Published : 12 Jun 2025, 01:32 AM
উন্নত দেশ আর মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হয়ে উঠতে গেলে সস্তা শ্রম ও আর সস্তা পণ্য থেকে বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
সস্তা শ্রম দিয়ে একটি দেশ আদৌ উন্নত হতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন তিনি তুলেছেন।
এবার বাজেটে শ্রম খাত গুরুত্ব পায়নি মন্তব্য করে সুলতান বলছেন, যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকেন, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি তাদের যে ‘অবজ্ঞা আর উপেক্ষা’, তা আরেকবার দেখা গেল।
তার মতে, শ্রমিকদের ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া বৈষম্যহীন জাতি গঠন সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে একটা স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠনের কথাও বলছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড আউটে’ অতিথি হয়ে এসেছিলেন এ বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালকের পদে আছেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার শ্রমিক অধিকার বিশেষজ্ঞও।
‘ইনসাইড আউটে’ তিনি শ্রমিকদের অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, ঐকমত্য কমিশন ও শ্রম আইনসহ নানা বিষয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন।
বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হয়।
শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে করারোপ ‘গ্রহণযোগ্য নয়’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলেও কর বসিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মনে করেন সুলতান উদ্দিন।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড এবং তার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম একটা প্রতীকী সহায়তা দেওয়ার যে দায়িত্ব, তার সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক। সুতরাং এটি কোনোমতে গ্রহণযোগ্য নয়।”
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তব্যে বলেন, অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে কোনো সুবিধাভোগীকে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।
সৈয়দ সুলতান বলেন, “কোনো কল্যাণ তহবিল, মানে কল্যাণমূলক প্রদেয়, তার ওপর কোনো কর আসতে পারে না। এটা শুধু শ্রমিক নয়, কারো ক্ষেত্রে আসা উচিত না।”
কোম্পানির নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থের ৮০ ভাগ অংশগ্রহণ তহবিল এবং বাকিটা সমান ভাগ করে কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে অংশগ্রহণ তহবিল থেকে শ্রমিক-কর্মচারীরা সরাসরি অর্থ সহায়তা পান।
সংস্কার কমিশন প্রধান বলছেন, “অনেক সময় ‘মাল্টিপল’ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ কোম্পানি যখন মুনাফা করে তখন সে একটা কর দেয়। সে মুনাফার একটা অংশ তো শ্রমিকদের জন্য দেওয়া হয়, এটি মূলত শ্রমিকদের অর্থ।
বাজেটের অগ্রাধিকারে শ্রম খাত ‘উপেক্ষিত’
সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, বাংলাদেশের আট কোটি মানুষ শ্রমজীবী। এসব শ্রমজীবী মানুষ উৎপাদনের একটা বড় অংশ; অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ারও।
বাজেটে শ্রমজীবী মানুষের জন্য কী আছে জানতে চাইলে সুলতান উদ্দিন বলেন, “প্রথমেই যেটা আমাদের সবার চোখে পড়বে, যেসব অগ্রাধিকার খাত তৈরি করা হয়েছে, সম্ভবত ১১টি, সেখানে দেখবেন শ্রম খাত নেই। অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের জন্য কোনো অগ্রাধিকারই বিবেচনা করা হয়নি।
“আমরা খুবই বিস্মিত হয়েছি। কারণ, সরকার যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করেছিল, তার মধ্যে শ্রম সংস্কার কমিশন একটি। সমস্ত উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার যারা একটা বড় অংশ, তারা যদি অগ্রাধিকার খাতের মধ্যেই না পড়ে, তাহলে কারা পড়বে?”
শ্রম আইনকে সর্বজনীন করার প্রস্তাব
“এটা খুব স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে যে শ্রম আইনটা আছে, এটা মানুষ অনেক সময় জানে না। এই শ্রম আইনটা মূলত সুনির্দিষ্ট কিছু শ্রমিককে সুরক্ষা দেয় এবং এটি হচ্ছে শ্রমজগতের সবচেয়ে বড় সংকট।”
এ বিশেষজ্ঞের ভাষ্য, “যে আইনটা আছে সেটা পূর্ণাঙ্গ নয়। সেটাও সম্পূর্ণ সব ধরনের সুরক্ষা দেয় না। কিন্তু যেটুকু দেয়, সেটুকু ১৫ ভাগ শ্রমিকের। এ ১৫ ভাগের মধ্যেও আবার এখন বিভিন্নভাবে পদায়ন, পদবি, পদবিন্যাস, অস্থায়ী নিয়োগ, আউটসোর্সিং নিয়োগের মাধ্যমে প্রচুর মানুষকে বাদ দেওয়া হয়।
“সুতরাং এটি খুব সুনির্দিষ্ট কিছু মানুষ, যারা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কাজ করে বিভিন্ন ব্যক্তি খাতে, তাদের কিছু জিনিসের সুরক্ষা দেয়। যেমন তারা যদি মজুরিটা না পান ঠিকমত, তারা মামলা করতে পারেন।”
যারা শ্রম দিয়ে জীবিকা অর্জন করেন, তাদের ন্যূনতম সুরক্ষা দেওয়ার মত ব্যবস্থা নেই বলে মনে করেন সুলতান উদ্দিন।
তিনি বলেন, “এটা শ্রমিকের মজুরির ক্ষেত্রে নেই; কর্মঘণ্টায় নেই। সে যদি কোনো কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ে, সে দুর্ঘটনায় পড়লে তার চিকিৎসার কোনো সুরক্ষা নেই। আমরা প্রথমেই বলেছি যে, ন্যূনতম যেসব মৌলিক অধিকার- তিনি একটি নিয়োগপত্র পাবেন; তার একটা পরিচয়পত্র থাকবে; তার একটা মজুরি নির্ধারিত থাকবে; কর্মপরিবেশ নির্ধারিত থাকবে; নিরাপদ কাজ থাকবে— এগুলো যেন সুনিশ্চিত করা হয়।“
সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, “এজন্যই আমরা বলেছি যে সবার জন্য ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বৈষম্যহীন যে জাতি আমরা গঠন করতে চাচ্ছি, মর্যাদার বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছি, সেটা তো হচ্ছে না।”
শ্রম প্রশাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা আনার সুপারিশ করেছে শ্রম কমিশন। গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা না থাকলে কোনো কমিশনই কাজ করবে না বলে মনে করেন সুলতান উদ্দিন।
তিনি বলেন, “যখনই সরকার জবাবদিহিতা চায় না, তখনই তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিজেদের লোক হিসেবে তৈরি করে। আমরা বলেছি, একটি ত্রিপক্ষীয় পদ্ধতি থাকতে হবে।
“আর এটা নির্ভর করে কিন্তু আসলে আপনার ব্যবস্থাটা কতখানি গণতান্ত্রিক; কতটা জবাবদিহিমূলক। সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যদি গণতান্ত্রিক না হয়, তাহলে একটা কমিশন বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারে না।”
“এজন্য আমরা বলেছি, একটা সামগ্রিক রূপান্তর দরকার। এই রূপান্তর সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে। নয়ত কোনো কমিশনই কাজ করতে পারবে না।”
সস্তা শ্রমে দেশ বাঁচবে কীভাবে?
অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তখন নতুন মজুরি কাঠামো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়; কিন্তু মজুরি বৃদ্ধির একটি স্থায়ী পদ্ধতি কেন হয় না, সেই প্রশ্ন তোলেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা থাকেন ও ক্ষমতার বাইরেও যারা থাকেন, যারা নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন, তাদের সবাই দুটি বিষয়ে একমত। একটি হল, কম মজুরি আমাদের প্রতিযোগিতার শক্তি। যদি আপনি খুব বেশি মজুরি দেন তাহলে কর্মসংস্থানে ঘাটতি পড়বে, আমরা বিদেশে প্রতিযোগিতা রপ্তানি করতে পারব না। আরেকটি হচ্ছে যে কোনোভাবে একটা কাজ থাকলেই মানুষ খুশি।”
এ মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন সুলতান উদ্দিন।
“এটা ভাঙতে না পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কোনোভাবেই একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশে পরিণত করা যাবে না। আমরা ধরেই নিচ্ছি, যে একটি কারখানা যখন করব, এখানে মজুরি কম হলে আমার লাভ হবে। আমরা যখন বিনিয়োগ আকর্ষণ করি, তখনও বলবে যে আমাদের এখানে সস্তা শ্রম। এভাবে একটা দেশ কীভাবে বাঁচবে? সস্তা শ্রমের দেশ কি উন্নত দেশ হতে পারে নাকি? এটা লজ্জাকর। এই দুটোকে ভাঙতে হবে।”
এসব ভাঙার জন্য একটা স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে সংস্কার কমিশন। সেই কমিশনে মজুরি নির্ধারণের মানদণ্ড হবে ‘লিভিং ওয়েজ’।
“আমরা বলছি না যে একদম ইউরোপ আমেরিকার মত কিছু একটা হবে। শ্রমিকের মজুরি তার এবং তার পরিবারের উন্নয়নের একটা অংশ; শিল্পের উন্নয়নের অংশ; এটা আমাদের চিন্তায় আনতে হবে। সস্তা শ্রম ও সস্তা পণ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; এগুলো দিয়ে দেশ বাঁচবে না,” বলেন কমিশনের প্রধান।
জরুরি তহবিল দরকার
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে অন্তর্বর্তী সরকার যে পাঁচটি কমিশন করে, শ্রম বিষয়ক সংস্কার কমিশন সেগুলোর একটি। গত ২১ এপ্রিল তারা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে নিজেদের প্রতিবেদন তুলে দেয়।
প্রতিবেদনে শ্রমিকদের সুরক্ষায় একটি জরুরি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এ তহবিলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের দুই মাসের মজুরির সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখবে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
এ বিষয়ে কমিশন প্রধান বলেন, “আমরা বলছি শুরু করতে হবে রপ্তানি খাত দিয়ে। কারণ, রপ্তানি খাতটা বিভিন্ন কারণে বিঘ্নিত হতে পারে।
“এ টাকাটা মালিকেরই থাকবে। কিন্তু সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকার এবং মালিক যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। মালিকও ইচ্ছা করলে এখান থেকে তুলে টাকা দিতে পারবে সরকারের অনুমতি নিয়ে। কোনো কারণে মালিক যদি অনুপস্থিত হয়ে যায়, তাহলে সরকার দেবে।”
তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী যে শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, এখনও একটি টেকসই শিল্পে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বিভিন্ন সময় জাতীয়-আন্তর্জাতিক ব্যবসার মারপ্যাঁচে, রাজনীতির মারপ্যাঁচে অস্থিতিশীল হয়ে যায়।”
পোশাক শিল্পের পর সবচেয়ে বেশি নারী নিয়োজিত রয়েছে গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের জন্য আলাদা করে প্রস্তাব করেছে কমিশন।
কমিশন প্রধান বলেন, “যারা একটু বঞ্চিত, যারা অধিকার হারিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্যই আমরা আলাদাভাবে প্রস্তাব করেছি।”
দেশে শ্রমিকের সংখ্যা আট কোটির মত। এর মধ্যে পোশাক খাতে কাজ করেন প্রায় ৩৩ লাখ শ্রমিক। এর বাইরে যারা নানা খাতে আছেন, তাদের প্রত্যেককেই আইনের সুরক্ষায় আনতে হবে বলে মনে করেন এ শ্রম বিষেজ্ঞ।
তিনি বলেন, “প্রত্যেকের জন্য একটা সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল থাকতে হবে। ৭০ বছরের মানুষ রিকশা চালাবে আর আমরা বলব একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ছি—এই বয়ান থেকে সরে আসতে হবে। আপনার আট বছরের একটা বাচ্চা ফুল বিক্রি করবে, আর সেই ফুল কিনে নিয়ে প্রিয় মানুষটাকে দেব—এমন বৈপরীত্য নিয়ে একটা দেশ চলতে পারে না।”
দেশের তৈরি পোশাক খাতের শিল্প হয়ে ওঠার বিষয়েও নিজের ভাবনা তুলে ধরেন সুলতান।
তার মতে, “এ শিল্পটা তো রাষ্ট্র গড়ে তোলেনি, গড়ে উঠেছে। ছোট ছোট করে গড়ে উঠেছে। যখন গড়ে উঠেছে, রাষ্ট্র তখন কিছু প্রণোদনা দিয়ে, কিছু সহযোগিতা দিয়ে, কিছু ছাড় দিয়ে, শ্রমিকদেরকে বঞ্চিত করে একটা সুনাম নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এটা গড়ে তুলেছে উদ্যোক্তা আর শ্রমিকরা। দেশের মানুষ ছাড় দিয়েছে বিভিন্নভাবে শিল্পকে।”
ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত শিথিল করার পক্ষে কেন
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, “দুই-তিনটা বয়ান বাংলাদেশের শ্রম ক্ষেত্রে প্রচলিত। একটি হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিলেই শ্রমিক তার ন্যায্য হিস্যা চাইবে। তাতে করে ওই মজুরিটা বাড়াতে হবে, অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হবে।
“ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারটা নিয়ে কাজ করে না। আর যেহেতু ৮৫ ভাগ শ্রমিকের কোনো আইনি সুরক্ষা নেই; সুতরাং তারা তো আইনের কারণেই সংগঠন করতে পারে না।।”
তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার না দেওয়া হবে এবং তারা নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার না পাবে, ততদিন পর্যন্ত সমস্যার মৌলিক সমাধান হবে না।
“মৌলিক সমস্যার তখনই সমাধান হবে, যখন যার সমস্যা, তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকবে, তার সোচ্চার হওয়ার সুযোগ থাকবে এবং তার সঙ্গে আপনি বসতে বাধ্য হবেন।”
দেশের শ্রমিকদের নিয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার গঠনের কথা বলছেন সংস্কার কমিশন প্রধান।
তিনি বলেন, “প্রথমত হচ্ছে পরিচয় শনাক্ত করা। দ্বিতীয়ত তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নিশ্চিত করা। তথ্যভাণ্ডার না হলে তা করতে পারবেন না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জিনিসটাকে সাজাতে হবে।”
শ্রম আইনের ‘খণ্ডিত’ সংশোধন
শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়টি ঝুলে আছে অনেক দিন। এর পেছনে দেশ-বিদেশের ‘চাপ’ প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন এ শ্রম বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, “বিদেশিদের চাপ অথবা এখানকার কিছু দাবি- এই দুটো মিলিয়ে একটা পিচমিল (খণ্ড খণ্ড) পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। যদি একবার বসে একটা পূর্ণাঙ্গ সংশোধন করত দেশের বাস্তবতা বিবেচনা রেখে, তাহলে আর এটা হত না।
তার মতে, “শ্রম অধিকার যেহেতু আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অংশ, এটাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার একটা চাপ থাকে সবসময় আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর। এটা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত।
“এটার জন্যই সংশোধন হচ্ছে; আগেও অনেকবার হয়েছে। যতবারই হয়, ততবারই এটা হয় আসলে খণ্ডিতভাবে। ফলে কোনো পূর্ণাঙ্গ রূপ আমরা দেখি না এবং শেষও হয়নি প্রক্রিয়াটা।”
পোশাক শিল্পে প্রণোদনাসহ সরকার বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব সুবিধা মালিকরাই বেশি পাচ্ছেন। শ্রমিকরা খুব একটা পাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, “শ্রমিকদের স্বার্থকে আমরা শিল্পের বাইরের স্বার্থ মনে করছি না। একটা শিল্পের দুই পক্ষের মধ্যে যত বেশি জানাশোনা, যত বেশি দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা থাকে, তত বেশি কাছাকাছি আসা যায়।”
ঐকমত্য কমিশনের কাছে কী চাওয়া
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ কমিশনের লক্ষ্য।
এ কমিশনের বিষয়ে সৈয়দ সুলতান বলেন, “আমি যেভাবে বুঝি, সেটা হল রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়েই তারা কাজ করছে। এখানে আমাদের অন্তর্ভুক্ত করলে ভালো হত। কিন্তু খুব বেশি মনে করি না যে, আমাদের সঙ্গে উনাদের খুব বেশি সম্পৃক্ততার দরকার আছে।
“কিছু কিছু সাংবিধানিক সংশোধনীর ব্যাপার আছে ( শ্রম সংস্কার কমিশন, নারী সংস্কার কমিশন), সেগুলো অবশ্যই তারা বিবেচনায় রাখবে আমরা মনে করি।”
রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্ত হয়ে শ্রম কমিশনের সুপারিশকে ‘বিতর্কের অংশ করতে’ চান না সংস্কার কমিশন প্রধান।
“কারণ আমরা মনে করি, যে দলই ক্ষমতায় যাক, তাদের জন্য এটিকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”
তবে বাস্তবায়নের জন্য যে চাপ রাখতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো সরকার নিজে থেকেই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে, এটা আশা করা ঠিক না। এটা তখনই হবে, যখন ব্যাপক জনগোষ্ঠী সক্রিয় থাকবে, সোচ্চার থাকবে।