ট্রাম্প প্রশাসনের ‘প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন’ লেখক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আগের দশকগুলোর বাজেটের সঙ্গে এবারের বাজেটের মিল রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “বাজেটে আইএমএফ ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। ক্ষুদ্র শিল্প যারা সরকারের কাছ থেকে কোনোরকম সহায়তা পায় না, ব্যাংক থেকেও তারা সাহায্য পায় না, আইএমএফের প্রভাবে এ ধরনের স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে।
“শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা বাতিল হয়েছে, গৃহস্থালির বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওপর কর আরোপ হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে নানারকম উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। এটার ওপর নতুন করে শুল্কারোপ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আইটি ফ্রিল্যান্সদের ওপর কর স্থাপন করা হচ্ছে। আইএমএফ বলছে কর জিডিপি রেশিও বাড়াতে হবে। ট্যাক্স-ভ্যাট বাড়িয়ে ছোট ছোট শিল্পের উদ্যোক্তাদের ওপর এ চাপ বাড়ছে।”
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ অধ্যাপক।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ও ট্রাম্পের শুল্কারোপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি আমাদের দেশে কম রপ্তানি করে আর বেশি আমদানি করলে তো সেটার জন্য আমরা দায়ী না। তাদের কাছ থেকে কোনো পণ্য আনার থাকে না বলেই আমরা পণ্য আনি না। তাইলে এটা সমান সমান করতে চাইলে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বাড়াতে হবে।
“এটা না করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে এটা (ট্রাম্পের শুল্কারোপ) দিয়ে দিল। ট্রাম্প যা করেছে, তা বাস্তবসম্মত কোনো বিষয় নয়। তবে ট্রাম্প যা করেছে তারপর বাংলাদেশের দিক থেকে খুব তড়িঘড়ি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে এক ধরনের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে; তা বাজেটে প্রতিফলিতি হয়েছে।”
নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্যে, একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছুটা সংস্কারভিত্তিক এই বাজেটে উন্নয়নের সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা থাকছে।।
তবে আনু মুহম্মাদ বলেছেন, গত দশকগুলোতে জনগণের স্বার্থ ও সম্পদ কেন্দ্রীভবন, প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস, সম্পদ পাচারের মত যে অর্থনৈতিক দর্শনটা ছিল, তারই ধারাবাহিকতা এবারের বাজেটেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া মার্কিন ও কানাডিয়ান কোম্পানি শেভরন ও নাইকোর নানা অনিয়মের পরও তাদের কাছ থেকে ‘কোনো সরকারই ক্ষতিপূরণ আদায় করেনি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাজেটে আয়ের জন্য মানুষের ওপর কীভাবে কর ও ট্যাক্স বাড়ানো যায়, তার নানা কিছু রয়েছে। তবে এই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে যে পরিমাণ পাওনা আদায় করার কথা ছিল, তা কেউ চেষ্টা করে নাই।…বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বাংলাদেশকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানোর নানা ধরনের পরামর্শ দিলেও বিদেশি কোম্পানিগুলোর কারণে দেশে যে একটা ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলছে না।
বিদেশি কোম্পানির হাতে তেল-গ্যাস নষ্ট হয়েছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “…যত সরকার এসেছে, তারা এসব ক্ষতিপূরণ আদায় করতে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব এ ক্ষতিপূরণ আদায় করা।”
সভায় লেখক কল্লোল মোস্তফা, গবেষক মাহা মির্জা উপস্থিত ছিলেন।