Published : 14 Aug 2024, 04:18 PM
চড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির লাগাম সহসাই টেনে ধরা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তবে সরকার পরিবর্তনের পর ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতি কমার ছাপ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ গেল জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে হয়েছে, জুনে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ জারির দেশের অর্থনীতি কারণে সারাদেশ ‘স্থবির’ হয়ে পড়লে খাদ্যপণ্য ও কাঁচামালের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধের পাশাপাশি মালমাল নষ্টের প্রভাব পড়ে বাজারে। এর ধাক্কায় বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রী গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন দুই মাস আগে তার বাজেট বক্তৃতায়। তবে তার আশা ও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের দিকে এগোনোর যাত্রা হোঁচট খায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে।
জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে থমকে যায় দেশ ও অর্থনীতির চাকা।
ফলে অর্থবছরের প্রথম মাসেই তাই খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা এক মাস আগেও ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বুধবারের বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, সুশাসন ডলার সংকটসহ অর্থনীতির সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায়ও মূলস্ফীতির বিষয়টি তোলা হলে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘোড়ার লাগামের মত টান মেরে মূল্যস্ফীতি থামানো যাবেনা। তবে এটা ধীরে ধীরে কমানো সম্ভব। ইতোমধ্যেই বাজারে মূল্য স্থিতি কমে যাওয়ার একটা ছাপ পড়েছে। যেমন সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
“মূল্যস্ফীতি শুধু দ্রব্যমূল্যের ব্যাপার নয়, সেখানে আন্তর্জাতিক ইমেজের একটা ব্যাপার রয়েছে। তারা একটা দেশে বিনিয়োগ করতে গেলে সে দেশের মূল্যস্ফীতির হারটাও দেখতে চায়। এ কারণে বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে।”
লাগামহীন মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ ছাড়াল
কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সরকার কাজ করবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। এই দুটি জায়গা ঠিক রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।”
কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনের দক্ষতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সচিবদের বলে দিয়েছি আপনারা কিন্তু ফ্রিলি কথা বলবেন। আগের মত ভয় পেয়ে, তোয়াজ করে কথা বলার দরকার নেই।
“অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে। সমন্বয়হীনতায় যাতে অর্থের অপচয় বেড়ে না যায়। অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে, সেটা দেশীয় অর্থ হোক আর বিদেশি অর্থ হোক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে।”
সদ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়া আহসান এইচ মনসুর বলেন, “উৎপাদন বাড়িয়ে সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক করতে পারলে, চাঁদাবাজিমুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি একটা সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে পারব। তৃতীয়ত, চাহিদার দিক থেকে ইন্টারভেনশন করার একটা দিক রয়েছে।
“রিজার্ভের সংকট আছে। সংকট ওভারনাইট যাবে না। আমি এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে যাইনি। বাজারে কতখানি সাপ্লাই দেওয়া যায় সেটা দেখব। সাপ্লাই কমিয়েও দেওয়া যাবে না। খুবই সংকীর্ণ পথ, সাবধানে হাঁটতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”
ব্যাংক খাত প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “ব্যাংকিং খাতে সংস্কার তো করতেই হবে। সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হবে।”
আগের সরকারের মেয়াদে ব্যাংক একীভূতকরণ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, “ওটা ছিল একটা প্রিম্যাচিউরড অ্যাকশন। মার্জার হচ্ছে একটা অপশন, এরকম আরো অনেক সুযোগ রয়েছে। কোথাও মালিকানা বদল করতে হয়, কোথাও রিফাইন্যান্সিং করতে হয়। এখন কোথায় কোন সূত্র অ্যাপ্লাই করা যায়, সেটা আরো বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।”