Published : 02 Jun 2025, 04:32 PM
করপোরেট করহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের মতেই রেখে পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে করহারে বদল আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করপোরেট করহারে কিছুটা বদল আনার প্রস্তাব করেন।
অন্য কোম্পানিগুলোর করহারের বিষয়ে কিছু বলেননি। এর অর্থ অন্য করপোরেট করহার আগের মতই থাকবে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার উৎসাহ দিতে এ বিধান করা হয়েছে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “দেশি-বিদেশি লাভজনক ও নামীদামি কোম্পানিসমূহকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।”
প্রস্তাব অনুযায়ী, সকল প্রকার আয় এবং নির্দিষ্ট অংকের ব্যয় ও বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্তে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার চলতি অর্থবছরের মতোই আগামী অর্থবছরেও থাকছে; অর্থ্যাৎ চলতি অর্থবছরে যে আয় হয়েছে তার ওপর করহার একই থাকবে।
তবে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনে আড়াই শতাংশ ছাড়ের শর্ত তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অনেক কোম্পানি যে আড়াই শতাংশ ছাড় পেত সেগুলো এখন সে সুবিধা পাবে না।
অপরদিকে আসছে অর্থবছর থেকে যে আয় হবে তার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা হয়েছে।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, শুধু সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারলে আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপর তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হবে ২০ শতাংশ; এ শর্ত পরিপালন করতে না পারলে কর দিতে হবে সাড়ে ২২ শতাংশ।
বর্তমানে সব ধরনের আয় এবং নির্দিষ্ট অংকের ব্যয় ও বিনিয়োগের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারলে এমন কোম্পানি ২০ শতাংশ করপোরেট দিতে পারে; অন্যথায় তাদের জন্য করহার হয় সাড়ে ২২ শতাংশ।
তবে এ কঠিন শর্ত পরিপালন কোনো কোম্পানি করতে না পারায় বারবারই এটি সহজ করার প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের তরফে ছিল, আসছে বাজেটে এসে এটি আমলে নিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তবে পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত পালনের বিষয় নেই, তাদের জন্য করহার নির্ধারণ করা হয়েছে সরাসরি সাড়ে ২৭ শতাংশ।
বর্তমানে পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এইসব কোম্পানির ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ২৫ শতাংশ কর দেওয়ার সুযোগ ছিল।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রেও শর্ত ছিল একই; আয়কর আইন অনুযায়ী, সকল প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সকল প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক ট্রান্সফার এর মাধ্যমে সম্পাদন করলে আড়াই শতাংশ করহার ছাড় পেত তারা।
এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বাড়ানোকে উৎসাহিত করতে সিকিউরিটিজ লেনদেনের মোট মূল্যের ওপর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নিকট হতে উৎসে কর সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
করপোরেট করহারে বড় পরিবর্তন এসেছে পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা মার্চেন্ট ব্যাংকের করহারে। বর্তমানে থাকা সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাকি সকল ক্ষেত্রে বর্তমানের মতই অপরিবর্তিত থাকছে।
বর্তমান ও প্রস্তাবিত করহার
বর্তমানে কোম্পানি করদাতার জন্য খাতভিত্তিক অনেকগুলো করহার কার্যকর রয়েছে। আয়কর আইনে সংজ্ঞায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। শর্ত পালন করলে ২৫ শতাংশ।
আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপর কোনো শর্ত ছাড়াই করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ।
পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং শর্ত পালন পালন করতে পারলে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়।
নতুন অর্থবছরের আয়ের ওপর শর্ত শিথিল করে একই বিধান থাকছে।
মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রেও কোম্পানি করহার রয়েছে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপর এটি দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
একদমই অপরিবর্তিত থাকবে যেসব খাতে
মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া পাবলিক ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানি করহার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ রাখা হয়েছিল চলতি অর্থবছরের বাজেটে; আসছে অর্থবছরের আয়ের ওপরও এটি অপরিবর্তিত থাকবে।
পাবলিক ট্রেডেড নয় এমন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানি কর দিতে হয় ৪০ শতাংশ হারে।
এছাড়াও সমবায় সমিতির জন্য ২০ শতাংশে করহার রয়েছে; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে কোম্পানি করহার ১৫ শতাংশ রয়েছে।
সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির কর ৪৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে ২ দশমিক ৫ শতাংশ সারচার্জ রয়েছে।
পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিওতে থাকলে করহার রয়েছে ৪০ শতাংশ হবে। তবে এক্ষেত্রে ওই কোম্পানির আইপিও-পূর্ববর্তী প্লেসমেন্টের পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির জন্য ৪৫ শতাংশ কর হার নির্ধারণ রয়েছে।
বিভিন্ন খাতে করপোরেট করহার আরও বাড়ানোর চিন্তা থাকলেও পরে পিছিয়ে আসতে শোনা যায়; একই কর হার থাকার পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরেছিল দেশের বেশিরভাগ বণিক সংগঠন।